বিজ্ঞানীর নামটি তেমন পরিচিত নয় এখন। ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে শুধু। মানব
ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি কোন মৌলকে পৃথক করেছিলেন। তার নাম হেনিং ব্রেন্ড
(Hennig Brand)। সপ্তদশ শতকে জন্মেছিলেন জামার্নীতে। হামবুর্গ শহরে। ব্রেন্ড
ছিলেন আলকেমিস্ট। আধুনিক রসায়ন চর্চা তখন শুরু হয়নি। আলকেমিস্টরা পরশ পাথরের সন্ধানে বিভোর সে সময়। সীসা(Lead) থেকে সোনার রূপান্তর ছিল তাদের আমৃত্যু আকাঙ্ক্ষা। ব্রেন্ড নিজেও সেই স্বপ্নে বিভোর।
.
১৬৬৯ সাল।
ব্রেন্ডের দরকার খ্যাতি ও অর্থ। রসায়নবিদ হিসেবে সোনা তৈরিই তার কাছে সহজ মনে হলো। তিনি দৃঢ় মনোবলে কাজ শুরু করলেন। তবে তার লক্ষ্য বস্তু সীসা নয়, মানুষের মূত্র (Urine)! Truly, Urine!
তিনি মূত্র থেকে সোনা পৃথক করবেন। লিটার কী লিটার মূত্র সংগ্রহ করলেন ব্রেন্ড। রেটোর্টে পাতন (Distillation) শুরু করলেন ক্লান্তিহীনভাবে। অবিরাম উত্তপ্ত করে চলেছেন উৎকট গন্ধযুক্ত তরল! সে পরিবেশে ব্রেন্ড কেমন ছিলেন, আমাদের জানা নেই। প্রায় চারশত বছর আগের এত বিস্ময়কর একটি ঘটনার বিস্তৃত বর্ণনা কোথাও নেই। রাজা-বাদশার যুদ্ধ-যাত্রা হলে লিখা থাকতো। সেগুলো রূপকথায় ভরা।
.
ব্রেন্ড একসময় লক্ষ্য করলেন, তার রেটর্টের (Retort) নল দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। সে
ধোঁয়া কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়ার মতো নয়। বরং বাতাসের সংস্পর্শে জ্বলে উঠে। তৈরি করে দারুণ দীপ্তি! ব্রেন্ড বুঝতে পারেন নি, কী আবিষ্কার করতে চলেছেন। এতটুকু বুঝতে পেরেছিলেন যে সোনা পাওয়া যাবে না। দীর্ঘ সাধনার পর তিনি সংগ্রহ করলেন, রূপালী রঙের এক বস্তু—নমনীয় খুব। বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে দেখলেন। বস্তুটির ধর্ম বুঝতে চাইলেন। কী নামে ডাকবেন তিনি? নাম দিলেন, Icy noctiluca—Cold night light; কারণ সেটি জ্বলে উঠে, খুব উজ্জ্বল আলো দেয় কিন্তু তাপ উৎপন্ন করে না।
.
ব্রেন্ড আসলে আবিষ্কার করেছিলেন ফসফরাস। এবং তা করেছিলেন মূত্র থেকেই। মানুষ কর্তৃক আবিষ্কৃত প্রথম কোন মৌল। অল্পসময় পরই, তার সৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে ইতিহাসের অন্য এক বিজ্ঞানী তৈরি করলেন আগুন! রবার্ট বয়েল, ইংলিশ ব্রিলিয়ান্ট কেমিস্ট—ফসফরাস ও সালফার দিয়ে তৈরি করলেন দিয়াশলাই।
.
ইতিহাস নির্মম! ফিরে আসে ঘুরে ঘুরে, ভিন্ন রূপে। ব্রেন্ডের শহর হামবুর্গে ফসফরাস ফিরে এসেছিল আবার। ধ্বংসাত্মক রূপে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হামবুর্গ শহর ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল সহস্র টন ‘ফসফরাস-বোমা’ ফেলে—যে শহরে বসে একজন মানুষ, একদা আবিষ্কার করেছিলেন ফসফরাস।