ইছামতির চরে ষ্ট্রবেরি চাষে নতুন দিগন্ত :মৌসুমের অনেক আগেই পাকা ষ্ট্রবেরি বিক্রি করে উৎফুল্ল ফারুক। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না হলে এবার ভাল ফসল তুলতে পারবে বলে জানালেন তিনি। উত্তর ঘাটচেক ইছামতির চরে স্ট্রবেরি বাগানে গিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়।
তিনি জানান, আগে তিনি ট্রাক্টর চালাতেন। টিভিতে কৃষিবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে স্ট্রবেরি চাষাবাদের উপর প্রামাণ্য অনুষ্ঠান দেখে তিনি চাষে উদ্বুদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি ড্রাইভিং পেশা বাদ দিয়ে চাষাবাদে মনোযোগ দিয়েছেন।
চাষী ফারুক স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে গত ৪ বছর আগে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ২০০ স্ট্রবেরি চারা কিনে অল্প জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম মৌসুমে লাভের মুখ না দেখলেও ৬ মাস পর ৪০ শতক জমি বর্গা নিয়ে ২০০ চারা থেকে ২০০০ চারা রোপন করে ফলন বাড়ান।
এ বছরও একইভাবে জমি পরিবর্তন করে বাড়ির পাশে ২০ শতক জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে ৩০০০ চারা রোপন করেন। সাধারণত জুন-জুলাইতে ফল পাকে। এবার অগাম ফল পাকতে শুরু করেছে। কয়েকদিনে প্রতি কেজি ৮শ টাকা দরে তিনি ৮ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছেন। আগাম ফল তুলতে পেরে বেশ ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
দুইদিন পর পর গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করলে ২০০০ গাছ থেকে ৩০০০ ফল তুলতে পারবেন। যার পরিমাণ প্রায় ২’শ কেজি। এর বাজারমূল্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ স্ট্রবেরি চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার চুক্তি হয় ক্রেতাদের সঙ্গে। আগাম ফলন পাওয়ায় দামও পাচ্ছেন দ্বিগুনেরও বেশি। ক্রেতারা কেজি প্রতি পাইকারী ১ হাজার টাকা দরে চট্টগ্রাম শহরের নামিদামি শোরুমে সরবরাহ করবেন। ষ্ট্রবেরি ফল উৎপাদনে সার, কীটনাশক, সেচ ও মজুরীসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় তার ।
ফারুক বলেন, পড়াশোনা বেশি করতে পারিনি, গাড়ি চালিয়ে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন স্ট্রবেরি চাষ করে পরিবারে আরো বেশি স্বচ্ছলতা আসবে আশা করি। আগামী বছর জমির পরিমান বাড়িয়ে চাষ আরো বাড়াবেন বলেও জানান। সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণ পাওয়া গেলে ষ্ট্রবেরি চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রফতানি করা যাবে। তার বাগান থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও কিনে নেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, প্রথমে তিনি যখন স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন তখন এলাকার সবাই তাকে উপহাস করেছিল। লোকসান গুনে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে অনেকেই নিরুৎসাহিত করেছিল। বর্তমানে স্ট্রবেরি চাষে ফারুকের অভাবনীয় সাফল্য দেখে রাঙ্গুনিয়ার অনেকেই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, বড় পরিসরে রাঙ্গুনিয়ার এটি একমাত্র স্ট্রবেরি বাগান। বেকারত্ব দূরীকরনে ফারুকের দেখাদেখিতে অন্যরাও ষ্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হবে বলে তিনি মনে করেন।
- See more at:
http://www.jugantor.com/online/economics/2016/01/21