বারুদে ঠাসা সেরা দশ ক্লাসিকো

Author Topic: বারুদে ঠাসা সেরা দশ ক্লাসিকো  (Read 806 times)

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
শত বছরেরও বেশি দীর্ঘ এই দ্বৈরথের ইতিহাস থেকে গুটিকয়েক ম্যাচ বেছে আনার কঠিন কাজটাই করেছে ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মেইল। তেমন দশটি ‘একটু আলাদা’ ম্যাচ -

জুন ১৩, ১৯৪৩: রিয়াল মাদ্রিদ ১১-১ বার্সেলোনা
কোপা দেল জেনেরালিসিমো (জেনারেলস কাপ) সেমিফাইনাল। প্রথম লেগে ন্যু ক্যাম্পে ৩-০ গোলে জিতেছিল বার্সা। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে মাদ্রিদে গিয়ে কাতালানরা বিধ্বস্ত হয়েছিল ১১-১ গোলে! এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয় এটি।
ম্যাচটিতে সেদিন কী হয়েছিল এ নিয়ে অনেক ভিন্ন মত আছে। কেউ বলেন, গ্যালারি থেকে ছুটে আসা ধাতব মুদ্রা থেকে বাঁচতে বার্সা গোলরক্ষক লুইস মিরো পোস্ট থেকে অনেক দূরে মাঠের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবার কারও মতে, ম্যাচের আগে অতিথিদের ড্রেসিং রুমে এক ‘অতিথি’র আগমন ঘটেছিল, যে কিনা স্বৈরাচারি জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর পক্ষ থেকে বার্সার জন্য বিশেষ বার্তা নিয়ে এসেছিল। বার্তাটা ছিল অনেকটা এমন - ‘ম্যাচ হেরে যাও, নতুবা প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারবে না।’ওই ম্যাচটিই মূলত রিয়াল-বার্সার দ্বৈরথের সূচনা। এদিক থেকে অবশ্য একটা ‘ধন্যবাদ’ই প্রাপ্য ফ্রাঙ্কোর। তাঁর হুমকি না হলে যে এই দ্বৈরথ আজকের ‘ক্লাসিকো’ হয়ে ওঠে না।

অক্টোবর ২৫, ১৯৫৩: রিয়াল মাদ্রিদ ৫-০ বার্সেলোনা
আলফ্রেডো ডি স্টেফানো রিয়ালের ইতিহাসের সেরাদের একজন। তবে তিনি বার্সেলোনারও হতে পারতেন। কাতালান ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে হঠাৎ মত বদলে গেলেন রিয়ালে। তাঁর এই দলবদলে কোনো অনৈতিক কিছু ছিল কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে যেটি ‘স্বতঃসিদ্ধ’ তা হলো, তাঁর দলবদলের এই ধোঁয়াশা দুই ক্লাবের তিক্ততা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। রিয়ালে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই বার্সা সমর্থকদের তিক্ততা আরও বাড়িয়ে দিলেন ডি স্টেফানো। ওই মৌসুমে রিয়ালকে লিগ জিতিয়েছিলেন, তার চেয়েও বড় ব্যাপার, নিজে ৪ গোল করে বার্সাকে বিধ্বস্ত করলেন ৫-০ তে।

ফেব্রুয়ারি ১৭, ১৯৭৪ : রিয়াল মাদ্রিদ ০-৫ বার্সেলোনা
ঠিক ২১ বছর আগের ঘটনাটির মতোই। শুধু কেন্দ্রীয় চরিত্র আর ম্যাচের ভাগ্যটা বদলে গেল। ডি স্টেফানোর মতো ইয়োহান ক্রুইফকে ঘিরেও দুই দলের মধ্যে চলেছে দলবদল লড়াই, তবে এবার তাতে জয়ী বার্সেলোনা। কী কাকতাল! এল ক্লাসিকোর ভাগ্যটা ঠিক উল্টো ঘুরে গেল! এমনিতেই ‘ফ্রাঙ্কোর নামের সঙ্গে জড়িত ক্লাবে যোগ দেব না' ঘোষণা দিয়ে বার্সা সমর্থকদের মন জিতে নিয়েছিলেন। ভালো লাগাটা আরও বেড়ে গেল মাদ্রিদে দুই দলের প্রথম ম্যাচের পর। এক গোল করে ও আরও তিনটি করিয়ে রিয়ালের মাঠে গিয়ে বার্সাকে জিতিয়ে আনলেন ৫-০ তে।

জানুয়ারি ৮, ১৯৯৪: বার্সেলোনা ৫-০ রিয়াল মাদ্রিদ
খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাবে দিন বদলের যে গান শুরু করেছিলেন, সেটি পূর্ণ করতেই যেন আবার কোচ হয়ে বার্সায় ফেরত এলেন ক্রুইফ। তাঁর অধীনেই ’৯০ দশকের শুরুর বার্সা হয়ে উঠেছিল ‘ড্রিম টিম’। গার্দিওলা-স্টইচকভ-রোমারিওদের পায়ে যেন ফুল ফুটেছে সবুজ মাঠে।
ওই ফুলই সবচেয়ে বেশি সুবাস ছড়িয়েছে জানুয়ারিতে ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচে। গতি, স্কিল, শক্তির দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে রিয়ালকে স্রেফ ধ্বসিয়ে দিল ক্রুইফের দল। হ্যাটট্রিক করে সে ম্যাচের নায়ক রোমারিও।

নভেম্বর ২৩, ২০০২: বার্সেলোনা ০ - ০ রিয়াল মাদ্রিদ
ম্যাচের ফল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ফুটবলীয় কৌশল বা দক্ষতার কারণে এই ম্যাচ আলোচিত হবার নয়। স্টেফানো-ক্রুইফদের মতো এই ম্যাচকেও বিখ্যাত করে রেখেছেন একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড় - লুইস ফিগো। এই পর্তুগিজ যে পুয়েন্তে অ্যারেও (মাদ্রিদ-বার্সেলোনার সংযোগ সড়ক) ধরে বার্সা ছেড়ে চলে গেছেন রিয়ালে। বার্সা সমর্থকেরাও তাঁদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দিলেন ন্যু ক্যাম্পের ক্লাসিকোতে। ম্যাচে যতবারই ফিগো কর্নার নিতে এলেন, ততবারই গালিগালাজের সঙ্গে হাতের কাছে থাকা ছোট বস্তুগুলো বৃষ্টির মতো ধেয়ে আসতে লাগল। খেলোয়াড়েরা যখন মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন, তখন দেখা এই ‘ছোট’ বস্তুগুলোর একটি ছিল আস্ত শুকরের মাথা!

নভেম্বর ১৯, ২০০৫: রিয়াল মাদ্রিদ ০-৩ বার্সেলোনা
এত এত ঘৃণার মাঝেও যে সুন্দরের পুজায় দুদলই এক হতে পারে, সেটি দেখা গেল এই ম্যাচে। একজন ঝাঁকড়া চুলো সদাহাস্য ব্রাজিলিয়ান তাঁদের বাধ্য করেছিলেন এক হতে। ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে তখন রোনালদিনহো। রিয়ালের মাঠেও তার ছাপ রেখেছিলেন তিনি। বল পায়ে নিজে নেচেছেন, স্বাগতিক দলের রক্ষণকেও নাচিয়েছেন। দুর্দান্ত দুটি গোলের পর যখন বার্সার জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ছেন, পুরো বার্নাব্যু গ্যালারির উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।

মার্চ ১০, ২০০৭: বার্সেলোনা ৩-৩ রিয়াল মাদ্রিদ
রোনালদিনহোর পর বার্সার ব্যাটন যে তাঁর হাতেই উঠবে, সেটির আভাস দিচ্ছিলেন মৌসুম জুড়ে। ন্যু ক্যাম্পে রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচে সেটিকেই ঘটা করে জানান দিলেন লিওনেল মেসি। ১৯ বছর বয়সের এক তরুণ, তখনো ঠিক ‘প্রমাণিত’ নন, বার্সায়ও রোনির পাশে ছিলেন পার্শ্বনায়ক হয়ে। ওই ম্যাচেই প্রথম ঘোষনা দিলেন, ‘রাজত্ব করতেই আসছি।’ তিনবার পিছিয়ে পড়া দশজনের বার্সাকে ফিরিয়ে এনেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করে। তারকা হয়ে উঠছিলেন, তবে এ ম্যাচ দিয়েই বিশ্ব চেনে মেসি নামের খুদে আর্জেন্টাইনকে।

নভেম্বর ২৯,২০১০: বার্সেলোনা ৫-০ রিয়াল মাদ্রিদ
হোসে মরিনহোর অধীনে রিয়ালের প্রথম এল ক্লাসিকো। মরিনহোর দিনটিকে ‘স্মরণীয়’ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন বার্সা খেলোয়াড়েরা। গুনে গুনে পাঁচ গোল দিলেন। মরিনহোর এল ক্লাসিকো অভিষেক-লজ্জার ষোলো কলা পূর্ণ হয় খেলার শেষ দিকে সার্জিও রামোসের লাল কার্ডের মধ্য দিয়ে।

আগস্ট ১৭,২০১১: বার্সেলোনা ৩-২ রিয়াল মাদ্রিদ
খেলায় যা হয়েছিল তাতেই এটি মনে গেঁথে থাকার কথা। কিন্তু রিয়াল কোচ মরিনহো ‘নিশ্চিত’ করেছিলেন দিনটিকে ইতিহাসে স্থায়ী করে রাখা। সেস্ক ফাব্রিগাসকে ফাউল করে লাল কার্ড পেয়েছিলেন মার্সেলো। এতে রেফারির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে দুই দল। একপর্যায়ে বার্সার সহকারী কোচ টিটো ভিলানোভার চোখে খোঁচা দিয়ে বসেন মরিনহো। আর বেঞ্চে থাকা দুই খেলোয়াড় মেসুত ওজিল ও ডেভিড ভিয়া লাল কার্ড দেখে ‘পরিপূর্ণ’ করে রাখেন দিনটিকে।

এপ্রিল ১৬,২০১৪: বার্সেলোনা ১-২ রিয়াল মাদ্রিদ
২০১৪ সালের কোপা দেল রে ফাইনাল। এর আগে কিছুদিনের ‘এল ক্লাসিকো’ মানে ছিল রোনালদো-মেসির লড়াই। কিন্তু বেল-নেইমারের আবির্ভাব সেই লড়াইয়ে মোড় ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা ​দিচ্ছিল। অনেকটা হলোও তা-ই। সেদিন খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে গ্যারেথ বেল প্রমাণ করেছিলেন কেন দলবদলের রেকর্ড ভেঙে তাঁকে দলে টেনেছে রিয়াল। মার্ক বার্ত্রাকে রীতিমতো ঘোল খাইয়ে করা তাঁর গোলটি কেবল রিয়ালকে একটি শিরোপাই এনে দেয়নি বরং নিকট ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে তার একটা ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছিল।
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University