একটি গাছের শেকড় যেমনটি তার পত্র পল্লবে ছড়িয়ে দেয় প্রাণ, শক্তি ও সৌন্দর্য; ঠিক তেমনি মানবদেহে রক্ষিত হৃদয় থেকে উৎসারিত শক্তিতেই পরিচালিত হয় তার চোখ, কান, হাত-পাসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। মানুষের হৃদয়গভীরে যখন হিংস্রতা বাসা বেঁধে ঠিকানা গড়ে তোলে, তখনই মানুষের হাত পা ও অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গ লিপ্ত হয় হিংস্রতায়। এমনই হাজারো হিংস্র হৃদয়ের মানুষের বসবাস ছিল আরবের মরুর বুকে। সেই সব ডাকাত লুটেরা ও হিংস্র মানুষদের ভিড়ে শান্তির সুবাতাস বয়ে দেয়ার লক্ষ্যে প্রেরিত হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম। তিনি এলেন এবং হিংস্র হৃদয়গুলোর প্রতি আদরে ছুঁড়ে মারলেন শান্তির বাণী, সম্প্রীতির বাণী। প্রতিমুহূর্তে তিনি বাধাগ্রস্থ হলেন, তবুও তিনি থামলেন না। ছড়াতে থাকলেন সুবাস। হিংস্র হৃদয়ের দু’চারজনকে সত্যের পথে আনতে সক্ষম হলেন। তাদেরকে কালেমা পড়ালেন। এর পরেই নির্দেশ দিলেন ‘ তোমরা নামায আদায় করো’।
একি? নামাযে দাঁড়িয়ে হিংস্র মানবদের দানবীয় মনটা যেন গলিত মোমের ন্যায় বিগলিত হতে আরম্ভ করলো। ক্ষিপ্রমান মানুষগুলোর এ কী হলো? তারা অঝোরে কাঁদছে কেন? ওরা অনুতপ্ত হতে আরম্ভ করলো। নামায ওদের বদলে দিতে সক্ষম হলো। এভাবেই মানুষ যখন নামাযে দাঁড়িয়ে তার তনুমন মহান প্রভুর দরবারে অবনত করে, তখন আরশ থেকে তার হৃদয়ে চুয়ে চুয়ে পড়ে শান্তির ফোটা ফোটা অমীয় সুধা।
নবীজির সা.-এর দাওয়াতের ধারাবাহিকতা ও প্রচেষ্টায় যারাই ইসলামের ছায়াতলে এলো, বিশ্বনবী সা. তাকে কালেমা পড়ালেন এবং সর্বপ্রথম নির্দেশ দিলেন নামাযের।
ইরশাদ হচ্ছে, ‘ নিশ্চয় নামায মানুষকে অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। অবশ্যই আল্লাহর যিকিরই উত্তম কাজ’। – সূরা আনকাবুত: ৪৫।
এভাবে দলে দলে অমানুষেরা ইসলামের ছায়াতলে অবস্থান নিল এবং নামাযের মাধ্যমে নিজেকে মহান প্রভুর সামনে বিলীন করে দিয়ে হৃদয়ে সমাগম ঘটালো ঝলমলে তারার। লুটেরা আরবেরা হয়ে উঠলো বিশ্ব শান্তির প্রতিক। ধীরে ধীরে আরবের পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সব সন্মানিত মানুষেরা ছড়িয়ে পড়লেন দুনিয়াজুড়ে। শান্তির পসড়া সাজিয়ে তারা যেখানেই বসে পড়লেন সেখানেই গড়ে উঠলো ঐতিহাসিক মসজিদ। গড়ে উঠলো নামাযের বিশাল বিশাল জামাত। বিশ্বের তাবৎ মানুষেরা ছুটে আসতে আরম্ভ করলেন সেই জামাতে শরীক হওয়ার অভিপ্রায়ে। কারণ, বিশ্ব মানবতা চেয়ে চেয়ে দেখেছে হৃদয়ের প্রশান্তি এই নামাযের কাতারে বিদ্যমান। আজো বিদ্যমান সেই ছুটে চলা। শান্তির পাণে। নামাযের পথে।
চলুন, আমরাও ছুটে চলি সেই জামাতে। শান্তির হাতছানি পেতে। কাতারে কাতারে।
লেখক: মুফতী সালাহুদ্দীন মাসউদ: