বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে নানারকম স্থাপনা। মানুষ সবসময়েই চেষ্টা করেছে নিজের কারিগরী দিয়ে আরো সুন্দর আর মনোরম কিছু তৈরি করতে। কিন্তু সেসবই মাটির ওপরে। কিন্তু প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ মাঝে মাঝে মাটির ওপরের এই স্থাপনাগুলোকে টেনে নিয়ে গিয়েছে নীচে। তাদের কোনটা গিয়েছে হারিয়ে। আর কোনটা রয়ে গিয়েছে পানির তলাতেই। জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। আসুন জেনে নিই এমনই প্রশ্নে ভরা রহস্যময় পাঁচ ডুবন্ত স্থাপনা কথা। আজকে রইল সিরিজের প্রথম পর্ব- "ইয়োনাগুনি মনুমেন্ট"।
ইয়োনাগুনি মনুমেন্ট আসলে যেমন
রিইউকু দ্বীপের দক্ষিণে ইয়োনাগুনি দ্বীপের কাছাকাছি অবস্থিত পৃথিবীর সবচাইতে রহস্যময় ডুবন্ত স্থাপনাটি হচ্ছে এই ইয়ানোগুনি মনুমেন্ট। জাপানের মানুষের কাছে যার আরেক নাম ইয়োনাগুনির ডুবন্ত ধ্বংসাবশেষ। একদম ঠিকঠাক আকৃতি, সোজা দেয়াল, সিঁড়ি, কলাম, মানুষের মুখ খোদাই করা পাথর- কী নেই এখানে! ১৯৮৭ সালে প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় এই স্থাপনাটির যা কিনা সেসময় প্রচন্ড সাড়া ফেলে দেয়। প্রথমটায় অনেকে একে প্রকৃতির কোন খেয়াল ভেবে নিয়েছিলেন। কিন্তু আবিষ্কারের পরপরই সেখানে পাড়ি জমান বিজ্ঞানীরা আর জানান এটা মানুষের তৈরি। তাদের মতে ১০,০০০ বিসিতে এ স্থানটি ছিল পানির ওপরে। তবে কালের বিবর্তনে এবং ভূমিকম্পের মুখে পড়ে ২,০০০ বছর পূর্বে ডুবে যেতে বাধ্য হয় ইয়োনাগুনি মনুমেন্ট।
ধ্বংসাবশেষের আবিষ্কার
শীতকালে ইয়োনাগুনি সাগরে ডাইভিং করা আশেপাশের মানুষদের জন্যে বেশ আকর্ষণীয় কাজ। আর তাই প্রতিবারই শীতকালে এর চারপাশে ভীড় করে বসে হাজার হাজার মানুষ। সেবারও এর ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। সাগরের হাঙ্গর মাছকে আরো একটু কাছ থেকে দেখতে সমুদ্রে গিয়েছিলেন পর্যটন সংস্থার পরিচালক কিহাচিরো আরাটাকে। আর সেখানেই হঠাৎ চোখে বাঁধে তার পানির নীচের স্থাপনাটি। খবর ছড়িয়ে পড়ে। চলে যায় রিইউকু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের প্রফেসর মাসাকি কিমুরার কাছেও। দলবল নিয়ে রওনা হন তিনি ধ্বংসাবশেষের কাছে আর নিশ্চিত করেন ইয়োনাগুনি মনুমেন্টের কথা।
কী কী আছে?
কয়েক হাজার বছর আগে তৈরি হওয়া এই মনুমেন্টের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ২৭ মিটার লম্বা বিশাল একটি চারকোনা স্থাপনা। এছাড়াও এতে রয়েছে দুটো খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে থাকা স্তম্ভ, প্রায় ৫ মিটার বিস্তৃত শৈলস্তর, পাথরের একটি ৭ মিটার লম্বা স্তম্ভ, প্লাটফর্ম, এল আকৃতির পাথরসহ আরো অনেককিছু। কিমুরার কথানুসারে এই স্থানগুলো বেশ কয়েকটি মন্দির, একটি খেলার মাঠ, রাস্তা ও পানির ব্যবস্থাসহ আরো বেশকিছু জিনিসের প্রদর্শন করে।
তবে প্রফেসর কিমুরার যথেষ্ট জোর দেওয়া সত্ত্বেও এখনো অব্দি তর্ক শেষ হয়নি ইয়োনাগুনি মনুমেন্টের নির্মানের কারণ নিয়ে। মানুষ নাকি প্রকৃতি? কার হাতে তৈরি হয়েছে অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরা পানির নীচের এই মনুমেন্টটি? রহস্য এখনো থেকে গিয়েছে রহস্যই!