বাংলাদেশের বর্তমান পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে যে সকল স্থান বহুলভাবে পরিচিত এর অধিকাংশই পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। এরই অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় এ্যাডভেঞ্চার হিসেবে ইকো-ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রচারে স্বল্পতা কিংবা যোগাযোগসহ পরিবেশবান্ধব আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা থাকা সত্ত্বেও বগালেক ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান।
বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ১৫ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিলেই বগা লেক। পানি দূষণ, বায়ু দূষণ আর ভূমি ক্ষয়ে বিপন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এই অপরূপ লীলাভূমি। পর্যটকদের দ্বারা দূষণ রোধে এই এলাকায় এখনই ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প বিকাশে দ্রুত পদক্ষেপ তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশ-বিশ্লেষকরা।
পর্যটকের কাছে এককভাবে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের পরিবর্তে দলগতভাবে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ বেশ আকর্ষণীয়। প্রায় ২৫ কিলোমিটার ব্যাসের একটি পাহাড়ি পর্যটন বলয়ের মধ্যে বগা লেক, কেওক্রাডং, তাজিনডং, পুকুরপাড় লেক, জাদিপাই ঝরনা, রিজুক ঝরনা, শঙ্খ নদীসহ আরও অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে।
পরিবেশ ও প্রাণীবিদ আনিসুজ্জামান খান প্রিয়.কম-কে বলেন, বাংলাদেশে ইকো টুরিজম খুব রিসেন্টলি এই বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। এর মানে হলো ইকোলজিক্যাল টুরিজম। কেউ কেউ বলে ইকোনমিক টুরিজম। তবে এটি হবে ইকোলজিক্যাল টুরিজম এর মানে হলো মানুষ প্রকৃতির উপায়ে ভ্রমণ করবে।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বে মানুষ ভাবছে প্রকৃতির যে কাজ আছে সেটা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্যই ইকো টুরিজম নিয়ে ভাবনা হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় মানুষদের জীবন-যাপন কিন্তু নগরজীবনের থেকে অনেক ভিন্ন। সেখানে গেলে পাহাড়িরা কালচারাল হেজিটেশন অনুভব করে। এছাড়া আমরা যখন সেখানে যাই তখন তাদের বিষয়গুলো নিয়ে বিকৃত উল্লাস করি।
আনিসুজ্জামান খান বলেন, সরকার ও প্রশাসনকে যে ব্যবস্থা করতে হবে তা হলো- কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় টুরিজমের থেকে যে অর্থ আসবে তা ওসব স্থানে বসবাসকারীদের এর একটি ভাগ দেয়া অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ পর্যটনের জন্য ওইসব এলাকায় বসবাসকারীদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এমন কি পর্যটনের জন্য তাদের আবাসস্থলও তাদের ছাড়তে হয়।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক যে বৈশিষ্ট্য আছে তা যেন ধ্বংস না হয় সেভাবেই পর্যটনের ব্যবস্থা করতে হবে। ইকোনোমিক বেনিফিট লোকাল কমিউনিটির সাথে শেয়ার করতে হবে।
ইকো-টুরিজ্যম বা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ হলো পরিবেশের কাছাকাছি, সবুজের দেশে, পরিবেশ বান্ধব উপায়ে পাড়ি দেয়া। আর পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের প্রথম শর্ত হলো- পরিবেশের একেবারে কাছাকাছি চলে যাওয়া। বিশাল পাহাড়ের ওপরে, খোলা আকাশের নীচে, মাটির কোলে, নদীর বুকে নিজেকে ভাসিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত ভ্রমণস্থানের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া৷ এবং তৃতীয়, স্থানীয় মানুষের উন্নয়নে সহযোগিতা ও আর্থিক সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকা।
বিগত ২০০৫ সাল থেকে লেকটি নিয়ে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম। বগা লেক যেহেতু পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান, তাই এটিকে দ্রুতই ইকো-ট্যুরিজমের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি প্রিয়.কম-কে বলেন, বগা লেকে একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্য রয়েছে। সেখানে পর্যটকের লেকের পানিতে গোসল করেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করে তা লেকের পানিতে ফেলে আসেন। কিন্তু পর্যটকেরা তা না করলেই পারেন। নৌকা করে পর্যটকেরা লেকের মাঝে যান। এটিও লেকের পরিবেশের জন্য উপযোগী নয়।
বিগত দুই বছর ধরে তিনি বগা লেকের তলদেশের চিত্র ধারণ করে চলেছেন ফ্রি-ল্যান্স ফটো সাংবাদিক ও দেশের প্রথম সমুদ্র বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক তথ্য ও ভিডিও চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘সাইলেন্ট ব্লু’র চেয়ারম্যান শরিফ সারোয়ার। গত এপ্রিলে লেকটির তলদেশে সর্বশেষ অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি। ওই সময় লেকের তলদেশের ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, পর্যটকদের ব্যবহৃত শ্যাম্পু, সাবানের প্যাকেট, বিয়ারের ক্যান, প্ল্যাস্টিক পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য লেকটির পরিবেশ দূষিত করছে।
বগা লেক এলাকায় ইকো ট্যুরিজম প্রসঙ্গে আলোকচিত্রী শরীফ সারোয়ার প্রিয়.কমকে বলেন, আমি মনে করি বগা লেক এলাকাকে শুধু ইকো-ট্যুরিজম এরিয়া ঘোষণা করেই নয় বরং এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এছাড়াও প্রত্যেক পর্যটকেও পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সচেতন হতে হবে।