আগামী ৮ জানুয়ারি বসছে সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আসর বিসিএস। ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও অনেকেই ছিটকে পড়েন বাছাই পর্ব থেকেই। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লিখেছেন ৩৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম অভিজিত বসাক:
হাতে মাত্র ১৫ দিন। যা প্রস্তুতি নেওয়ার, তা ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছেন। এখন সময় কেবল ঝালিয়ে নেওয়ার। নতুন করে কোনো কিছু পড়ার দরকার নেই। কে কতটুকু পড়েছেন, তা নিয়েও মাথা ঘামানোর দরকার নেই। এমনকি আপনার কাছের বন্ধুটিও এ সময়ে বিসিএসের জন্য কী কী পড়েছে তা জানার চেষ্টা করবেন না। যে বিষয়গুলো একটু কঠিন সেগুলো নিয়ে একটু সময় দিন। গণিতের সব সূত্র না দেখে লেখার চর্চা করুন। যেখানে আটকে যাবেন, সেখানে বই দেখে নেবেন।
সব টপিক থেকে দু-একটা করে সমাধান করে ফেলুন। দেখবেন, প্রস্তুতি অনেক সহজ হয়ে গেছে। নিজে নিজে ইংরেজির সাহিত্য অংশের পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করুন। না দেখে বিভিন্ন লেখকের বইয়ের নাম খাতায় লিখুন। যখন দেখবেন কোনো একটা পারছেন না, তখন বই খুলে সেটি পড়ে নিয়ে আবার লিখুন। গ্রামারের রুলগুলো মেনে গাইড বইয়ের প্রশ্ন সমাধান করুন। বাংলার জন্যও একই পদ্ধতি অনুসরণ করুন। বাংলা ব্যাকরণে সমাস, সন্ধি, কারক, বাগধারা প্রভৃতি অংশে যেগুলো কঠিন মনে হয়, সেগুলো খাতায় প্রশ্ন আকারে লিখুন। পরে না দেখে সমাধান করুন। বিজ্ঞানের সিলেবাস বেশ বড়। এ বিষয়ে একটু বেশি সময় দিন। প্রতিটি টপিকের ওপর একবার হলেও চোখ বুলিয়ে নিন।
সাধারণ জ্ঞান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন—প্রণালি, বিরোধপূর্ণ দ্বীপ, অঞ্চল, রাজধানী, চুক্তি, সম্মেলন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বর্তমান সময়ের বিরোধপূর্ণ ইস্যু। এগুলো সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলির ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, বিভিন্ন অর্জন, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পর্কে শেষবারের মতো প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও যে টপিকগুলো একটু জটিল, সেগুলো ভালোভাবে দেখতে হবে। তবে কোনোভাবেই নতুন কিছু পড়তে গিয়ে চাপ বাড়াবেন না। পরীক্ষার আগের দিন পড়াশোনা করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। এই দিনটা শুধু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রাখুন। যেটা ভালো লাগে সেটাই করুন। কোনোভাবেই চাপ নেবেন না, হারানোর কিছু নেই আপনার। যেটি আপনি এখনো পাননি, সেটি কিভাবে হারাবেন—এটা ভাবুন। গান শুনুন, মুভি দেখুন। গল্পের বই পড়ার অভ্যাস থাকলে বই পড়ুন। বিকেলের দিকে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। পরীক্ষার সব জিনিস যেমন—প্রবেশপত্র, কলম, পেনসিল, ইরেজার গুছিয়ে রাখুন। নিজের মতো করে বিভিন্ন বিষয়ের জন্য সময় ভাগ করে ফেলুন।
যে বিষয় ভালো পারেন, সে বিষয়ের জন্য কম সময় এবং যে বিষয়ে আপনি একটু কাঁচা সে বিষয়ের জন্য একটু বেশি সময় বরাদ্দ রাখুন। পরীক্ষার আগের দিন সব বই নিয়ে পড়তে বসাটা নির্ঘাত বোকামি। ভুলেও এটি করবেন না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন। পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম হওয়াটা খুব দরকার। পরীক্ষার দিন সকালে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন। চাপ কমানোর জন্য সকালের পত্রিকায় চোখ বুলাতে পারেন। পরীক্ষার কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের একটু আগে পৌঁছতে চেষ্টা করবেন। রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রোল নম্বর—এ তথ্যগুলো সতর্কভাবে পূরণ করুন। তারপর যে বিষয় আপনি সবচেয়ে ভালো পারেন, সেটির উত্তর করুন। গণিত একটু বেশি সময় নিয়ে পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়ে করতে পারেন। শেষ ভাগে গণিত উত্তর করতে যাবেন না। কোনো প্রশ্ন নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
সব প্রশ্নের উত্তর কেউ পারবে না, আপনিও পারবেন না, এটি বিশ্বাস করতে শিখুন। যেগুলোর উত্তর জানেন না, সেগুলোর উত্তর দিতে যাবেন না। কেননা ভুল উত্তরের জন্য নেগেটিভ মার্কিং রয়েছে। কারো সঙ্গে কথা বলে কোনো প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে দ্বিধা তৈরি করবেন না। এতে সময় নষ্ট হবে এবং আপনি আত্মবিশ্বাস হারাবেন। পরীক্ষার হল নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা। যিনি যত বেশি মাথা ঠাণ্ডা রেখে উত্তর করতে পারবেন, তিনি অন্য সব পরীক্ষার্থী থেকে তত বেশি এগিয়ে থাকবেন। কী পড়েছেন সেটির চেয়ে বড় ব্যাপার হলো, পরীক্ষার হলে আপনি সেই পড়ার কতটুকু ব্যবহার করতে পারলেন। নিজের মতো করে পরিকল্পনা সাজিয়ে নিন পরীক্ষার জন্য। নিজেকে বিশ্বাস করুন প্রচণ্ডভাবে। নিশ্চয়ই আপনি সফল হবেন।
লেখাঃ অভিজিৎ বসাক
courtesy: kalerkantho