হাম

Author Topic: হাম  (Read 1243 times)

Offline taslima

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 515
    • View Profile
হাম
« on: February 13, 2016, 01:20:07 PM »
সারা বিশ্বে প্রতি বছর হামের কারণে প্রায় ১০ লাখ শিশু মারা যায়। হামে আক্রান্ত কোনো শিশুর কাছ থেকে জীবাণুটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এবং সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে, তবে সময়মতো টিকা দেয়া থাকলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়

হাম কি?

হাম একটি সংক্রামক রোগ। আরএনএ প্যারামিক্সো  ভাইরাস (RNA Paramixo Virus) দ্বারা আক্রমণের ফলে এ রোগ হয়। শিশুদের সংক্রামক রোগের মধ্যে হামই সবচেয়ে মারাত্মক। সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এ রোগ বেশি হয়। তবে একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশগুলোতে চার মাস থেকে দুই বছর বয়সেই এ রোগের সংক্রমণ বেশি ঘটে।

বড়দেরও কি হাম হতে পারে?

হাম শুধু শিশুদের নয়, বড়দেরও হতে পারে। ইদানীং কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রী এবং বড়দেরও হাম হতে দেখা যাচ্ছে। জেনে রাখা ভালো বড়দের হাম হলে শরীরে জটিলতা বেশি হয়। বড়দের হামের কারণে যেসব জটিলতা হতে পারে তা হচ্ছে- মারাত্মক নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানের সংক্রমণ ইত্যাদি। এছাড়া অনেক সময় মস্তিষ্কের প্রদাহ হতে পারে।

হাম কিভাবে ছড়ায়?

শিশুদের ক্ষেত্রে হামে আক্রান্ত কোনো শিশুর কাছ থেকে জীবাণুটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এবং সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে, তবে সময়মতো টিকা দেয়া থাকলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বড়দের ক্ষেত্রে সাধারণত আক্রান্ত রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এর ভাইরাস আশপাশের সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির কক্ষে প্রবেশ করলেও সুস্থ যে কেউ হামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

হামের উপসর্গ কি কি?

হামে আক্রান্ত হলে সাধারণত নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা যায়-

¬    হামে আক্রান্ত হলে প্রথম এক থেকে দুইদিন জ্বর হতে পারে এবং তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি হতে পারে।

¬    শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘামাচির মতো লাল লাল দানা দেখা দেয়। দানাগুলো প্রথমে কানের পেছনে এবং কপাল ও চুলের সংযোগস্থলে বেশি দেখা যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লাল দানায় সারা শরীরের ত্বক ভরে যায়।

¬    আক্রান্ত ব্যক্তির গা ম্যাজ ম্যাজ করে, নাক দিয়ে পানি পড়ে ও হাঁচি হয়।

¬    চোখ লাল হয়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও চোখ দিয়ে আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হয়।

¬    মুখের ভেতর লবণদানার মতো ছোট ছোট দাগ হয়। একে কড় Koplik’s Spot বলে। এ সময় গলার স্বর ভেঙে যেতে ও কাশি হতে পারে।

¬    হামে আক্রান্ত হলে শিশুরা খাবার খেতে চায় না ও এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

হাম হলে কি কি জটিলতা হতে পারে?

হাম আক্রান্ত হলে সতর্ক থাকতে হয়। সতর্কতা অবলম্বন না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমনকি শিশু মারাও যেতে পারে। হামের কারণে সাধারণত যে জটিলতাগুলো দেখা দেয়  সেসব হলো- মস্তিষ্কের প্রদাহ, মুখের প্রদাহ, অন্ত্রের প্রদাহ, পেটের অসুখ, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালির প্রদাহ, চোখের কর্নিয়ার প্রদাহ, কর্নিয়াতে আলসার বা ঘা হওয়া, কানের প্রদাহ, পুষ্টিহীনতা, শরীরের ওজন মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় মায়েদের হাম হলে গর্ভপাত ও অকাল প্রসব হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

হাম হলে করণীয় কি?

হামে আক্রান্ত রোগীকে অন্যদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে হবে, জ্বর না কমা পর্যন্ত রোগীকে বিছানায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর কমানোর প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। এ সময় প্রচুর তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। রোগীকে অবশ্যই সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

হাম প্রতিরোধে করণীয় কি?

চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই রোগের প্রধান হাতিয়ার। বাচ্চার বয়স ৯ মাস হলে তাকে নিকটস্থ হাসপাতাল থেকে এক ডোজ হামের টিকা দিলে সে পরবর্তীকালে হামের ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।
Taslima Akter
Sr. Accounts Officer (F&A)
Daffodil International University
Email: taslima_diu@daffodilvarsity.edu.bd