দীর্ঘ ৯ মাস সাধনার পর একজন মা একটি শিশুর জন্ম দেন। জন্মের পর মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন পৃথিবীর নতুন এ অতিথিকে সুস্থ-সবল রাখতে কত কিছুই না করে থাকেন। একটা সময় আসে শিশুটিকে প্রয়োজনীয় টিকা দেয়ার। মা-বাবা ভাবতে থাকেন, আমরা আমাদের শিশুর প্রয়োজনীয় টিকাগুলো ঠিকমতো দিচ্ছি? সব ঠিকঠাক আছে তো? সাধারণত আমাদের বেশিরভাগ মানুষেরই শিশুদের প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাই আসুন জেনে নেই শিশুদের একান্ত প্রয়োজনীয় টিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য...
পোলিও টিকা : পোলিও মারাত্মক একটি রোগ। এ রোগ প্রতিরোধে শিশুকে অবশ্যই পোলিও টিকা দিতে হবে। এ টিকাটি চারটি ডোজে খাওয়াতে হয়। প্রথম ডোজটি শিশুর জন্মের দিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে খাওয়াতে হয়। পরবর্তী দুটি ডোজ চার সপ্তাহ পর পর খাওয়াতে হয়। চতুর্থ ডোজটি হামের টিকার সঙ্গে খাওয়াতে হয়।
বিসিজি টিকা : বিসিজি টিকাটি মারাত্মক রোগ যক্ষ্মা প্রতিরোধ করে। তাই এটিকে যক্ষ্মার প্রতিষেধক টিকা বলা হয়। সাধারণত জন্মের পর ছয় সপ্তাহের মধ্যে এ টিকা দিতে হয়।
ডিপিটি টিকা : ডি তে ডিপথেরিয়া, পি তে পারটোসিস বা হুপিং কাশি ও টি তে টিটেনাস। তাই ডিপিটি টিকাটি এ তিনটি রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এ তিনটি রোগই আলাদা আলাদাভাবে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত শিশুর জন্মের ছয় সপ্তাহ পর থেকে শুরু করে চার সপ্তাহ পর পর তিনটি ডোজ দিতে হয়। জেনে রাখা ভালো, এ টিকাটি ছয় সপ্তাহের আগে ও পাঁচ বছরের পর দেয়া যাবে না।
হামের টিকা : হাম শিশুদের জন্য মারাত্মক কষ্টদায়ক একটি রোগ। এ রোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই শিশুকে হামের টিকা দিতে হবে। সাধারণত শিশুর ৯ মাস বয়সে এ টিকা দিতে হয়। মনে রাখতে হবে, এ টিকার সঙ্গে শিশুকে পোলিওর চতুর্থ ডোজের একটি ভিটামিন ক্যাপসুলও খাওয়াতে হবে।
হেপাটাইটিস-বি : হেপাটাইটিস-বি এর কারণে জন্ডিসসহ লিভারের নানা মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাই শিশুকে অবশ্যই দুই বছর বয়সের পর এ টিকাটি দিতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত এ টিকাটি দুটি ডোজে দেয়া হয়। প্রথম ডোজের ছয় মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
টাইফয়েড টিকা : টাইফয়েড এমনই মারাত্মক একটি ব্যাধি, যা আপনার শিশুর যে কোনো অঙ্গ বিকল করে দিতে পারে। এমনকি জীবন পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারে। তাই শিশুকে অবশ্যই টাইফয়েডের টিকা সময় মতো দিতে হবে। সাধারণত শিশুকে দুই বছর বয়সের পর এ টিকা দিতে হয়। টাইফয়েডের টিকাটি তিন বছর পর পর দিতে হয়।
উপরে উল্লেখিত টিকাগুলো শিশুর জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এছাড়াও বর্তমানে অন্য নানা রোগের টিকা দেয়া হয়। টিকা দেয়ার পর শিশুর জ্বর আসতে পারে বা টিকার স্থান লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। অনেক সময় টিকা খাওয়ানোর পর পাতলা পায়খানাও হতে পারে। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এমনটি হলে টিকা দেয়ার ২ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই শিশু সুস্থ হয়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, শিশুকে সুস্থ-সবল একজন মানুষরূপে পৃথিবীতে স্থান করে দেয়া বাবা-মাসহ পরিবারের দায়িত্ব। তাই এ দায়িত্ব পালনে নিজে সচেষ্ট হোন ও অন্যকেও উৎসাহিত করুন। পরিশেষে সময়মতো আপনার শিশুকে টিকা দিন ও সুস্থ পরিবার নিয়ে ভালো থাকুন।