অনেক অভিভাবকই রেগে গেলে কিংবা তার শিশু সন্তানটি কোনো ভুল করলে তার উপর চিৎকার করে রাগ দেখান। যখন আমরা রেগে যাই তখন আমরা নিজেরা কি করছি তার উপর একটিবারের জন্যও নজর দিই না। আমাদের গলার স্বর চড়তেই থাকে। অথবা আমরা জেনে বুঝেই চিৎকার করে কথা বলতে থাকি, মনে করি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের চিৎকার করাটাই উচিত।
কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই জানি শিশুদের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেই জিনিসটি বোঝানো সম্ভব। চিৎকার করাটা কোনো কিছুর সমাধান নয়, বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। একবার ভেবে দেখেছেন কি, আপনি যদি নিজের উপরে নিজের রাগের উপরে নিয়ন্ত্রণ না রাখতে পারেন তবে নিজের সন্তানের উপর কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখবেন?
এর পরিবর্তে আপনি যদি শান্ত থেকে ঠাণ্ডা গলায় আপনার শিশুটির সাথে কথা বলেন, তাকে বোঝাতে পারেন তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এছাড়াও আপনার চিৎকার করার ফলে শিশুটির উপরে যে প্রভাব পড়ছে তাও পড়বে না। এটি খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনুন, শিশুটির সাথে কথা বলার আগে নিজেকে শান্ত করে নিন। আপনার শিশুকে বোঝানোর দায়িত্ব আপনারই। তার সাথে চিৎকার করে কথা বলে তাকে বোঝাতে পারবেন না বরং সে আপনার এই বিষয়টিও শিখে নেবে।
১) প্রতিজ্ঞা করুন নিজেই
গবেষণায় দেখা যায় যখন মানুষ ঠাণ্ডা মাথায়, নিজের মুখে উচ্চারন করে কোনো প্রতিজ্ঞা করেন তখন তা ভঙ্গ না করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। অপরদিকে যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ করে বা ‘ইশ, আমি যদি এমনটি না করতাম’ এভাবে ইচ্ছা প্রকাশ করে বললে সম্ভব হয় না। পরবর্তীতে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তাই নিজের শিশুটির উপরে চিৎকার না করার প্রতিজ্ঞা ঠাণ্ডা মাথায়, মুখে বলে বা কাগজে লিখে করুন। এতে করে অনেকটা শান্ত রাখতে পারবেন নিজেকে।
২) নিজের পরিবারের সাথে প্রতিজ্ঞা করুন
যদি নিজেকে করা প্রতিজ্ঞা নিয়ে আপনার কোনো সংশয় থেকে থাকে তাহলে পুরো পরিবারের সামনে একসাথে প্রতিজ্ঞা করুন। মানুষ অন্যের সাথে করা প্রতিজ্ঞা পূরণের চেষ্টা সবসময়েই করেন।
৩) থামুন, যেতে দিন এবং নিঃশ্বাস নিন
যখনই দেখবেন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন তখনই এই নিয়মটি পালন করুন। থামু, যেতে দিন এবং লম্বা নিঃশ্বাস নিন।
থামুনঃ যখনই মনে করবেন চিৎকার করতে যাচ্ছেন আপনি কথা বলা থামিয়ে দিন। কথা বলবেন না, এতে করে চিৎকারও হবে না।
যেতে দিনঃ সেই সময়ের জন্য বিষয়টি যেতে দিন। যখন মনে করবেন আপনি নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন তখন থেমে বিষয়টি যেতে দিন যদি না সেটি তাৎক্ষণিক সমাধানের কিছু হয়। পরেও ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলা সম্ভব।
লম্বা শ্বাস নিন ১০ বারঃ নিজেকে রিলাক্স করার জন্য লম্বা শ্বাস নিন ১০ বার।
৪) নিজেকে মনে করিয়ে দিন ‘আপনি পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ এবং শিশুটি এখনো আপনার কাছ থেকেই শিখছে’
নিজের সন্তানের দিকে তাকান, তাকে বলুন, ‘আমি শান্ত হওয়ার চেষ্টা করছি অনেক। আমি চিৎকার করতে চাই না। আমরা শান্ত হয়ে আবার কথা বলা শুরু করবো’।
৫) নিজেকে শান্ত করার জন্য যা প্রয়োজন তাই করুন
আরও বেশ কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিন, যোগব্যায়াম করুন, চোখে মুখে ঠাণ্ডা পানি দিন, অন্য কিছু করুন, যেভাবে পারুন নিজেকে শান্ত করুন। নিজেকে বোঝান, ‘আপনার শিশুটি ছেলেমানুষি করেছে, দুষ্টুমি করেছে কারণ সে এখনো ছোটো’।
৬) আবার চেষ্টা করুন
যখন নিজেকে শান্ত করতে পারবেন তখন নিজের শিশুটির দিকে তাকান, ভাবুন তিনি আপনারই সন্তান তাকে বোঝানোর দায়িত্ব আপনার, তাকে নরম গলায় এবং সঠিকভাবে বুঝিয়ে ভুল ধরিয়ে দেয়ারও দায়িত্ব আপনার। তাকে ঠাণ্ডা মাথায় বোঝানোর চেষ্টা করুন।
সূত্রঃ parentdish.co.uk