টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: তীরে এসে ডুবল তরি

Author Topic: টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: তীরে এসে ডুবল তরি  (Read 684 times)

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
ভারতীয় ক্রিকেটারদের লাফালাফি শেষে দুদলের খেলোয়াড়দের হাত মেলানো-টেলানো সারা। প্রায় সবাই বেরিয়ে গেছেন। সাকিব আর তামিম তখনো মাঠের মাঝখানে। সাকিব উত্তেজিতভাবে কিছু একটা যেন বললেন। তারপর দুজনই কোমরে হাত দিয়ে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর শরীরটা টানতে টানতে ড্রেসিংরুমে ফেরা।
ফেরার সময় উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা হরভজন সিংয়ের দিকে চোখ পড়ল তামিমের। পিঠে টোকা দিয়ে তাঁর সঙ্গে হাত মেলালেন। হরভজন হাত ছাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলেন তামিমকে। কিছুক্ষণ ধরেই থাকলেন।
এই ম্যাচে এত সব নাটক ছাপিয়ে ওই দৃশ্যটাই কি শেষ পর্যন্ত অমর ছবি হয়ে গেল! এমন এক ম্যাচ, যাতে আসলে বিজয়ের আনন্দে ভেসে যেতেও বিজয়ীর মনে বিজিতের জন্য একটু কষ্ট ছুঁয়ে যায়!
টি-টোয়েন্টি মানে নাটক। টি-টোয়েন্টি মানে শেষ ওভারের নখ কামড়ানো উত্তেজনা। এই বিশ্বকাপ তো তাহলে টি-টোয়েন্টি নামের ‘কলঙ্ক’! শেষ হওয়ার অনেক আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ম্যাচের পর ম্যাচ। অবশেষে বেঙ্গালুরুর উন্মাতাল গ্যালারির সামনে টি-টোয়েন্টি দেখা দিল আপন মহিমায়। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এটা কি আর সেই বৃহত্তর ছবি দেখার ম্যাচ!
এই ম্যাচ হৃদয় ভেঙে দেওয়া এক দুঃখের নাম। হাতের মুঠোয় নিয়েও জয়টাকে ছুড়ে ফেলার ম্যাচ। এমনই অবিশ্বাস্যভাবে যে, দুঃখ শব্দটা এখানে ‘শোক’ হয়ে যেতে চায়। ২০১২ এশিয়া কাপের সেই ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হারার পর মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মুশফিক-সাকিবরা। কাল কান্নাকাটি কিছু হয়ে থাকলে তা আড়ালেই হলো। সেই কান্না পিছু তাড়া করার কথা অনেক দিন। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর শয়নে-স্বপনে নিশ্চিতভাবেই ফিরে ফিরে আসবে শেষ তিন বলের ওই দুঃস্বপ্ন।
শেষ ওভারে ১১ রান চাই। প্রথম তিন বলেই হয়ে গেল ৯। শেষ তিন বলে ২ রান, বাকি সব সমীকরণ মুছে দিয়ে ম্যাচ তখন একটা সম্ভাবনা নিয়েই দাঁড়িয়ে—বাংলাদেশই জিতছে। হার্দিক পান্ডিয়াকে পরপর দুটি চার মেরে সেই জয়ের আগাম উল্লাসটাও যেন করে ফেললেন মুশফিকুর রহিম!
তাতেই কি সর্বনাশটা হলো! আবেগের ঢেউ এলোমেলো করে দিল এমনিতে মুশফিকের নিষ্কম্প মনকে! একটা সিঙ্গেল নিলেই যেখানে স্কোর সমান হয়ে যায়, আসলে শেষ হয়ে যায় ম্যাচও—তিনি কিনা উড়িয়ে মারতে গেলেন। ডিপ মিড উইকেটে ওই ক্যাচটা আসলে দুঃস্বপ্নের সূচনা, কেই-বা তা ভাবতে পেরেছিল! বাংলাদেশই তো জিতছে! স্ট্রাইকে চলে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২ বলে ২ রান তো হচ্ছেই। মুশফিকের ভুল কি আর মাহমুদউল্লাহ করবেন!
ফুল টস পেয়ে মাহমুদউল্লাহর যুক্তি-বুদ্ধিও সব গুলিয়ে গেল। মুশফিকের মতো তাঁরও একই পরিণতি। শেষ বলে রান আউটে ম্যাচটা ‘টাই’ও হলো না। ৩ বলে ২ রান চাই, আর সেই তিন বলেই তিন উইকেট! না, টি-টোয়েন্টি এমন কিছু আর দেখেছে বলে মনে হয় না।
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University