মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ্যাসিষ্ট্যান্ট অফিসারঃ আগামী ১লা মে থেকে ‘ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শুরু হতে চলেছে ‘প্রশাসনিক দক্ষতা ও মানবিক মূল্যায়ণ’ শীর্ষক তিন দিন ব্যাপী একটি গঠন মূলক মুক্তমনা চিন্তাধারার ‘আন্তজার্তিক সেমিনার’। শুনেছি, আন্তজার্তিক সুশীলচিন্তা-শক্তির বেশ কিছু সুধি-জন এই সেমিনারে অংশ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। সাথে থাকছেন অত্র ইউনির্ভাসিটির সর্বচ্চ প্রশাসনিক চিন্তা সম্পূর্ণ সচেতন বিবেক।
সারা বিশ্বের অবহেলিত শ্রমিক-মজুরদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই মাসে ‘ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির পক্ষ থেকে এমন গঠন মূলক আয়োজনকে আমরা সাধুবাদ, ধন্যবাদ জানাই। সাথে এই অনুষ্ঠান আয়োজকদের কাছে বিনিত ভাবে ‘প্রশাসনিক দক্ষতা এবং মানবিক মূল্যায়ন’ সম্পর্কীত দু-চারটি কথা উল্লেখ করতে চাই ।
আমরা জানি অনেকক্ষেত্রেই মানবিক মূল্যায়ণ, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে ‘প্রশাসনিক খড় উত্তাপের পাথরে’ বহুকাল আগে থেকেই চাপা পড়ে আছে। ইতিহাস বিশ্লেষনে জানা যায়, পরিবার, সমাজ, কিম্বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্ন থেকেই বহুলাংশেই প্রশাসনিক ব্যক্তিরা এই স্রোতধারা বজায় রেখে চলেছেন। ফলে কর্মক্ষমতা ও যোগ্যতা তথা-কথিত ‘ তুষামুদ আর ক্ষমতার দাপটের’ কাছে পদ-ধূলিত হচ্ছে। যদিও শিক্ষার সু-মহান প্রাপ্তি এই অন্ধকারকে দূর করতে ক্রমাগত আন্দোলন করে চলেছে। ফলে কালের বিবর্তনে ‘একদা কৃতদাস আজ মুক্তির পথে ‘শ্রমিকের পরিচয়ে আফছা আলোতে পথ চলতে শুরু করেছে। আবার এ কথা সত্য যে, ভোরের আলো ফুটে উঠার আগেই প্রশাসনিক খড়তার কারণে ভ’ক্তভোগিদের মুক্তির পথ ক্রমাগতই পিচ্ছিল হচ্ছে। এ-দায়ভার ব্যক্তিক, বিশ্বায়নে পুজিঁবাদের চিন্তা ফল।
আলোচনার খাতিরেই বলতে হয়, বিশেষ করে ভারতবর্ষ কিম্বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ‘প্রশাসনিক খড়তা’ কর্মচারীর উপরে নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠায় ‘প্রশাসনিক দক্ষতা’ বলে পরিচয় পাচ্ছে। যা সমাজে সার্বজনিন সত্য বলে প্রতিষ্ঠা পেতে বসেছে। মূলতঃ এই ভ্রান্ত-চিন্তাধারার সূতিকাঘর হিসাবে সুলতানী, মুঘল, ব্রিটিশ কিম্বা স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশের ‘দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থা’ কাজ করে চলেছে। ফলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে শ্রম/শ্রমিক/ সাধারন জীবনের জয়গান। এই বিচ্যুত দাম্ভিকতা আর পদানত করার মানসিক হীনমান্যতা, পরিবার, সমাজ কিম্বা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেও কুলষিত করে চলেছে। ফলে অকালে চলে যেতে হচ্ছে সাংবাদিক মীনার মাহমুদের মত মেধাবী মানুষদেরকেও।
চিন্তা-বিশ্লেষনে দেখা যায়, গঠন-মূলক, আদর্শীক, ও তাত্ত্বিক শিক্ষা ‘ব্যানিজিক ভিত্তিক শিক্ষার’ কাছে অর্থনৈতিক সুধায় ব্যর্থ হয়ে এই ‘তথাকতিথ টেডিশন্যাল প্রশাসনিক খড়তার জন্ম দিচ্ছে। অনেক বিজ্ঞ জন অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, এই চিন্তা-ধারা বিকৃত মানসিকতার ফল। স্বজন-প্রীতি, অশিক্ষা, বহুবল, ও ক্ষমতা এর মূল পরিচায়কে কাজ করছে। আর তাই সহজ জন্মের সুবিধায় প্রতিষ্ঠান তো বটেই, আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও এই ‘প্রশাসনিক খড়তার’ কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে শত যুগের শ্রেষ্ঠ ‘শিক্ষারবৃক্ষ’ হতে বেড়িয়ে আসছে ‘মাকাল ফল’ সদৃশ্য অন্ত-সার শূন্য একটি স-ুদৃশ্য বস্তু।
উদাহারন হিসাবে বলতে পারি আমি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সাত বছর চাকুরী করেও হাত কচলানীর অনব্যাশ্যের কারণে প্রশাসনিক ধাপের একটি পথও অতিক্রম করতে পারি নাই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধা তালিকায় পাশ করেও ‘তথাকথিত প্রশাসনিক অদক্ষতাকে বহন করে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। এই দায় ভার কারও নয় তথাকথিত প্রশাসনিক ব্যবস্থার।
এই কথা সার্বজনীন সত্য যে, আধুনিক বিশ্বের কিছু বিবেকবান মানুষ আজও ‘কল্যাণ মূলক রাষ্ট্র চিন্তায় ‘মানবিক মূল্যায়নকে’ প্রধান্য দিয়ে সমানে এগিয়ে চলার পথ দেখাচ্ছে কিন্তু প্রশাসনিক দক্ষার পরিচয়ে ‘প্রশাসনিক খড়তার’ কারণে অনেকটাই খৈই হারিয়ে ফেলছেন। এই সমস্যা অধুনিক বিশ্বায়নে সার্বজননীন সমস্যা।
আমরা জানি সুশিক্ষার সু-মহান প্রাপ্তি ‘ প্রশাসনিক দক্ষতায় সমাজের সর্বত্র মানবিক আলো প্রজ্বলিত হয়। সেই লক্ষ্যে আয়োজক ও ব্ক্তাদের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ থাকবে, প্রশাসনিক দক্ষতা যেন খড়তার দ্বারা প্রভাবিত না হয়। যোগ্যতা বা কর্মদক্ষতা যেন ‘তৈল মালিশে’ তেল-তেলা না হয়। আমাদের আশা শুধূ আয়োজন নয় বিশ্বায়নের সকল ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক দক্ষতা ‘মানবিক মূল্যায়নে বিকাশিত হোক, প্রাপ্তি হোক এক কল্যাণ মূলক সমতার সমাজ।