সকালটা মোটেই একঘেয়ে মনে হয় না। সকালে সূর্য ওঠা, ভোরের বাতাস, সকালবেলার ফুল মনে তো প্রতিদিনই রং ধরায়, উজ্জীবনী শক্তি দিয়ে সামনে চলার প্রেরণা দেয় শরীর ও মনকে।
সকাল হলো শক্তি সঞ্চয়ের সময়। তাই সকালে চাই পুষ্টিকর খাদ্য, পেট ভরে খেয়ে সারা দিনের জন্য শক্তিকে আটকে রাখা, সেই শক্তি ক্রমে ক্রমে শরীর ও মনকে সচল হতে, সঞ্চারিত হতে, সাহসের সঙ্গে জীবনের নানা টানাপোড়েনকে অতিক্রম করতে সাহায্য করবে।
পুষ্টির মানে তাই প্রাতরাশ হবে রাজসিক। প্রাতরাশ খাবেন রাজার মতো, দুপুরের আহার হবে রাজকুমারের মতো, হালকা-ভারী খাবার আর রাতের আহার হবে কাঙালের মতো, বেশ হালকা। আমাদের দিনরাতের আহারের বড় অংশ থাকবে প্রাতরাশে। প্রাতরাশ স্বাস্থ্যের জন্য যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা গুণীজন ও জ্ঞানীজনেরা স্বীকার করেছেন। সারা রাতের উপোসের পর শরীর ও মগজকে দেয় শক্তি, কাজ করার শক্তি। তাইতো এর নাম উপবাস ভঙ্গ বা ‘ব্রেকফাস্ট’।
প্রাতরাশ না খেলে শূন্য শক্তি নিয়ে পথ চলতে হয় দিনের যাত্রায়। যেন জ্বালানি তেল ছাড়া মোটরগাড়ি চালানোর চেষ্টার মতো।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ
ঘুম থেকে ওঠার দুই ঘণ্টার মধ্যে প্রাতরাশ সেরে নিতে হবে।
সারা দিনের জন্য বরাদ্দ ক্যালরির ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ যেন থাকে প্রাতরাশে। কেবল ক্যালরিই নয়, স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ থেকে যেমন পাব শক্তি; তেমনি পাব বি ও সি ভিটামিন, আঁশ ও প্রোটিন, লৌহ ও ক্যালসিয়াম। এসব পুষ্টি উপকরণ নেহাত প্রয়োজন শরীরের জন্য। আর গবেষকেরা দেখেছেন, প্রাতরাশ থেকে এসব পুষ্টি আহ্বান করা না হলে দিনরাতের অন্যান্য বেলার খাবার থেকে কমই আহ্বান করা যাবে সেগুলো। ফল ও সবজি হলো ভিটামিন, খনিজ ও আঁশের ভালো উৎস। তাই প্রতিদিন প্রাতরাশে যেন থাকে গোটা ফল, যেমন কলা বা ফলের রস। আর আমিষের জন্য ডিম, অঙ্কুরিত ছোলা, শিমের বিচি, বাদাম। সঙ্গে আটার রুটি। ওটমিল-দই চমৎকার নাশতা।
ঘুম থেকে উঠে অবশ্যই দুই গ্লাস পানি।
স্বাস্থ্যকর অবয়ব অর্জন করতে গেলেও অবশ্যই প্রাতরাশ খেতে হবে। প্রাতরাশ বাদ দিলে তলপেটে জমবে মেদ, আর সেই মেদ ঘনীভূত হতে হতে স্থূলকায় হতে থাকবে। তাই অবশ্য প্রাতরাশ বাদ দেওয়ার বদভ্যাস ছাড়তে হবে। গবেষকেরা দেখেছেন যাঁরা নিয়মিত প্রাতরাশ করেন তাঁদের শরীরে বজায় থাকে স্বাস্থ্যকর ওজন। প্রাতরাশ বাদ দিলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিনি আর চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবল আগ্রহ হবে, যার পরিণতিতে হবে মেদসঞ্চিত শরীর।
প্রাতরাশ খেলে রক্তের গ্লুকোজ মান থাকে সুস্থিত, মগজের কাজকর্মের জন্য গ্লুকোজ অত্যাবশ্যক জ্বালানি। গবেষকেরা দেখেছেন, প্রাতরাশ খেলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়, কাজে মনোযোগ বাড়ে। মনও হয় প্রফুল্ল, মন-মেজাজ থাকবে চনমনে, চাপও কমে। শিশুদের মধ্যে গবেষণা করে দেখা গেছে, প্রাতরাশ খেলে স্কুলে তাদের পারফরম্যান্স ভালো হয়, আচরণ হয় শিষ্ট, ভদ্র। মগজও কাজ করে সর্বোত্তম।
দীর্ঘমেয়াদি হিত
প্রাতরাশ নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্য হিত লাভ ঘটে দীর্ঘমেয়াদি। স্থূলতা কমে, কমে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ প্রতিরোধ হয়, নিয়ন্ত্রিত থাকে ডায়াবেটিস। পরিবারের সবাই মিলে একত্রে খাবার অনবদ্য সুযোগ এনে দেয় প্রাতরাশ। স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুললে শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে যৌবন ও উত্তরযৌবনে সে অভ্যাস ধরে রাখলে, প্রাতরাশ বাদ দিয়ে আহারের বদভ্যাস এড়ানো যাবে। সুস্বাস্থ্য অর্জন করা যাবে। আর গড়ে উঠবে জীবনভর স্বাস্থ্যকর আহারের অভ্যাস। আর এই অঙ্গীকার হোক এই ভরা ফাল্গুনের মাসে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী : পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
Collected...