হোমিওপ্যাথির রহস্য উন্মোচনে...

Author Topic: হোমিওপ্যাথির রহস্য উন্মোচনে...  (Read 730 times)

Offline azad.ns

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 60
  • Test
    • View Profile

শরীর ও স্বাস্থ্য
হোমিওপ্যাথির রহস্য উন্মোচনে...

প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথির রহস্য
উত্তর: স্যামুয়েল হ্যানিম্যান প্রবর্তিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দু’শতাব্দীরও বেশিদিন ধরে চলে আসছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওষুধকে অনেক সময় Potentisation-এর নামে এতখানিই ‘লঘু’ করা হয় যে তাতে মূল ওষুধের কোনও অণু -পরমাণুরও থাকা সম্ভব নয়। অর্থাৎ কিনা রাসায়নিক বিচারে এরা জল ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ এরা দিব্যি ওষুধের মতো কাজ করে। শুধু তাই নয়, বহু ক্ষেত্রে অত্যাশ্চর্য ফল দেয়। অন্য ওষুধকেও ছাড়িয়ে যায়। এই হল রহস্য। যার সুষ্ঠু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজও অধরা।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথি নিয়ে সন্দেহ
উত্তর: অনেকেই সন্দেহ করেন যে, হোমিওপ্যাথিতে রোগ সারে মনের কারণে, আর হোমিওপ্যাথি কৃতিত্ব নিতে চায়। হোমিওপ্যাথি একটা বুজরুকি। এটাকে আইন করে বন্ধ করা দরকার। কিন্ত দু’শো বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের রোগারোগ্যের অস্ত্রকে এভাবে ফুৎকারে নস্যাৎ করা যায় না, বিশেষ করে হোমিওপ্যাথি যখন শিশু, পশু এবং উদ্ভিদেরও উপকারে আসে, যেসব ক্ষেত্রে ‘এটা খেলেই আমি সেরে যাব’ এরকম মননের কোনও ব্যাপার থাকে না। এছাড়া আরও অন্যান্য যুক্তির সাহায্যে মানসিক তত্ত্বকে খারিজ করা যায়। কিন্তু, আসল প্রয়োজন হল দুটি মৌলিক প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর।
প্রশ্ন: দুটি মৌলিক প্রশ্ন
প্রশ্ন দুটি হল: ১. অতিমাত্রায় লঘুকৃত একটা ওষুধ কীভাবে অন্যটার থেকে আলাদা হয়। ২. এদের ভেষজগুণের চাবিকাঠিটা কোথায়, অর্থাৎ কীভাবে রোগ সারায়।
দুশো বছর ধরে কোটি কোটি রোগীর ক্ষেত্রে নিদানিক সাফল্য সত্ত্বেও এই দুটো মৌলিক প্রশ্নের সদুত্তরের অভাবে হোমিওপ্যাথি আজও বৈজ্ঞানিক তো বটেই এমনকী ইপ্সিত সামাজিক স্বীকৃতিও পায়নি। বর্তমান কালের নিদানিক সাফল্যের পরিসংখ্যান এই মৌলিক প্রশ্নগুলোকে পাশ কাটিয়ে যায়। ফলে, স্বীকৃতিও এদের পাশ কাটিয়ে যায়। তাই এটা পরিষ্কার যে, প্রশ্নগুলোর সদুত্তর ছাড়া এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর
উত্তর: এটা লক্ষ্য করার বিষয় যে, অতি লঘুকৃত ওষুধগুলো রাসায়নিক বিচারে জল ছাড়া আর কিছু না হলেও এরা কিন্তু জীবদেহে কাজ করে মূল ভেষজ ও তার পোটেন্সি অনুসারে। যেমন, নেট্রাম মিউর-৩০সি ও নেট্রাম সালফ-৩০সি পৃথক পৃথক ফল দেয়। সাইলিসিয়া-৩সি এবং সাইলিসিয়া-২০০সি পৃথকভাবে কাজ করে। তাই এটা বলা যায় যে, ‘কিছু একটা’ ব্যাপার এদের পৃথক করে। এখন কথা হল কী সেই ‘কিছু একটা’। কোনও উদ্ভট তত্ত্বের আমদানী না করেও যদি দেখা যায় যে জলের এমন কোনও ক্ষমতা আছে যার দ্বারা সে মূল ভেষজ ও তার পোটেন্সি জ্ঞাপক বার্তাকে কোনও আণবিক কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের দ্বারা ধরে রাখতে পারে, তাহলে জলের বিভিন্ন আণবিক অবস্থাকে সেই ‘কিছু একটা’ বলে চিহ্নিত করা যায়। জলের তিনটি অসামান্য গুণ এই কাজটি করতে সক্ষম। গুণ তিনটি হল—(১) স্বাভাবিক তাপমাত্রায় জলের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বরফখণ্ড বা কেলাস ভাসতে দেখা যায়। (২) যাদের কাঠামো অসংখ্য প্রকারের হতে পারে এবং (৩) আকারপ্রকার বিভিন্ন রকমের বস্তুকণা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
এখানে একটা কথা বলা দরকার যে, জলের এই সব গুণের পরিচয় পাওয়া গেছে ১৯৬৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে।
এর থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, হোমিওপ্যাথির অতি লঘুকৃত বস্তুগুলো রাসায়নিক বিচারে জল ছাড়া আর কিছু না হলেও আণবিক কাঠামোর দিক থেকে এরা একে অন্যের থেকে পৃথক। এখন দেখতে হবে এদের কোনও ভেষজ গুণ আছে কি না।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর
উত্তর: জলের আণবিক কাঠামো ভেষজ ও তার পোটেন্সিভিত্তিক, আর জৈব অণুর গঠন বিভিন্ন কারণে একটু-আধটু পালটাতে পারে, কিন্তু সেটা বেশি হয়ে গেলে সেটা তার রুগ্ণ অবস্থা সূচিত করে। এছাড়াও জলের আর একটি অসামান্য ধর্মের কথা আমাদের বোধের মধ্যে রাখতে হবে। সেটা হল—সব জৈব অণুই জলের অণুদের ফাঁকে ফাঁকে খাপ খেয়ে যায়, তা জল তরল বা কঠিন যে অবস্থারই হোক না কেন। এটা না হলে ফ্রিজে খাবারদাবার সংরক্ষণ করা যেত না। পক্ষান্তরে, যখন কোনও অণু জলের অণুদের ফাঁকে ফাঁকে খাপ খায় না তখন জল জমে বরফ হওয়ার সময় ওই অণুগুলোকে গুঁড়িয়ে দেয় এবং জলের বাইরে বার করে দেয়। এ জন্যই উত্তর মহাসাগরের বরফ লবণমুক্ত। অতএব, জলীয় অণু উপযুক্ত আকৃতির হলে তারা চাপ দিয়ে একটু-আধটু পালটে জৈব অণুর আকৃতিকে তাদের সুস্থস্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে, যদি আকৃতির গরমিল তেমন বড় মাপের না হয়। বাস্তবেও দেখা যায় যে, ছোট ছোট বরফের কেলাসের সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত জৈব অণুদের সারিয়ে তোলা যায়।
কাঠামোর মিল এবং ছাঁচ-নীতি জীবের বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে একথা জীববিজ্ঞানে আজ সুবিদিত। স্বাস্থ্য রক্ষা তথা রোগ আরোগ্যে জলের আণবিক কাঠামোর মাধ্যমে এই নীতির ভূমিকা থাকা খুবই স্বাভাবিক। এও দেখা যায় যে, রুগ্ণ জীবকোষের অন্তর্গত জলের ছাঁচ/ কাঠামোগুলো জৈব অণুদের রুগণ ছাপ গ্রহণ করে ভাঙাচোরা অবস্থা পায়। বিপরীতভাবে, আকৃতির গরমিল তেমন বড় মাপের না হলে জলের উপযুক্ত ছাঁচ বা কাঠামো যে রুগণ ঩জৈব অণুদের চাপ দিয়ে তাদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে এর মধ্যেও কোনও অস্বাভাবিকতা নেই।
সিদ্ধান্ত
উত্তর: এ থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, অতি লঘুকৃত ওষুধের ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষভাবে গঠিত জলের আণবিক ছাঁচ/ কাঠামোই ওষুধের আসল রূপ। আর নিম্ন শক্তির ওষুধে তো জল ছাড়াও মূল রাসায়নিক বস্তুর ছাঁচ বা কাঠামো থাকছেই। ফলে, কাঠামোগত মডেলের সংজ্ঞা দাঁড়ায়: রোগ নিরাময়ের ক্ষমতাযুক্ত বস্তুই ওষুধের মান্যতার অধিকারী এবং জলের বা অন্য কোনও রাসায়নিক বস্তুর আণবিক ছাঁচ বা কাঠামোই তার ভেষজগুণের উৎস।
প্রশ্ন: আরও কিছু
উত্তর: উপরের বৈজ্ঞানিক তথ্য ছাড়াও কয়েকটি সাধারণ ব্যাপারও কাঠামোগত মডেলকে সমর্থন করে। যেমন, রাসায়নিক ফর্মুলাই যদি ওষুধ নির্ণয় করত, তাহলে কার্বোএনিমেলিস এবং গ্রাফাইটিস দুটো আলাদা ওষুধ হত না, কারণ রাসায়নিক বিচারে দুটোই কার্বন। এদের পার্থক্যের উৎস হল, এদের আণবিক বিন্যাসের পার্থক্য। এক্স-রে নামক ওষুধটি গোড়া থাকেই রাসায়নিক পরিচয়বিহীন। জলের ওপর আরোপিত আণবিক বিন্যাস ছাড়া অন্য কিছুই এর ভেষজ গুণের উৎস হতে পারে না। প্রখর তাপে বা সূর্যালোকে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হয়ে যায়। এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এই হতে পারে যে, তাপের প্রভাবে পরিচয় বহনকারী ছাঁচ বা কাঠামোগুলো গলে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটায়। সংরক্ষণকারী বস্তু (যেমন, সুরাসার) ছাড়া কেবলমাত্র জলে গুলে দেওয়া শক্তিকৃত ওষুধের গুণ তিন-চার দিনের বেশি থাকে না। কারণ, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, জলের অন্তর্গত কেলাসগুলো দীর্ঘদিন থাকে না, আপনাআপনি ভেঙে যায় এবং আবার নতুনভাবে গড়ে ওঠে।
সাধারণক্ষেত্রেও কাঠামোগত ধারণা যে বৈধতা পেতে পারে তার যেন একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এটা সুবিদিত যে ব্যাকটেরিয়াকে মারার ব্যাপারে অ্যান্টিবায়োটিক যে নীতিতে কাজ করে, তা কাঠামোকে অবলম্বন করেই। ব্যাকটেরিয়ার বিশেষ অংশে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের অণু কাঠামোগতভাবে তালার সঙ্গে চাবির মতো আটকে যায় এবং তার জৈব ক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে। জলের আণবিক কাঠামোরও এই ধরনের ভূমিকা থাকা স্বাভাবিক। সাধারণত রাসায়নিক দৃষ্টিতেই ওষুধের ব্যাখ্যা করা হয়। হোমিওপ্যাথি আমাদের বাধ্য করে কাঠামোগত দৃষ্টিকোণ থেকে ওষুধকে বোঝার জন্য। হয়তো একদিন কাঠামোগত দৃষ্টিকোণ থেকেই সমস্ত ওষুধকে বোঝার দিন আসবে।