ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক হতে পারে। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কীভাবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দর-কষাকষি ও আলোচনা করতে পারে।
প্রথম আলোসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের গ্রুপ প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) অ্যান্ডি হ্যালফোর্ড। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের গ্রুপ সিএফও হিসেবে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। গত বুধবার ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা ও ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে এ সময় অ্যান্ডি হ্যালফোর্ড বলেন, ‘আমি মনে করি না রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাত আলাদা কোনো ভাবমূর্তির সংকটে পড়বে। কারণ আর্থিক খাতে সাইবার হামলার বিষয়টি এখন নির্দিষ্ট একটি বা দুটি দেশের বিষয় নয়, এটি একটি বৈশ্বিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
অ্যান্ডি হ্যালফোর্ড বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আয় কমে যাওয়ায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে গত বছর থেকে একটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ফেরানো, আর্থিক ঝুঁকি কমানো, ব্যবস্থাপনা কাঠামোর উন্নয়ন ও সহজীকরণ এবং সম্ভাবনাময় খাতে বেশি করে বিনিয়োগ করা। ব্র্যান্ড হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের (এসসিবি) একটি সুনাম রয়েছে। এটি তাদের অন্যতম লাভজনক একটি ইউনিট। এসসিবির মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের গ্রুপের আয় বাড়ানোই তাঁর এ সফরের লক্ষ্য।
ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের টানা দরপতন হচ্ছে। এমন অবস্থায় যুক্তরাজ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যান্ডি হ্যালফোর্ড বলেন, রাজনৈতিক কারণে একটি দেশের পরিস্থিতি একেক সময় একেক রকম হয়। ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যও এখন তেমন একটি ভিন্নরকম সময় অতিক্রম করছে। এ পরিবর্তন দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে একটি বড় প্রভাব ফেলছে এবং এতে পাউন্ডের বিনিময় হারে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিরতা বিরাজ করবে বলে মনে হচ্ছে।
ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যকে এখন আমদানি-রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হবে বলে উল্লেখ করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে। আলাপ-আলোচনা ও দর-কষাকষির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখান থেকে আরও বেশি লাভবান হতে পারে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে যোগ দেওয়ার আগে ১৫ বছর বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভোডাফোনে কাজ করেছেন অ্যান্ডি হ্যালফোর্ড। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার প্রসারে ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং অপারেটরদের ভূমিকা সম্পর্কে অ্যান্ডি হ্যালফোর্ড বলেন, ব্যাংকগুলোকে মনে রাখতে হবে, মোবাইল ফোন ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের গ্রাহকের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছানো সম্ভব নয়। আবার একইভাবে অপারেটররাও আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। এ সেবায় দুই পক্ষই একে অপরের পরিপূরক।
সম্প্রতি বহুজাতিক কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম ছোট করছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে অ্যান্ডি হ্যালফোর্ড বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছি। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মূল বাজারের একটি। এসসিবির কার্যক্রম এ দেশের মানুষদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে, যেটি এ বাজারে অন্য বহুজাতিক ব্যাংকের তুলনায় আমাদের এগিয়ে থাকার মূল কারণ। অনেক বেশি দেশে উপস্থিতির কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কাছ থেকে যে ধরনের সেবা ও পরামর্শ পান সেটি অন্য ব্যাংকের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এসসিবির আর্থিক কার্যক্রম নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট।’