বিভিন্ন ইসলামীক মাসলা-মাসায়েল
জীবন জিজ্ঞাসা : এ সংখ্যার উত্তর দিয়েছেন : মুফতি সাহেব, মারকাজুল ইসলাম
রশ্ন : অনেক সময় মাদরাসার হুজুরদেরকে যাকাতের টাকা কালেকশনের সময় যাকাতদাতা পৃথকভাবে কিছু টাকা হাদিয়া দেয়। উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করা জায়িয আছে কিনা?
উত্তর : না, উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে না। তবে যদি তাদের মাঝে পূর্ব থেকে হাদিয়ার আদান প্রদান হয়ে থাকে, তাহলে গ্রহণ করা যাবে। তথাপি গ্রহণ না করাই উত্তম। [সহীহ বুখারী : ২/১০৬৪, সহীহ মুসলিম : ২/১২৩, ফাতহুল কাদীর : ৬/৩৭১, আদ-দুররুল মুখতার : ৮/৪৯, ইমদাদুল মুফতিয়ীন : ৮৮৩ পৃ:]
খালেদ, ঢাকা।
প্রশ্ন : এক লোক এক লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখে। পাঁচ বছর পর মুনাফাসহ এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা পায়। মুনাফা বাবদ প্রাপ্ত এ পঞ্চাশ হাজার টাকার যাকাত দিতে হবে কিনা?
উত্তর : বর্ণিত ৫০ হাজার টাকার পুরোটাই সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া যাকাতের হকদারদের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে। নিজে ভোগ করা জায়িয হবে না। অতএব এর যাকাত প্রদানের প্রসঙ্গ রইলো না। [আদ্-দুররুল মুখতার : ৩/২১৮, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/২৮৯, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া আলা হামেশে হিন্দিয়া : ৪/৮৬, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৮৩, ইমদাদুল মুফতিয়ীন : ২/১৫]
ছাইফুল ইসলাম, চাঁদপুর।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তির হাতে মাদরাসার গোরাবা ফান্ডের কিছু টাকা ছিলো। এক সময় বিশেষ প্রয়োজনে তিনি সেই টাকা ব্যক্তিগত কাজে খরচ করে ফেলেন। অবশ্য পরবর্তীতে তা দিয়ে দিয়েছেন। এভাবে ব্যক্তিগত কাজে গোরাবা ফান্ডের টাকা ব্যায় করাতে তার গুনাহ হয়েছেকিনা?
উত্তর : গোরাবা ফান্ডের টাকা ব্যক্তিগত কাজে লাগানো জায়িয নেই। যতো দ্রুত সম্ভব তা গরীবদের দিয়ে দেয়া চাই। কাজেই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি গুনাহগার হয়েছে। ভবিষ্যতে আর এমনটি করবে না। [আদ-দুররুল মুখতার : ৩/১৮৮, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ২/৮৯১, খুলাছাতুল ফাতাওয়া : ১/২৪৪]
আব্দুল আউয়াল, নারায়ণগঞ্জ।
প্রশ্ন : মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?
উত্তর : সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হলো, কাযী বা বিচারকের সামনে সাক্ষী সশরীরে উপস্থিত থাকা। তাই ফোনে সাক্ষ্য দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। [জাদীদ ফিকহী মাসায়িল : ১/৪৫২, আদ-দুররুল মুখতার : ৫/৪৬১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৩/৪৫, আল-বাহরুর রায়িক : ৭/৫৬, ফাতহুল কাদীর : ৬/৪৪৬]
আনিছুর রহমান, পাবনা।
প্রশ্ন : হাদিসে সকাল-বিকাল পড়ার ব্যাপারে যে সকল যিকির বর্ণিত আছে, সেগুলো সকাল বিকাল কোন সময় পড়তে হবে?
উত্তর : হাদিসে বর্ণিত সকালে পড়ার যিকির সমূহ ফজরের পর থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত। আর বিকালে পড়ার যিকির সমূহ যোহরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পড়ার অবকাশ আছে। তবে উত্তম হলো, ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সকালের যিকির সমূহ পড়ে নেয়া। আর আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিকালের যিকির সমূহ পড়া। তবে যেসব দু’আ ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর পড়ার কথা হাদিসে উল্লখ আছে, সেগুলো উল্লিখিত সময়েই পড়তে হবে। [আল আযকার লিন্-নববী : পৃ.৭১,রিয়াযুস সালিহীন : ৩৪৭, তাফসীরে রূহুল মা‘আনী : ১০/১৭৬, কাওয়ায়িদুল ফিক্হ : পৃ: ৩৪৬, পৃ.৪৮১, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : পৃ.৩৫৪, ৫৬৪]
শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন : যে কোনো এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরণকারী এবং অস্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তির লাশের পোষ্টমর্টেম করা সরকারী আইনে জরুরি। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, এটা জায়িয আছে কিনা?
উত্তর : শরী‘আতে পোষ্টমর্টেম করার অনুমতি নেই। তদন্তের প্রয়োজনে অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে, পোষ্টমর্টেম নয়। [সুরা বনী ইসরাঈল : ৭০, নিজামুল ফাতাওয়া : ১/৪১৩, আবু দাউদ : ২/১০২, আওযাযুল মাছালিক : ২/৫০৭, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ৬/৩৫৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৮/৩৩৮]
রহমত উল্লাহ, ঢাকা।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি উত্তর দিকে ফিরে পেশাব করে পশ্চিম দিকে ফিরে পানি ব্যবহার করেছে। এভাবে পশ্চিম দিকে ফিরে পানি ব্যবহার করা জায়িয আছে কিনা?
উত্তর : হাজত পূর্ণ করার পর পশ্চিম দিকে ফিরে পানি ব্যবহার করা বেয়াদবী। তাই তা পরিহার করবে। [আদ-দুররুল মুখতার : ১/৫৫৪, মুনইয়াতুল মুসল্লী : ১/১১, আল-বাহরুর রায়িক :১/২৪৩, গুনইয়াতুল মুতামাল্লী : ১/৩৮, কিতাবুল ফিকহী আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ : ১/৮৮, বাদরুল মুত্তাকী বিহামেশি মাজমায়িল আনহুর : ১/৬৭]
আসমা, গাইবান্ধা।
প্রশ্ন : ৪/৫ মাস গর্ভধারিনী স্ত্রীর পেটে তার স্বামী আঘাত করে। ফলে তার পেট থেকে শুধু হাত পা বিশিষ্ট সন্তান প্রশব হয়ে যায়। এতে মহিলার রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এ অবস্থায় উক্ত রক্ত নিফাস হিসেবে গণ্য হবে নাকি এস্তেহাযা?
উত্তর : নিফাস হিসাবে গণ্য হবে। [আল-হিদায়া : ১/৭০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৩৭, তাবয়ীনুল হাকায়িক : ১/৬৭, আল-বাহরুর রায়িক : ১/৩১৮, ফাতাওয়া তাতারখানিয়াহ : ১/৩৯২]
তরিকুল ইসলাম, লাকসাম।
প্রশ্ন : অনেকে মুরব্বী এবং সম্মানী লোকদের পায়ে হাত বুলিয়ে হাতে চুমু খায়। এটা কতোটুকু শরী‘আত সম্মত জানাবেন।
উত্তর : কোনরূপ বদ আকিদা ও ভিন্ন মতাদর্শের বশবর্তী হওয়া ব্যতীত মুরব্বী বা সম্মানী লোকদের পায়ে হাত বুলিয়ে হাতে চুমু খাওয়া জায়িয আছে। খেয়াল রাখতে হবে, পায়ে হাত বুলানোর সময় যেন রুকূ এবং সিজদার সূরত না হয়ে যায়। তথাপি আকিদাগত ফিতনা ও বিভ্রান্তির এযুগে এরূপ করবে না। [আদ-দুররুল মুখতার : ২/৩৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৬৯, আল-বাহরুর রায়িক : ৮/১৯৮, কিফায়াতুল মুফতী : ৯/১১৫, ফাতাওয়া রশীদিয়া : ১৬৯]
হাবিবুর রহমান, বরগুনা।
প্রশ্ন : যেসব মুসলিম শাসকদের মাঝে ইসলামী আদর্শ নেই, তাদেরকে খলীফাতুল মুসলিমীন বা শুধু খলীফা বলা যাবে কিনা?
উত্তর : ইসলামী পরিভাষায় যেসব গুণাগুণ থাকলে কোন শাসককে খলীফাতুল মুসলিমীন বা আমীরুল মুমিনীন বলা যায়, বর্তমান মুসলিম শাসকদের মধ্যে সেসব গুণাগুণ নেই। তাই তাদেরকে ইসলামী পারিভাষিক উপাধি খলীফাতুল মুসলিমীন বা আমিরুল মুমিনীন বলা যাবে না। [ইযালাতুল খাফা আন খিলাফাতিল খুলাফা : ১/১৯, তাফসীরে ইবনে কাছীর : ১/৭২, তাফসীরে মাযহারী : ১/৪৯, তাফসীরে খাযিন : ১/৪২]
আল আমীন, গাজিপুর।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে কুরআনে কারিমের ত্রিশতম পারাটি আম্মাপারা নামে পৃথকভাবে ছাপানো পাওয়া যায়। এটি কুরআন শরিফের তারতীবে ছাপা হয়নি; বরং সম্পূর্ণ বিপরীত তারতীবে ছাপা হয়েছে। আর মকতবে বাচ্চাদেরকে এই আম্মাপারাই পড়ানো হয় এবং কুরআনে কারিমের বিপরীত তারতীবে পড়ানো হয়। এব্যাপারে শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গী কি?
উত্তর : বাচ্চাদের শিক্ষার সুবিধার্থে এভাবে ছাপানো এবং পড়ানো দুটিই জায়িয আছে। তবে তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে উল্টোভাবে পড়ার অনুমতি নেই। [আদ-দুররুল মুখতার : ১/৫৪৬, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ১/৬৯৬, ফাতাওয়া রাহীমিয়া : ১/১৯-২০, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১/১৩-১৭, আহছানুল ফাতাওয়া : ৮/১৭]
মোবারক হোসেন, নেত্রকোণা।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তির জানা আছে সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সে প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর হাটতে হাটতে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে। এসময় অনেকে তাকে সালাম দেয়। সালামের জওয়াব দিতে গেলে তিলাওয়াতের ব্যাঘাত ঘটে। এ অবস্থায় সালামের উত্তর দেওয়া জরুরি কিনা?
উত্তর : না, তিলাওয়াতকারীর উপর সালামের উত্তর দেওয়া জরুরি নয়। [ফাতাওয়া শামী : ১/৬১৮, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ৩/৫৭৮, আল-বাহরুর রায়িক : ২/৯, তাবয়ীনুল হাকায়িক : ১/৫৭]
রফিকুল ইসলাম, তুরাগ, ঢাকা।
প্রশ্ন : শুনেছি মসজিদের উপরতলার প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর চেয়ে নীচতলার শেষ কাতারে দাঁড়ানোর সাওয়াব বেশি। কথাটি সঠিক কিনা জানাবেন।
উত্তর : হ্যাঁ, আপনার শ্র“ত কথাটি সঠিক। [আদ-দুররুল মুখতার : ১/৫৬৯-৫৭০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৭৯, আল-বাহরুর রায়িক : ১/৩৫৪, হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ : পৃ. ১২৮]
বেলাল হাওলাদার, নীলফামারী।
প্রশ্ন : যদি কেউ অতি বৃদ্ধ হওয়ার দরুণ নিজের শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তার জন্য করণীয় কি?
উত্তর : এ অবস্থায় সে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মাধ্যমে পরিষ্কার করে নিবে। আর যদি স্ত্রী না থাকে বা স্ত্রীও যদি অক্ষম হয়, তাহলে বর্তমানে বাজারে যে সব লোমনাশক ক্রীম, জেলী ইত্যাদি পাওয়া যায়, এসব ব্যবহার করে পরিষ্কার করে নিবে। [বাদায়িউস সানায়িউ : ৫/১১৯, ফাতাওয়া শামী : ৯/৫৪৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৫৮, আল মুহীতুল বুরহানী : ৬/৭০, আল-বাহরুর রায়িক : ৮/১৯২]
আব্দুল কাদির, শেরপুর।
প্রশ্ন : রাস্তা ঘাটে অনেক ভেল্কিবাজ ভেল্কির খেলা দেখায়। এসব দেখা জায়িয কিনা জানাবেন।
উত্তর : না, এসমস্ত ভেল্কিবাজী দেখা জায়িয নেই। [সূরা লুকমান : ৬, মুকাদ্দিমাতু দুররিল মুখতার : ১/১২৭, ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৯০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৫২, আল-হিদায়া : ৪/৪৭৫, ফাতাওয়া রহীমিয়া : ৭/২৭৭]
বিলকিস আকার, নেত্রকোণা।
প্রশ্ন : গোবর বা নাপাক বস্তু থেকে সৃষ্ট গ্যাস অথবা সরাসরি শুকনো গোবর দিয়ে রান্না করা বস্তু খাওয়া যাবে কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, যাবে। [আল-মুহীতুল বুরহানী : ৭/৩০২, আল-হিদায়া : ৪/৪৬৮, আদ-দুররুল মুখতার : ৯/৫৫২, বাদায়িউস সানায়ি’ : ১/১৯৭]
আব্দুর রাজ্জাক, নাটোর।
প্রশ্ন : কেউ যদি চল্লিশ দিন পর্যন্ত ক্ষুরকার্য না করে, তাহলে তার নামায হবে কি না?
উত্তর : চল্লিশ দিন ক্ষুরকার্য না করার কারণে নামাযে কোনো ক্ষতি হবে না। তবে এমনটি করা মাকরূহে তাহরীমী। তাই এজন্য তার কঠিন গুনাহ হবে। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৫৭, ফাতাওয়া শামী : ২/১৮১, মাজমাউল আনহুর : ২৫৫৬, আল-মুহীতুল বুরহানী : ২১৩]
আক্তার হোসেন, নেত্রকোণা।
প্রশ্ন : হিফজ বিভাগের একজন শিক্ষক ছোট এক ছাত্র দুষ্টুমি করায় শাসনের উদ্দেশ্যে কয়েকটি হালকা বেত্রাঘাত করেন। ঘটনাক্রমে একটি বেত্রাঘাত গলায় লাগে। এতে সে সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়া হলে সে সেখানে মারা যায়। এমতাবস্থায় উক্ত শিক্ষকের উপর দিয়াত আসবে কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, বর্ণিত অবস্থায় শিক্ষকের উপর দিয়াত ওয়াজিব হবে। [ফাতাওয়া শামী : ৪/৬৪৯, ফাতহুল কাদীর : ৫/১১৯, কিতাবুল ফিকহি আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ : ৫/২৫৮, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ৬/৩১১]
জয়নুল আবেদীন, রাঙ্গামাটি।
প্রশ্ন : যেসব লোক উলামায়ে কিরামের সমালোচনা করে, গালিগালাজ করে, তাদেরকে সালাম দেয়া তাদের সালামের উত্তর দেয়া যাবে কিনা?
উত্তর : শরয়ী কোনো কারণ ব্যতীত উলামায়ে কিরামকে গালমন্দকারী ফাসিক। এতে কোনো সন্দেহ নেই। বরং এতে তার ঈমান চলে যাওয়ারও সমূহ আশংকা রয়েছে। কাজেই তার প্রতি শ্রদ্ধা বা সম্মান প্রদর্শন হয় এমন যে কোনো কাজ করা মাকরূহে তাহারীমী। কেননা তারা কেবল লাঞ্ছনা বঞ্চনা আর অপমান পাওয়ার যোগ্য। আর ফাসিককে সালাম দেয়া তাকে সম্মান প্রদর্শনের নামান্তর। তাই উলামায়ে কিরামের গালমন্দকারীকে সালাম দেয়া মাকরূহে তাহরীমী। এমন ব্যক্তি সালাম দিলে তার উত্তর দেয়াও জরুরি নয়। [আদ-দুররুল মুখতার মাআ ফাতাওয়া শামী : ৬/৪১৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ২/২৭০; ২/৩২৬, আল-বাহরুর রায়িক : ১২৩/৫, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ৭/৪১৪]
নূরুল হুদা, পাবনা।
প্রশ্ন : একসাথে ৮/৯ টি ডিম সিদ্ধ করা হয়। পাত্র থেকে ডিম উঠানোর পর জানা যায়, দুইটি ডিম নষ্ট ছিলো। এখন বাকী ডিমগুলো একসাথে সিদ্ধ হওয়ার দরুণ খেতে কোন সমস্যা আছে কিনা?
উত্তর : বর্ণিত অবস্থায় ভালো ডিমগুলো ফাটা না হলে তা খেতে কোনো সমস্যা নেই। তবে সব সময়ই ডিম সিদ্ধ করার পূর্বে তা পঁচা কিনা দেখে নিবে। [আদ-দুররুল মুখতার : ১/৫৪৪, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১/৩১২, ফাতহুল কাদীর : ১/১৮৫, আল-মুহীতুল বুরহানী : ১/২২৭, কিতাবিল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ : ১/২৩]
মুহাম্মদ যুবায়ের, দিনাজপুর।
প্রশ্ন : দ্বীনের ব্যাপারে পরামর্শ করা ফরয। আর দুনিয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করা মুস্তাহব। কথাটি কতোটুকু সঠিক?
উত্তর : কুরআনে কারিম ও পবিত্র হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় যে, এমন বিষয় যেখানে ভিন্ন ভিন্ন রায় বা মতামতের সম্ভাবনা রয়েছে, চাই তা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হোক বা অন্য কোনো ব্যাপারে হোক সেক্ষেত্রে পরস্পরে পরামর্শ করা হুজুর সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. এর সুন্নাত। এতে দুনিয়া ও আখিরাতে বরকতও লাভ হয়। আর যে বিষয় জনসাধারণের সাথে সম্পৃক্ত যেমন রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয় সেক্ষেত্রে পরামর্শ করা ওয়াজিব।
একটি বিষয় জেনে রাখা জরুরি যে, পরামর্শ শুধু এমন ক্ষেত্রেই সুন্নাত যে ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের স্পষ্ট কোনো নির্দেশ নেই। যেখানে স্পষ্ট শরয়ী হুকুম রয়েছে, সেখানে কারো সাথে পরামর্শের প্রয়োজন নেই। এমনকি তা জায়িযও নেই। পরামর্শ শুধু দুনিয়াবী ব্যাপারে নয় বরং যে শরয়ী আহকামের ব্যাপারে ইসলামী শরীআতে স্পষ্ট বিধান নেই সে সবের বেলায়ও পরামর্শ করা সুন্নাত। [মূল : তাফসীরে কুরতুবী : ৪/২৫০-২৫১, মাআরিফুল কুরআন : ২/২১৯-২২০, আহকামুল কুরআন : ২/৬৫-৬৮, মাআরিফুল কুরআন : মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. : ২/২১৯-২২০, মাআরিফুল কুরআন : মাওলানা মুহাম্মদ ইদরীস কান্ধালবী রহ. : ২/৭৮, তাফসীরে ইবনে কাছীর : ১/৩৯৭]
শাখাওয়াত, মাগুরা।
প্রশ্ন : কোনো এলাকার জনৈক মাওলানা সাহেব বলেছেন, সকাল-বিকাল সুরায়ে হাশরের শেষের তিন আয়াত তিলাওয়াত করার সময় তিন বার
পড়ে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। একথাটি সঠিক কিনা দলীলসহ জানতে চাই।
উত্তর : না, সঠিক নয়। কেননা, যে হাদিসে সকাল-বিকাল সুরায়ে হাশরের শেষের তিন আয়াত পড়ার কথা বলা হয়েছে, সে হাদিসে এর পর বিসমিল্লাহ পড়ার কথা উল্লেখ নেই। [তাফসীরে ইবনে কাছীর : ৪/৩৪৪, তিরমিযী : ২/১২০, তাফসীরে রুহুল মা‘আনী : ১৪/৬৪, তাফসীরে মাযহারী : ৯/২৫৭]
আব্দুর রহীম, ঢাকা।
প্রশ্ন : ক্রামবোর্ড খেলার ব্যাপারে শরয়ী বিধান কি?
উত্তর : ক্রামবোর্ড খেলা নাজায়িয। [আদ-দুররুল মুখতার : ৯/৫৬৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৫২, ফাতহুল কাদীর : ৮/৮৯৪, বাদায়িউস সানায়ি’ : ৫/১২৭, আল-বাহরুর রায়িক : ৮/২০৭, আপ কে মাসায়িল আওর উনকা হল : ৪/৩২৯, আল-ফিককুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ৩/৫৭১]
আব্দুস সাত্তার, সাতক্ষীরা।
প্রশ্ন : যদি কারো দাঁত স্বর্ণ বা রূপা দ্বারা বাঁধাইকৃত হয়, তবে মৃত্যুর পর তা খুলে দাফন করতে হবে কিনা?
উত্তর : যদি দাঁত মুখ থেকে বের করা কঠিন হয় এবং এর কারণে মৃত ব্যক্তির অসম্মানী হয়, তাহলে সেটি সহই দাফন করবে। অন্যথায় খুলে রেখে দাফন করবে। [আদ-দুররুল মুখতার : ২/২৩৮, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ : ২/৫২৯, ফাতহুল কাদীর : ২/১০২, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৪১]
জাকির, কুমিল্লা।
প্রশ্ন : আমার তাবীজের উপর আরবী অক্ষরে আল্লাহ লেখা রয়েছে, তা গলায় ঝুলিয়ে পড়তে হয়। এখন যদি আমি উক্ত তাবীজ নিয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় কাপড়ের নীচে লুকিয়ে যাই, তাহলে কোনো সমস্যা হবে কিনা?
উত্তর : না, এতে কোনো সমস্যা হবে না। তবে তা খুলে রেখে যাওয়াই উত্তম। [হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ : ফ. ৩, মিশকাত শরীফ : ১/৪২, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ১/২০২, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫০, মিরকাতুল মাছাবীহ : ১/৩৫৩]
রফিকুল হক, বাগেরহাট।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি প্রতি বছর তার পিতার মাগফিরাত কামনায় ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে ফকীর-মিসকীন ও আলিম-উলামাদের জন্য দাওয়াতের আয়োজন করে। তবে তা তার পিতার মৃত্যুর তারিখে না করে একদিন আগে বা পরে করে। এভাবে ইসালে সাওয়াবের অনুষ্ঠান করা জায়িয হবে কিনা?
উত্তর : মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্য কোনো দিন তারিখ জরুরি মনে না করে গরীব-মিসকীনদের খাওয়ানো যাবে। এমনকি মাইয়িতের মাগফিরাতের জন্য মাঝে মাঝে এ ধরনের খাওয়ানো ভালো। তবে ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করে বিনিময় লেনদেন করা নাজায়িয ও হারাম। তাই তা করবে না। [ফাতাওয়া শামী : ৩/১৪৮, আল-বাহরুর রায়িক : ২/১৯২, বাদরুল মুত্তাকী লি হামিশে মাজমায়িল আনহুর : ১/১৮৭]
রিজওয়ান আহমেদ, ভোলা।
প্রশ্ন : এক স্থান হতে অন্য স্থানে ডাক যোগে কুরআন শরিফ পাঠালে গুনাহ হবে কিনা জানাবেন।
উত্তর : প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যথাযথ ইহতিরামের সাথে ডাক যোগে কুরআন শরিফ পাঠালে কোনো গুনাহ হবে না। তবে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কুরআন শরিফ ডাকে পাঠাবে না। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/২২৩, ফাতাওয়া বাযাযিয়াহ আলা হামিশিল হিন্দিয়া : ৬/৩৭৭, ফাতাওয়া খানিয়াহ : ৪/৩৭৮, আল মুহীতুল বুরহানী : ৭/৫০]