সোমেশ্বরীর পানি এত ঠান্ডা কেন?

Author Topic: সোমেশ্বরীর পানি এত ঠান্ডা কেন?  (Read 1374 times)

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
নদীর নাম সোমেশ্বরী। আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম নদীর তীরে। তীর ছেড়ে পা ফেললেই ধু ধু বালুচর। চরের পর নদীর পানি চিকচিক করছে রোদের আলোয়। সূর্যের উত্তাপ টের পেলাম বালুচরে পা রেখেই! শুধু গরম বললে ভুল হবে, তপ্ত উনুনে পা রাখার শামিল! তবে খানিক বাদেই আমাদের জন্য যে এত প্রশান্তি অপেক্ষা করছে, সেটা কে জানত?

বিরিশিরি ছেড়ে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল রানিখং এলাকায়। সেখানে গারোদের একটা স্কুল দেখার ইচ্ছা আমাদের। সেই সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের বিজয়পুর সীমান্ত ফাঁড়িটাও ঘুরে আসার পরিকল্পনা ছিল মাথায়। পাড়ি দিতে হবে সোমেশ্বরী নদী। তাই অমন তপ্ত বালুতে পা রাখা। এই তো আর কিছু দূরেই সোমেশ্বরী। কিন্তু পা রাখাই যে দায়! যাওয়া যাবে তো নদীর বুকে? আমাদের দলের বাকিরা হলেন ইকবাল, আসাদ ও জোবায়ের। এরা সবাই মোটামুটি ‘বউ’ সাজে সজ্জিত। মাথায় গামছা দিয়ে ঘোমটা টানা। ধু ধু বালুচর পাড়ি দেওয়ার জন্যই এমন বেশ! তবে যতই এগোচ্ছি, ততই হতাশা দানা বাঁধছে মনে!
চরে থাকতেই নদীর ওপাশে একটা নৌকা চোখে পড়ল। আমাদের পাশ দিয়ে হুঁস করে বালু উড়িয়ে চলে গেল একটা মোটরসাইকেল। তাহলে কি সোমেশ্বরীর বুকে একই সঙ্গে নৌকা আর মোটরসাইকেল চলে? বিশাল এক ধাঁধা বটে!
কিছু দূর যাওয়ার পর সেই ধাঁধার উত্তর মিলল। নদীর ওপাশের খেয়ানৌকাটাই পারাপারের একমাত্র ভরসা। আমাদের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যিনি এলেন, তিনিও নদীর ওপারে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। নদীর আরও খানিকটা সামনে যেতেই দেখা গেল, বুকসমান পানিতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ওপাড়ের একদল শিশু-কিশোর। আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন প্রস্তাব দিল, ‘সোমেশ্বরীতে দুপুরের গোসলটা সেরে নিলে কেমন হয়?’ একবাক্যে রাজি। কিন্তু এত অল্প পানিতে...? এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেটে গেল মিনিট খানেকের মধ্যে।
ঝুপঝাঁপ করে সবাই নেমে পড়লাম নদীর বুকে। নেমেই অবাক। সোমেশ্বরীর পানি অদ্ভুত রকমের ঠান্ডা! মনে হলো মাত্রই ফ্রিজ থেকে পানি এনে ঢেলে দেওয়া হয়েছে নদীতে। মাথার ওপর গনগনে সূর্য, উত্তাপে বাতাসও কাঁপছে! অথচ সোমেশ্বরীর পানি কী দারুণ ঠান্ডা! যেমন ঠান্ডা, তেমন স্বচ্ছ! এমন প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে নামলে সাঁতার না-জানা মানুষও নাইতে চাইবে। তাই ঘণ্টা খানেক চলল আমাদের জলকেলি!
কিন্তু সোমেশ্বরীর বুকে বয়ে চলা এই স্বচ্ছ, ঠান্ডা পানির রহস্য কী? সূর্যের উত্তাপে যখন চারপাশ আগুন-গরম, তখন এই নদীর পানি এত ঠান্ডা থাকে কী করে? ঢাকায় এসে গুগল করে জানা গেল, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতোধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। ১৯৬২ সালে পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে নতুন গতিপথের সৃষ্টি করেছে, যা স্থানীয়ভাবে ‘শিবগঞ্জ ঢালা’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এ ধারাটি সোমেশ্বরীর মূল স্রোতোধারা। এ স্রোতোধারাটি চৈতালি হাওর হয়ে জারিয়া-ঝাঞ্জাইল বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে কংস নদের সঙ্গে মিলেছে।
স্থানীয় লোকজন অবশ্য জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলই মূলত সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ ও ঠান্ডা পানির উৎস। আর স্রোতের কারণে পানি থিতু হওয়ারও সুযোগ পায় না। তবে ভরা বর্ষায় এই পানি এত স্বচ্ছ থাকে না।
এ তো গেল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ব্যাখ্যা। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও নিশ্চয়ই আছে। তবে ব্যাখ্যাট্যাখ্যা নয়, সোমেশ্বরীতে একবার ডুব মানে আপনি এ নদীর প্রেমে আটকে গেলেন! সে কারণেই বারবার যেতে বাধ্য হবেন নেত্রকোনার বিরিশিরিতে।
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University