শেখ হাসিনার শাসনামল (১৯৯৬-২০০০)
দীর্ঘ ২১বছর পর ১৯৯৬ সালের ২৩শে জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষও কারচুপিবিহীন নির্বাচনে ১৪৭টি আসনে জয়যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা দশম এবং দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহন করেন। প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস সংবিধানের ৫৬(২) ধারা বলে বঙ্গবভনের দরবার হলে এক-জাকজমকপুর্ন অনুষ্ঠানে নব-নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবিধান সংরক্ষন, দায়িত্ব পালন এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা সংরক্ষনের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ বাক্য পাঠ করান।
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই শেখ হাসিনা ‘জাতীয় ঐক্যমতের’ সরকার গঠনের দিকে অগ্রসর হন। সেই লক্ষ্যে ১৩জন মন্ত্রী, ১৩ জন প্রতি-মন্ত্রী, এবং জনগনের অফুরান্ত ভালবাসা আর বিশ্বাসকে সম্বল করে সরকার গঠন করেন। তার গঠিত মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দগন হলেন-
১. জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২. জনাব জিল্লুর রহমান-স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রনালয়।
৩. জনাব এস.এম.এস কিবরিয়া- অর্থমন্ত্রনালয়।
৪. জনাব আব্দুর রাজ্জাক-পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়।
৫. জনাব এ. এস. এইচ. কে সাদেক-শিক্ষামন্ত্রনালয়।
৬. লে: জেনারেল (অব:) নুরুদ্দীন খান -–বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়।
৭. মেজর (অব:) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম)- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।
৮. মোহাম্মদ নাছিম- ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়।
৯. বেগম মতিয়া চৌধুরী- কৃষি, খাদ্য, দুযোর্গ ব্যস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়।
১০. জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু- যোগাযোগ মন্ত্রনালয়।
১১. জনাব তোফায়ের আহম্মদ -শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়।
১২. জনাব সালাহ উদ্দিন ইউসুফ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়।
১৩. জনাব আ.স. ম আব্দুর রব-নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়।
প্রতি-মন্ত্রীগনহলেন-
১. জনাব মোজাম্মেল হোসেন-মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়।
২. জনাব ওবায়দুল কাদের-যুব ক্রীয়া, ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়।
৩. জনাব আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার-পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।
৪. মি: ক্ষিতিশ চন্দ্র রায়-মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রনালয়।
৫. আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেন-স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়।
৬. মওলানা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম-ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়।
৭. জনাব আফসার উদ্দিন-গৃহায়নও গনপূর্ত মন্ত্রনালয়।
৮. এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু-আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়।
৯. জনাব এ.কে ফয়জুল হক- পাটমন্ত্রনালয়।
১০. জনাব এম. এ মান্নান-শ্রম ও জন শক্তি মন্ত্রনালয়।
১১. জনাব হাজী রামেদ মোশারফ-ভূমি মন্ত্রনালয়।
১২. অধ্যাপক আবু সাইয়িদ-তথ্য মন্ত্রনালয়।
১৩.
শেখ হাসিনা জাতীয় সরকারে প্রধান বিরোধীদল বি.এন.পিকে যোগদানের আহব্বান করা হলেও তারা তাতে অংশ গ্রহন করতে অস্বীকার করেন। ১৯৯৬ সালের ২২শে আগষ্ট রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ; সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঘোষনা করলে বি.এন.পি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কূট-কৌশলীর নিবার্চন বলে ধূয়া তুলে এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্রহনের অস্বীকৃতি জানায়। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় বিচারপতি সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নিবার্চিত হন।
শেখ হাছিনার নেতৃত্বে তার শাসনামলে স্মরকালের বেশ কিছু সফলতা আসে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ৩০ বছর মেয়াদী ভারতের সাথে ‘গঙ্গা পানি চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর ‘পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়্। চুক্তি মোতাবেক ৩টি জেলা নিয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন এবং পার্বত্য চট্রগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যাষিত’ এলাকা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এই চুক্তি সম্প্রদানের ফলে দীর্ঘদিন পর পাহাড়ী এই-তিন জেলায় শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু বিরোধী দল বি.এন.পি এই চুক্তিকে সংবিধান বিরোধী ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ত্বের জন্য হুমকী হিসাবে আখ্যায়িত করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে কতিথ খাদ্য খারতি কাটিয়ে শেখ হাছিনা সরকার খাদ্যশস্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য স্থীতিশীল রাখতে সমথ্য হন। ফলে জনগনের মনে ভ্রান্ত ধারনা দূরিভূত হয়।
এই শাসনামলে বাংলা ভাষার মযার্দা বৃদ্ধিও লক্ষ্যে কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকদের উদ্দ্যোগে ও আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে ইউনেস্কো টঘঊঝঈঙ (টহরঃবফ হধঃরড়হং বফঁপধঃরড়হধষ ংপরবহঃরভরপ ধহফ পঁষঃঁৎধষ ঙৎমধহরুধঃরড়হ) কর্তৃক একুশে র্ফেরুয়ারীকে ১৯৯৭ সালের ১৭ নভেম্বর আর্ন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস রুপে ঘোষনা করা হয়। ফলে দিবসটি নতুন মাত্রা ও নতুন মর্যাদায় ভূষিত হয়।
এতদ্ব্য সত্যেও সরকার সন্ত্রাস, তথ্য মাধ্যমের উপর সরকারের একক আধিপত্য, প্রশাসনিক দলীয়করণ, বিরোধীদলের উপর নির্যাতন ইত্যাদিও কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তাদের ২০০০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের ১নম্বর দুর্ণীতি গ্রস্থ্য দেশ হিসাবে ঘোষনা করে। সরকার নানা আলোচনা-সমালোচনায় পূর্নমেয়াদ পুরন করে সংবিধান মোতাবেক ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ২০০১ সালের ১৫ জুলাই প্রধান উপদেষ্ঠারুপে শপথ গ্রহন করেন।