নেত্রকোনা জেলার উত্তর প্রান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশের এক জনপদের নাম। যেখানে বয়ে গেছে টলটলে জলের সোমেশ্বরী আর দিগন্ত হারিয়েছে আকাশ ছোঁয়া সবুজ পাহাড়ে। ছোট্ট একটি জায়গার পরতে পরতে বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা রয়েছে দুর্গাপুরে। আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি দুর্গাপুরের বিরিসিরি ইউনিয়নে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। বিরিশিরিসহ সুসং দুর্গাপুর ও এর আশপাশের উপজেলা কলমাকান্দা, পূর্বধলা, হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়ায় রয়েছে গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এদের জীবনধারা যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি বৈচিত্র্যময় এদের সংস্কৃতিও।
**কি আছে এখানে ?
*ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি ভ্রমন করার জন্য চমৎকার একটি জায়গা। এখানে অসংখ্য লাল, গোলাপী, বেগুনী চিনামাটির পাহাড় রয়েছে। পাহাড় চূড়ায় গড়ে ওঠা মিশনটির পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা পাহাড়ী নদীর নাম – সোমেশ্বরী।পা বাড়ালেই ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।
*সোমেশ্বর নদী দেখতে খুবই চমৎকার। নদী পার হয়েই রিক্সায় যেতে হয় বিজয়পুর সাদামাটির পাহাড়ে। এখানে রয়েছে বিজয়পুর সাদামাটির অঞ্চল, রানীঘং মিশন, বিজিবি ক্যাম্প, রামকৃষ্ঞ মিশন। সাদামাটির পাহাড় থেকে মাটি নিয়েই বাংলাদেশের সিরামিক কোম্পানীগুলো চলে। পাহাড়ি রাস্তায় চোখে পড়বে আদিবাসিদের যাতায়াত। নারী আর শিশুই বেশী। পিঠে ঝুড়ি নিয়ে তারা যাচ্ছে সীমান্তের বাজারে। রানীঘং যাওয়ার পথে পড়বে রাশমনি হাজং স্মৃতিসৌধ।
*বিজয়পুর পাহাড় রাশমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনা মাটির পাহাড়। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ জলাধারগুলো দেখতে চমত্কার।
*এছাড়াও দূর্গাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চুড়ায় রানীখং গীর্জা অবস্থিত। এই পাহাড়ের চুড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন অন্য মাত্রা পায়।
*শ্বেত শুভ্র চিনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরুপ নীলের উৎস সমেশ্বরী নদী ।যা বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে পরিচিত। এই নদীর নীল জলে সাদা চিনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্ব যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এক কাথায় অসাধারন!! এছাড়া হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন সাগর দিঘি। বেড়ানোর জন্য অপূর্ব জায়গা।
**কীভাবে যাবেন,কেমন খরচ ?
ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস ছাড়ে। এ পথে চলাচলকারী দু’একটি বাস সার্ভিস হলো সরকার, জিন্নাত ইত্যাদি। ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। ৫-৭ ঘন্টার মধ্যেই আপনি পৌছে যাবেন অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিরিশিরিতে। বিরিশিরির বাস বলা হলেও এটি মূলত সুখনগরী পর্যন্ত যাবে। সেখান থেকে নৌকায় ছোট নদী পার হতে হবে। ওপার থেকে রিকশা, টেম্পু ,বাস বা মোটর সাইকেলে দূর্গাপুর যাওয়া যায়। ওদিকটার রাস্তা খুব একটা ভাল না। রিকশায় গেলে ৮০-১০০ টাকা। বাস বা টেম্পুতে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। এছাড়া মোটর সাইকেলে ২ জন ১০০ টাকা লাগবে।
এ ছাড়া রেলে ময়মনসিংহ গিয়েও সেখান থেকে বাসে বিরিশিরি আসতে পারেন।
**কোথায় থাকবেন ?
*দুর্গাপুরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস।
এখানকার কক্ষ ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।যোগাযোগ : ০১৭১৬২৭৭৬৩৭, ০১৮১৮৬১৩৮৯৬।
*এ ছাড়া আছে ইয়ুথ ওমেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইডব্লিউসিএ পরিচালিত আরেকটি রেস্ট হাউস।
এখানকার কক্ষ ভাড়া ৩০০-৬০০ টাকা।যোগাযোগ : ০১৭১১০২৭৯০১, ০১৭১২০৪২৯১৬।
*এ ছাড়া দুর্গাপুরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে।
স্বর্ণা গেস্ট হাউস (০১৭২৮৪৩৮৭১২),হোটেল সুসং (০১৯১৪৭৯১২৫৪),হোটেল গুলশান (০১৭১১১৫০৮০৭) ইত্যাদি।এসব হোটেলে ১৫০-৪০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।এছাড়াও পাহাড়ের চূড়ায় ক্যাম্পিং করতে পারেন।
**কী খাবেন ?
নেত্রকোনা জেলার বিখ্যাত খাবার বালিশ মিষ্টি খেতে ভুলবেন না কিন্তু!!!
**সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় তথ্য:
*খুব কম কাপড় নিতে হবে যেন ব্যাগ হালকা হয়।
*ওডোমস ক্রিম নিতে হবে মশা হতে বাচার জন্য ।
*হাটার জন্য ভাল গ্রিপ করে এমন প্লাষ্টিকের স্যান্ডেল পরতে হবে। তবে স্যান্ডেলটি আগেই পরে পায়ের সাথে মানিয়ে নিতে হবে।
*থ্রি কোয়ার্টার বা শর্ট প্যান্ট পরে নিতে হবে।
*রেমাক্রী হতে নাফাখুমের পথে যথেষ্ঠ পরিমান খাবার ও পানীয় নিয়ে নিতে হবে।
*ফাষ্ট এইড ও চর্ট লাইট নিতে হব।
*প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সাথে নিয়ে যাওয়া উত্তম।
*প্রত্যেক টুরিষ্টের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, বাসার ফোন, পেশা ইত্যাতি লিতে কমপক্ষে ১০ টি ফটোকপি করে নিয়ে যেতে হবে।
আপনার প্রিয়জনের সাথে যানজ়ট ও কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে, প্রকৃতির একদম কাছাকাছি গিয়ে উপভোগ করতে পারেন আপনার অবসরের পুরু সময়টুকু…।