ফেসবুকের ভালো এবং মন্দ দুটো দিক রয়েছে। অনেকে সারা দিন ফেসবুকের মধ্যে ডুবে থাকেন। টুইটার, লিঙ্কডইন, ইন্সটাগ্রাম, ব্লগ ইত্যাদি ব্যবহার করে তরুণ-তরুণীরা জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করছে। এখন ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে ১১০ কোটির ওপর। টুইটার ব্যবহারকারী রয়েছে ৩১ কোটির ওপর। লিঙ্কডইন ব্যবহারকারী রয়েছে সাড়ে ২৫ কোটির ওপর। আর ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী রয়েছে ১০ কোটির ওপর।
চরিত্র গঠন করার কথা ছিল যে বয়সে, সে বয়সে তরুণেরা একচেটিয়া মোবাইল ম্যানিয়ায় আক্রান্ত। এক সময় তো রাস্তার মোড়ে মোড়ে সাইবার ক্যাফ গড়ে উঠেছিল। সে সময় শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে সাইবার ক্যাফে ঢুকে পড়ত। এখন ক্যাফে সেভাবে দেখা যায় না। অন্য দিকে তরুণ প্রজন্মের চরিত্র গঠনের সহায়ক বস্তুগুলো আজ জঙ্গিতে পরিণত হয়েছে। একটা অশ্লীল বই বা সিডি সাথে রাখলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু চরিত্র গঠনের উপাদানগুলো সাথে করে ঘর থেকে বের হলে হাজার বার চিন্তা করে বের হতে হয়। আবার উৎসাহিত করা হচ্ছে ভিনদেশীয় সংস্কৃতি চর্চার জন্য। একটা সময় যোগাযোগের মাধ্যম চিঠি ও টেলিফোন ছিল। গ্রাম তো দূরের কথা, শহরে ও সবার ঘরে টেলিফোন ছিল না। চিঠির ওপর নির্ভর করতে হতো। মোবাইলের ব্যবহার এমনভাবে বেড়েছে যে, রাস্তার ভিক্ষুক টোকাইদের হাতেও এখন মোবাইল।
তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় মগ্ন থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা না করে মোবাইলে ঠায় চেয়ে থাকছে। জীবন গঠনের হাতিয়ার বই শিক্ষার্থীদের সঙ্গী হওয়ার কথা থাকলেও তাদের সঙ্গী হয়েছে মোবাইল। আমার পরিচিত অষ্টম শ্রেণী পড়–য়া শিক্ষার্থী নতুন মোবাইল কিনে দেয়ার জন্য তার বাবাকে অস্থির করে তুলেছিল। তার বায়না হলো তার বন্ধু ১৫ হাজার টাকার দামি মোবাইল ব্যবহার করে। সে কেন কিনতে পারবে না? বাবার মাসিক বেতন সর্বসাকুল্যে ১৫ হাজার টাকা। বাবা নিরুপায় হয়ে অফিসের সহকর্মীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে সন্তানের ইচ্ছা পূরণ করেছে। প্রশ্ন হলো, এই মোবাইল কি সবার জন্য অপরিহার্য? একটি ছুরির কথাই ধরুন। যখন ডাক্তারের হাতে থাকে তখন তা দিয়ে রোগীর অপারেশন করা হয়, আবার একই ছুরি যখন ছিনতাইকারী বা ডাকাতের হাতে থাকে তখন খুনখারাবিতে পরিণত হয়। এ কথা স্পষ্ট ব্যবহারে ছুরির দোষ নয়, দোষ হচ্ছে প্রয়োগ করার ধরনের।
স্কুল-কলেজের হাজারো শিক্ষার্থীর দিকে নজর দিলে দেখা যাবে তারা বাস, রিকশা কিংবা হেঁটে চলার সময় ফোনে কথা বলছে অথবা কেউ গান শুনছে। ধানমন্ডিতে তিন বন্ধু মিলে এক বন্ধুকে মেরেছে এবং তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। ঘরে বাবা-মা বই না পড়ে টিভি দেখেন, সিনেমা দেখেন, সিরিয়াল দেখেন, মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, শিশুটিও এক সময় পুরোপুরি প্রস্তুত হয় সে জগতেই