কোপা আমেরিকার ইতিহাস জানেন?

Author Topic: কোপা আমেরিকার ইতিহাস জানেন?  (Read 896 times)

Offline khyrul

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 138
  • Test
    • View Profile
১৯১৬ সালে আর্জেন্টিনার স্বাধীনতার ১০০ বছর উপলক্ষে ব্রাজিল, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা আর চিলি এই চার দেশকে নিয়ে শুরু হয় কোপা আমেরিকা। তখন এই প্রতিযোগীতার নাম ছিল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ। কোপা আমেরিকা নাম দেওয়া হয় আরও পরে।

সে সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনাতে প্রচুর ইউরোপিয়ান থাকতো কাজের সূত্রে। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ ছিল ব্রিটিশ। ব্রিটিশ নাবিকরা অবসর সময়ে ফুটবল খেলতো। এই ব্রিটিশরাই ১৮৬৭ সালে বুয়েন্স আয়ার্স নামে প্রথম ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে আর্জেন্টিনাতে। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার পরে আর্জেন্টিনাতে ফুটবল ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৯৩ সালে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হওয়ার পরে শুরু হয় প্রথম আর্জেন্টাইন লীগ চ্যাম্পিয়নশীপ।

১৮৯১ সালে ব্রিটিশ রেলওয়ে’র ইঞ্জিনিয়াররা উরুগুয়েতে প্রতিষ্ঠা করেন সেন্ট্রাল উরুগুয়ে রেলওয়ে ক্রিকেট ক্লাব। নামে ক্রিকেট ক্লাব হলেও ক্রিকেট এবং ফুটবল দুটো খেলাই খেলতো তারা। উরুগুয়েতে ফুটবলের শুরু ছিল সেটাই।

১৮৯৪ সালে চার্লস মিলার নামে একজন ব্রিটিশ ব্রাজিলের সাও পাওলোতে আসেন ২টি ফুটবল নিয়ে। তিনি যখন তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মীদেরদের সাথে ফুটবল খেলতেন তখন তাঁদের চারপাশে ভিড় করে ব্রাজিলিয়ানরা খেলা দেখতো। দেখতে দেখতে তাদের মনে হল, “আরে! এই খেলা তো আমরাও খেলতে পারি।” খেলা শুরুর পরে দেখা গেলো ইংরেজদের যেমন বল নিয়ন্ত্রণের জন্য নানারকম কারিকুরি করা লাগে তাদের সেরকম কিছুই করা লাগে না। বল যেন তাদের পায়েরই একটা অংশ। রাতারাতি এই খেলার দিকে ঝুঁকে পড়লো বেশিরভাগ ব্রাজিলিয়ান। ফুটবল ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো ব্রাজিলে।

 কোপা আমেরিকার ইতিহাস জানেন?পরের আসর বসার কথা ছিল ১৯১৮ সালে, সাম্বার দেশ ব্রাজিলে। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেবারের আসর স্থগিত করা হয়। ১৯১৯ সালে বসে কোপার তৃতীয় আসর। অনেকদিক দিয়েই এটা ছিল প্রথম। প্রথমবারের মতো স্বাগতিক হয় ব্রাজিল। দুজন টপ গোলস্কোরারের দেখাও পাওয়া যায় প্রথমবারের মতো এই আসরেই। এই আসরেই প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করার জন্য প্লে-অফ ম্যাচ খেলানো হয় যেটা কোপা আমেরিকার ইতিহাসেই দীর্ঘতম ম্যাচ হিসেবে পরিচিতি পায়। এই ম্যাচে দুইবারে ৩০ মিনিট করে অতিরিক্ত ৬০ মিনিট খেলানো হয়। এই ম্যাচে উরুগুয়েকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। যৌথভাবে টপ গোলস্কোরার হন ব্রাজিলের নেচো এবং ফ্রাইডেনরাইখ।

পরের কোপা অনুষ্ঠিত হয় ১৯২০ সালে। চিলিতে বসা এই আসর ছিল ৪ দলের সমন্বয়ে হওয়া কোপা’র শেষ আসর। এবার শিরোপা ব্রাজিলের হাত থেকে ফিরে আসে উরুগুয়ের কাছে। আবারো আর্জেন্টিনাকে রানার্সআপ বানিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। এর মাধ্যমে প্রথম ৪ আসরে ৩ বারই চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁরা। তিন বছর আগের ফর্ম ধরে রেখে এবারো টপ গোলস্কোরারের খেতাব পান অ্যাঞ্জেল রোমানো।

১৯২১ সাল। কনমেবলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে প্যারাগুয়ে এবারেই প্রথম অংশগ্রহণ করে কোপা’তে। প্যারাগুয়েকে নিয়ে দলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫টি। কিন্তু দলের মধ্যে ঝামেলা থাকায় চিলি এ আসরে অংশগ্রহণ করেনি। অবশেষে স্বাগতিক আর্জেন্টিনার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লো। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আমেরিকার সেরা হল আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্টের টপ গোলস্কোরারও হন একজন আর্জেন্টাইন, জুলিও লিবোনাত্তি। ব্রাজিল হয় দ্বিতীয় সেরা।

কিন্তু ব্রাজিল নিজেদের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে কোপা আয়োজন করার আগ্রহ প্রকাশ করে। তাই ১৯২২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো তে কোপা আমেরিকার ষষ্ঠ আসর শুরু হয়। চিলি খেলায় ফিরে আসে এ বছরে। মোট ৫ টি দলের এই কোপা আমেরিকাতে ব্রাজিল, উরুগুয়ে এবং প্যারাগুয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করে সমান পয়েন্ট নিয়ে। তাই তিন দলকে নিয়ে তিনটি প্লে-অফ ম্যাচ খেলানোর পরিকল্পনা করা হয়। শেষ মুহূর্তে উরুগুয়ে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিলে একমাত্র প্লে-অফটি হয় ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের মধ্যে। প্যারাগুয়েকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা ৪র্থ হলেও ফ্রাঙ্কিয়া নামে এক আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হন টপ গোলস্কোরার।

১৯২৩ সালে কোপা ফিরে আসে উরুগুয়েতে। স্বাগতিক এবং চ্যাম্পিয়ন উভয়ভাবেই। কোপা’র ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো চিলি অংশগ্রহণ করেনি। ১৯২৪ সালের সামার অলিম্পিকের বাছাই হিসেবেও এই আসরকে বিবেচনা করা হয়। এই আসরে সবগুলো ম্যাচ জিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। রানার্সআপ দলের নাম আর্জেন্টিনা। এবারের টপ গোলস্কোরার হন আগুইরে নামে একজন আর্জেন্টাইন এবং পেট্রোন নামে একজন উরুগুইয়ান।

কনমেবল ১৯২৪ সালের কোপা আয়োজন করতে বলে প্যারাগুয়েকে। কিন্তু কোপা’র মতো একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের সক্ষমতা না থাকায় প্যারাগুয়ে অসম্মতি জানিয়ে দেয়। কনমেবল সিদ্ধান্ত নেয় যে এবারের আসর আয়োজন করা হবে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। শেষ পর্যন্ত ১৯২৪ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত সামার অলিম্পিকে স্বর্ণজয় করার সুবাদে এই আয়োজনের দায়িত্ব পায় উরুগুয়ে। ব্রাজিল এই আসরে অংশ নেয়নি। আবারো আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে শিরোপা জয় করে উরুগুয়ে। উরুগুইয়ান খেলোয়াড় পেট্রোন তাঁর আগের বছরের ফর্ম বজায় রেখে আবারো টুর্নামেন্টের টপ গোলস্কোরার হন।

কোপার নবম আসর বসে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে, ১৯২৫ সালে। চিলি এবং উরুগুয়ে অংশগ্রহণ না করায় এই আসর হয়ে পড়ে ‘ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজ’। এই কারণে দুই রাউন্ড করে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুই রাউন্ড অর্থাৎ ৪টি ম্যাচ শেষে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। রানার্সআপ হয় ব্রাজিল। আর প্যারাগুয়ে হয় ৩ দলের মধ্যে তৃতীয়। টপ গোলস্কোরার হন আর্জেন্টিনার সিওয়ান।

- See more at: http://www.bdmorning.com/sports/106665#sthash.6gp0aToz.dpuf