লায়লাতুল কদরের এক রাতের ফজিলত ও করনীয়

Author Topic: লায়লাতুল কদরের এক রাতের ফজিলত ও করনীয়  (Read 1600 times)

Offline Jannatul Ferdous

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 247
  • Test
    • View Profile
লায়লাতুল কদরের এক রাতের ফজিলত ও করনীয়

রমজানের শেষ দশকে এমন এক রাত আছে, যাকে কুরআনের ভাষায় লায়লাতুল কদর এবং লায়লাতুন মুবারকাহ বলে অবহিত করা হয়েছে এবং তাকে এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। ‘লায়লাতুল কদর’ মানে হচ্ছে ‘কদর’ এর রাত। আর ‘কদর’ মানে হচ্ছে মাহাত্ম্য ও সম্মান। অর্থাৎ মাহাত্ম্যপূর্ণ রাত ও সম্মানীয় রাত। এ রাতের বিরাট মাহাত্ম্য ও অপরিসীম মর্যাদার কারণে এ রাতকে ‘লায়লাতুল কদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। একইভাবে আরবি লায়লাতুন শব্দের পরিবর্তে ফার্সি ‘শব’ শব্দটি ব্যবহার করে এটিকে ‘শবে-কদর’ও বলা হয়, যার অর্থ একই। গবেষক আবু বকর ওররাক (র.) বলেন, এ রাতকে ‘লায়লাতুল কদর’ বলার কারণ হচ্ছে, এ রাতের পূর্বে আমল না করার কারণে যাদের কোনো সম্মান মর্যাদা, মূল্যায়ন ছিল না তারাও তাওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে এ রাতে সম্মানিত ও মহিমান্বিত হয়ে যান।

(তাফসির মারিফুল কোরআন) আরেক অর্থে ‘কদর’ মানে ‘তাকদির’ বা নির্দিষ্ট ও ধার্যকরণ বা আদেশ দানও হয়ে থাকে। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির ফরমান নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেওয়া হয়। এমনকি এ বছর কে হজ করবে তাও লিখে দেওয়া হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বক্তব্য মতে, চার ফেরেশতাকে এসব কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তারা হলেন— ইসরাফিল, মিকাইল, আজরাইল ও জিবরাইল (আ.) (কুরতুরি)।

এ মহিমান্বিত রাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। পবিত্র কোরআনও ৩০ পারা একসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছিল এ রাতেই। এ রাতের ফজিলত ও মর্যাদার বিষয়ে খোদ মহান আল্লাহ ‘সূরাতুল কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাই অবতীর্ণ করে দিয়েছেন। এর চেয়ে বড় মাহাত্ম্য ও মর্যাদা আর কি হতে পারে? মহান আল্লাহ নিজেই এ রাতের মহিমা বর্ণনায় ইরশাদ করেছেন— কদরের রাত এক হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ (৯৭:০৩)।

অর্থাৎ কারও একনাগাড়ে এক হাজার মাস বা ৮৩ বছর ৪ মাস পর্যন্ত ইবাদত করার যে ফজিলত বা সওয়াব পাওয়া যায় তা এ এক রাতের ইবাদতের দ্বারাই মহান আল্লাহ প্রদান করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম শরিফের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে— ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে (ইমানসহ) এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় এ রাতে জেগে ইবাদত বন্দেগি করবে, তার পূর্ববর্তী জীবনের সব পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’

উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)-এর ক্ষেত্রে ওই বিশেষ সুযোগদানের কারণ হচ্ছে, এদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ শেষ নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতও যে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত তার অন্যতম একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে সূরা ‘কদর’-এর অবতীর্ণের পরিপ্রেক্ষিত প্রশ্নে বলা হয়েছে— প্রিয়নবী (সা.) একদা বনি ইসরাইলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে বললে, সে অবিরাম এক হাজার মাস পর্যন্ত জিহাদে ব্যস্ত থাকে এবং কখনো অস্ত্র হাত থেকে রাখার সুযোগ পায়নি।

বর্ণনান্তরে ইবনে জারার (র.)-কে অপর একটি ঘটনার কথা বলেছেন, যে বনি ইসরাইলের জনৈক ইবাদতকারী সব রাত ইবাদতে কাটিয়ে দিত এবং সারা দিন জিহাদে লিপ্ত থাকত। এভাবে সে এক হাজার মাস পর্যন্ত কাটিয়ে দিত। এসব ওয়াজ-উপদেশ শুনে সাহাবায়ে কিরামের মনে প্রচণ্ড বিস্ময়ের পাশাপাশি দারুণ পরিতাপও হতো যে, আমরা তো এত বছর বাঁচা বা দীর্ঘ হায়াত পাওয়ার সুযোগ দেখছি না। সুতরাং সেই মর্যাদা প্রাপ্তিও তো সুদূরপরাহত। এসব পরিতাপের দাবিতে এবং শ্রেষ্ঠত্বের পূর্ণতাদানের সুযোগ হিসেবে মহান আল্লাহ ‘সূরা ক্বদর’ নাজিল করে মুসলিম উম্মাহকে তার চেয়েও বড় ও বেশি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ করে দিলেন।
Mosammat Jannatul Ferdous Mazumder
Student Counselor (Counseling & Admission)

Offline Jannatul Ferdous

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 247
  • Test
    • View Profile
শবে কদরে আমাদের করণীয়:-

এ রাতে বেশী-বেশী দোআ করা। হাদীস শরীফে আছে, হযরত আয়েশা রা. নবী করীম সা. কে জিজ্ঞেস করলেন. শবে কদরে আমি কী দোআ করতে পারি? রাসূল সা. বললেন, তুমি এই দোআ পড়বে. আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়ুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’অফু আন্নি,
অর্থ, হে আল্লাহ! আপনি মাশীল, মাকে ভালবাসেন, অবএব, আমাকে মা করুন (তিরমিজী শরীফ)

২. বেশী-বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা।

৩. তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলূল্লাহ ) বেশী-বেশী করে পড়া। ৪. তাসবীহ (সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজীম ) বেশী বেশী পড়া ।

৫. দরুদ শরীফ পড়া।

৬. নফল নামাজ বেশী-বেশী আদায় করা। যথা তাহাজ্জুদের নামাজ, সলাতুত তাসবীহ, সলাতুল হাজত।
এ রজনীতে আল্লাহপ্রেমিক বান্দাগণ নিজেদের অতীত অপরাধসমূহের জন্য অনুতাপ ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের প্রচেষ্টা করে থাকেন।

মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এই অতুলনীয়, মর্যাদাময় রজনীর ফায়দা লাভের মাধ্যমে নিজেদের অতীত জীবনের ভুল-ক্রুটি মা ও নেকীর ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
Mosammat Jannatul Ferdous Mazumder
Student Counselor (Counseling & Admission)