একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে চিবিয়ে খাচ্ছে। মাংস খাওয়ার পর মরা মানুষের হাড়-হাড্ডিকে আবার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করছে। এরকম দৃশ্য খুব বেশি দিন দূরের নয়। মাত্র ৪০ হাজার বছর আগে এমন স্বগোত্রভোজী মানুষ ছিল পৃথিবীতে। আদি ওই মানুষেরা হল নিয়ানডার্থাল। ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের এক গুহায় কুড়িয়ে পাওয়া বিলুপ্ত এই আদিজাতের বেশ কতগুলো কঙ্কাল নিয়ে গবেষণা করে এমন তথ্য উদ্ধার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নিয়ানডার্থাল হল আধুনিক মানুষের উপপ্রজাতি। এরা সমূলে বিলুপ্ত হওয়ার আগে ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায় বাস করত। ধারণা করা হয়, ৩০-৪০ হাজার বছর আগে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আমি-আপনি বা আজকের মানুষের পূর্বপুরুষের উদ্ভবের মধ্য চিরপ্রস্থান ঘটে নিয়ানডার্থালদের। গবেষণায় দেখা গেছে, এই দুই জাতের মধ্যে প্রজননও ঘটেছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আধুনিক ইউরোপীয় ও এশীয়দের শতকরা ৪ ভাগ ডিএনএ নিয়ানডার্থালদের বৈশিষ্ট্য ধারণ ও বহন করছে বলে।
বেলজিয়ামের নামুরের কাছে গয়েত গুহা থেকে স্বজাতিখেকো মানুষের কঙ্কালগুলো উদ্ধার করা হয়। গর্ত, খামচি-খাঁজ, দাগ-ভাঁজ ইত্যাদির সাক্ষর দেখে তাদের রাক্ষুসে চরিত্র সম্পর্কে জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। সায়েন্টিফিক রিপোর্টার্স জার্নালে এ নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।
নিজ গোত্রের মানুষকে খাওয়ার এই পুরো প্রক্রিয়াটা কতগুলো ধারাবাহিক ধাপের সমষ্টি। যেমন প্রথমে চামড়া ছিলে ফেলা। এরপর টুকরো টুকরো করে কাটা। হাড়ের ভেতর থাকা নরম মজ্জা বের করা।
‘এসব খণ্ড খণ্ড চিত্রকে জোড় লাগালে,’ গবেষণা দলের প্রধান হার্ভে বোচারেনস বলেছেন, ‘আমরা এমন একটা কল্পচিত্র পাই যেখানে দেখা যাবে, নিয়ানডার্থালরা নরমাংসভক্ষণ প্রথায় অভ্যস্ত ছিল।’ জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব টাবিনজেনের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘গয়েতে পাওয়া ওই সময়ের ঘোড়া ও বল্গাহরিণের কঙ্কালগুলোও একই রূপে প্রক্রিয়াজাত বলে দেখা গেছে।’
শুধু হত্যা করে মাংস বা হাড়ের মজ্জা খাওয়ায় শেষ নয়। আত্মীয়-স্বজনের অবশিষ্ট হাড়গুলো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত নিয়ানডার্থালরা। যেমন পাথর দিয়ে কোনো বিশেষ আকৃতি মজবুত করার জন্য একটি ফিমার (উরুর হাড়) এবং তিনটি টিবিয়া (ঠেংয়ের হাড়) মিলিয়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। আবার অন্য কোনো পশুর হাড় দিয়ে কোনো কিছু ভাঙা বা আঘাত করার জন্য ব্যবহার করত।
নিয়ানডার্থালরা যে স্বজাতিখেকো-এর আগে স্পেন ও ফ্রান্সে পাওয়া কঙ্কাল থেকে এমনটা অনুমান করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।
http://www.poriborton.com/diverse-world/9319