পিরামিডের কথা বললেই প্রথমে মাথায় আসে মিসরের নাম। কিন্তু এবার যে পিরামিডের কথা বলব সেটা মিসরে নয়, বরং ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত। এই পিরামিডের নাম পিরামিড অব অস্টারলিটজ। নেদারল্যান্ডসের উডেনবার্গ গ্রামে ৩৬ মিটার উচ্চতার এই পিরামিডটির অবস্থান। এটি প্রথম নির্মাণ করেন নেপোলিয়নের সেনারা। সে আজ থেকে অনেক আগের কথা। ১৮০৪ সালে জেনারেল মারমন্ট নেপোলিয়নকে খুশি করতে নেপোলিয়নের সৈনিকদের দিয়ে নির্মাণ করেন এই বিশাল মাটির পিরামিড। নিশ্চয়ই ভাবছেন, এত কিছু থাকতে পিরামিড কেন? আর এই পিরামিড বানানোর চিন্তা এলোই বা কিভাবে মারমন্টের মাথায়?
পিরামিড মারমন্ট প্রথম দেখেছিলেন ১৭৯৮ সালে, নেপোলিয়নের মিসর অভিযানের সময়। সে সময় সেখানে দেখা পিরামিডগুলো নজর কাড়ে তাঁর। ১৮০৪ সালে বর্তমান নেদারল্যান্ডসে সেনাদের ছোট ছোট দল একত্র করে একটা বড় সেনাদল তৈরি করেন মারমন্ট। তখনই গিজার পিরামিডের মতো একটা পিরামিড বানানোর ইচ্ছা মনে জাগে তাঁর। বসে বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল সেনারা। এই কাজে তাই আগ্রহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। গোটা পিরামিডটাই বানানো হয় মিসরের পিরামিডের আদলে। পিরামিডের নির্মাণকাজে মাত্র ২৭ দিন সময় নেয় সেনাবাহিনী। প্রথম দিকে পিরামিডের ওপরের অংশটুকু সমতল ছিল। পরে একটি ১৩ মিটার লম্বা স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ করা হয় চূড়ায়।
তবে এর পরপরই নেপোলিয়নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন মারমন্ট আর পিরামিডের নাম দেন মন্ট মারমন্ট। অবশ্য বেশি দিন পিরামিডটিকে নিজের নামে পরিচিত করতে পারেননি তিনি। ১৮০৬ সালে হল্যান্ডের নতুন রাজা লুই নেপোলিয়ন অস্টারলিটজের যুদ্ধে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জয়ের স্মৃতিতে এই পিরামিডের নাম দেন পিরামিড অব অস্টারলিটজ।
মারমন্ট খুব যত্ন নিয়ে পিরামিডটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে তাড়াহুড়ায় গড়ে তোলা কেবল বালু আর মাটির এই পিরামিড কিছুদিন পরই ধসে যেতে থাকে। অবশ্য সেটা হওয়ারই ছিল। মারমন্ট সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান পিরামিডটি ঠিকঠাক রাখার। তবে তাঁর প্রাণপণ চেষ্টাও শেষ অব্দি টিকতে পারেনি মানুষ আর প্রকৃতির মিলিত যুদ্ধের সামনে। স্থানীয়দের ভাঙচুর আর প্রাকৃতিক ধস—এ দুটির কবলে পড়ে নাজেহাল মারমন্ট একপর্যায়ে পিরামিডটি আশপাশের জায়গাসহ বেচে দেন হিউবার্ট এম এ জে ভ্যান উইক নামে এক ব্যক্তির কাছে। তবে তার পরও পৃথিবীর কাছে একদম অচেনাই রয়ে গিয়েছিল অস্টারলিজের পিরামিড। ২০০৪ সালে সংস্কারকাজ শুরু হয় এই পিরামিডের। আর তার পরই নানা দেশের পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বর্তমানে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসে নেদারল্যান্ডসে শুধু এই পিরামিড দেখার জন্য।
- See more at:
http://www.kalerkantho.com/print-edition/mogoj-dholai+/2016/07/24/384552#sthash.ilTl05ku.dpuf