কী জাদু সুলতান সুলেমানে

Author Topic: কী জাদু সুলতান সুলেমানে  (Read 1653 times)

Offline Md. Nazmul Hasan

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 90
  • Test
    • View Profile
মৃত্যুর ৪৫০ বছর পরও নতুন নতুন দেশ জয় করে চলেছেন সুলতান সুলেমান। জয় করে চলেছেন মানুষের হৃদয়। প্রথমবার তিনি এসেছিলেন মধ্যযুগের ইতিহাসের মঞ্চে। তাঁর দ্বিতীয় আগমন ঘটেছে টিভি পর্দায়। তুরস্কে তো বটেই, তাঁর সাবেক সাম্রাজ্যের দেশগুলোতে আবার আলোচনা উঠছে। বিতর্কও চলছে। মুসলিম দেশগুলোতে সুলেমান হাজির হয়েছেন উদার, নীতিমান, দার্শনিক শাসকের প্রতীক হিসেবে।


সুলতানের হৃৎপিণ্ডের খোঁজে
বলকান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে সুলতান সুলেমান একই সঙ্গে ভালোবাসা ও ঘৃণার নাম। এই বিরাট ভূখণ্ড জয় করেছিলেন উসমানিয়া সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগের এই নায়ক। সাড়ে চার শতাব্দী পরও তাঁর স্মৃতি ভুলতে পারছে না এসব দেশ। হাঙ্গেরিতে স্থাপন করা হয়েছে তাঁর ভাস্কর্য। তাঁর স্ত্রী হুররম সুলতানের বিরাট মূর্তি উঠেছে ইউক্রেনে। এদিকে হাঙ্গেরি সীমান্তের প্রাচীন এক দুর্গের চারপাশে খোঁজা হচ্ছে সুলতানের রাজকীয় তাঁবুর জায়গাটা। ইতিহাসবিদ আর প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল বছরের পর বছর কাজ করে চলছেন। তাঁরা তুর্কি, আরবি, গ্রিক, জার্মান ও ইতালীয় ভাষার নথিপত্র তন্নতন্ন করে সূত্র খুঁজছেন। তাঁরা যে জায়গাটি খুঁজছেন, লোকবিশ্বাস, সেখানে পোঁতা রয়েছে সুলতান সুলেমানের হৃৎপিণ্ড। হাঙ্গেরি তো বটেই, বলকান অঞ্চলের দেশগুলোর উপকথায় এক তুর্কি সুলতানের কথা আছে। বলা হয়, হাঙ্গেরির জিগেতভার দুর্গের আশপাশে কোথাও সোনার বাক্সে সমাধিস্থ রয়েছে সেই সুলতানের হৃৎপিণ্ড। এ কারণেই হাঙ্গেরির ওই শহর এখন পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য।

১৫৬৬ সাল। এক লাখ সৈন্য নিয়ে জিগেতভার দুর্গ অবরোধ করে আছেন বৃদ্ধ সুলতান। কিন্তু দুর্গপতনের আগের রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেখান থেকে রাজধানী ইস্তাম্বুল অনেক দিনের পথ। তার আগেই মরদেহে পচন ধরে যাবে। তাই প্রধান উজির গোপনে তাঁর দেহ মমি করেন। আর সুলতানের হৃৎপিণ্ডটা সোনার বাক্সে ভরে পুঁতে রাখা হয় সেখানেই, যেখানে ছিল তাঁর তাঁবু। কবিতায় যা হৃদয়, মানবদেহে তা-ই হৃৎপিণ্ড। সুলতান সুলেমানের কবর যদিও ইস্তাম্বুলে, তাঁর হৃদয় রয়ে যায় সাম্রাজ্যের শেষ সীমানার এক ছোট্ট দুর্গশহরে। হাঙ্গেরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নরবার্ট পেপের দাবি, ৪৫০ বছর পর সম্রাটের হৃৎপিণ্ডের সমাধিস্থ হওয়ার জায়গাটা তাঁরা চিহ্নিত করতে পেরেছেন।

যে বলকান অঞ্চলকে সুলতান সুলেমান জয় করেছিলেন, তাঁর কাহিনি কেন সেখানকার টিভি দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়? সার্বীয় সমাজতাত্ত্বিক রাতকো বোজোভিকের মত হলো, পুরোনো যুগের মূল্যবোধ, পারিবারিক সম্পর্ক এবং তুর্কি সংস্কৃতি ও ভাষাগত মিলের কারণেই বলকান অঞ্চলে তুর্কি সিরিয়ালের এই জনপ্রিয়তা। যে জীবন হারিয়ে গেছে, ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিয়াল তার কথা মনে করায়।সিরিয়ালটির দৃশ্যপটে বড় অংশজুড়েই থাকে সুলতান সুলেমানের হারেম, সেই তোপকাপি প্রাসাদ, তার চোখধাঁধানো সৌন্দর্য, অপ্সরীর মতো নারীরা। আছে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ, মৃত্যু, ষড়যন্ত্র ও সততার ছবি। কিন্তু এসব কিছুর চেয়েও দর্শককে সম্ভবত যা আটকে রাখে তা সংগ্রামের দুটি স্রোত। একদিকে সুলতান সুলেমান দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ও ন্যায্য সাম্রাজ্য তৈরির জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে চলে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনের জন্য এক নারীর জটিল-কুটিল লড়াই। আর এই দুই ধারার সঙ্গে মিলনে বিরোধে চলতে থাকে প্রধান উজির ইব্রাহিম পাশার উত্থান ও পতনের গল্প।
সমগ্র সিরিয়ালে সুলেমান যেন সেই ভরকেন্দ্র, সাহস, জ্ঞান ও ন্যায়ের জোরে লড়াই করছেন বিদেশিদের সঙ্গে, লড়াই করছেন ষড়যন্ত্র ঠেকাতে। তাঁকে ঘিরে হুররমের দুর্দান্ত প্রেম, ঈর্ষাপরায়ণ নারীদের ষড়যন্ত্র, উচ্চাভিলাষী আমলা ও উজিরদের কৌশলী চাল। তিনি মানবিকও থাকেন আবার কঠোরও হতে পারেন। সম্ভবত তাঁর চরিত্রের মধ্যে দর্শক দেখতে পায় ভরসা। আবার তিনি ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিম ও উদার। কঠিন যোদ্ধা হয়েও দারুণ প্রেমিক। দুর্লভ পাথরের অলংকার তৈরির শিল্পী, যা হবে তাঁর প্রিয়তমাকে দেওয়া উপহার।

নারী সালতানাত
১৩৯ পর্বের এই কাহিনিতে কখনো কখনো সুলেমানের চেয়ে বেশি মন কাড়েন হুররম সুলতান। এক ইউক্রেনীয় দাসী। রোক্সালেনা থেকে সেই হতভাগ্য মেয়েটি হয়ে ওঠে হুররম। বারবার বঞ্চনা ও মৃত্যুর দরজা থেকে হুররমের ফিরে আসার নাটকীয়তা দর্শককে আকৃষ্ট করে। হুররম সব ক্ষেত্রে নিরীহ নন। তারপরও সুলতানের প্রতি তীব্র প্রেম ও বিশ্বস্ততা, নিয়তির সঙ্গে লড়াই এবং অপার সৌন্দর্য দিয়ে সহানুভূতি আদায় করে নেন তিনি।

হুররম সেই কাঙ্ক্ষিত নারী, যে একই সঙ্গে ভঙ্গুর ও কঠিন। একই সঙ্গে সরল ও জটিল। বাস্তবেও উসমানিয়া সাম্রাজ্যের ইতিহাসে হুররম অনন্য উচ্চতা অর্জন করেছিলেন। তিনিই প্রথম নারী সুলতানা, যিনি দরবারে উপস্থিত থাকতে পারতেন এবং অর্জন করেছিলেন উজিরদের চেয়েও বেশি ক্ষমতা। উসমানিয়া সাম্রাজ্যের সেই যুগকে অনেকে নারীদের সালতানাতও বলে থাকেন।
সুলতানকে যেরকম নিষ্কলুষ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে অনেকেই হয়তো একমত হবেন না। কিন্তু তিনি যে সে সময়ে শক্তি, সমৃদ্ধি ও সংস্কৃতিতে বিশ্বের সেরা সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন, এটা অস্বীকার করা ইতিহাসের বরখেলাপ হবে। তাঁর রাজধানীতে ইউরোপীয় ও ভিন্নধর্মীয়রা নিরাপদে ও সসম্মানে বসবাস ও ব্যবসা করতে পারতেন।

এহেন সুলতানের আরেক পরিচয়, তিনি কবি। মুহিব্বি ছদ্মনামে তিনি প্রেমের কবিতা লিখতেন প্রিয়তমা হুররমকে কল্পনা করে। বহু বিরহ আর দ্বন্দ্বের পর তাঁদের হৃদয়ে শান্তি আসে। হুররমের মৃত্যু হয় স্বামীর কোলেই। এর আগে কখনো কোনো সুলতান প্রকাশ্যে স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য শোক দেখাতেন না। কিন্তু ঐতিহ্য ভেঙে সুলেমান স্বয়ং সন্তানদের সঙ্গে কফিন কাঁধে প্রাসাদের বাইরে আসেন।
প্রকাশ্যে স্ত্রীর জন্য অশ্রু ঝরান। হুররমের শোক সুলেমানকে গভীর অবসাদে ডুবিয়ে দেয়। বলা হয়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেই শোকেই ডুবে ছিলেন।

Offline Md. Nazmul Hasan

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 90
  • Test
    • View Profile
Re: কী জাদু সুলতান সুলেমানে
« Reply #1 on: July 30, 2016, 02:01:43 PM »
চোখে-মুখে ক্ষোভ। তেড়িয়া ভঙ্গি। বাবার মুখোমুখি হয়েছে শাহজাদা মুস্তাফা।
—‘আমি ভাবতাম আপনার কাছে ন্যায়বিচার সবচেয়ে বড়। কোথায় আপনার ন্যায়বিচার। আমাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কে নেয় বাবা? আপনি না, হুররম সুলতান? আপনি কি আমাকে বলবেন না জাঁহাপনা? আমাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত কে নেয়?’ কথাগুলো বলল সে চিবিয়ে চিবিয়ে।
সুলতান সুলেমান ভাবলেশহীন চোখে খানিক দেখলেন ক্ষুব্ধ পুত্রকে। তারপর অবিচল ভঙ্গিতে মুখ খুললেন।
—‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছ। যদিও আমি জানি, তুমি তোমার বাবার প্রতি অনুগত। কিন্তু ভুলে যাচ্ছ, তোমার সামনে শুধু তোমার পিতা নন। তোমার জাঁহাপনাও দাঁড়িয়ে আছেন। কোন সাহসে বেয়াদবি করছ?’
অন্দরমহলে জমে উঠেছে পিতা-পুত্রের নাটক। কীভাবে হবে পিতা-পুত্রের এই দ্বন্দ্বের সমাধান। এতক্ষণে নিশ্চয়ই অনেকে বুঝে গেছেন কথা হচ্ছিল বাংলা ডাবিং করা ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিজ িনয়ে। দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দীপ্ত টিভির এই ধারাবাহিক।
মধ্যপ্রাচ্যের ১৬টি দেশে এটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তুরস্কের এই ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা যেমন, তেমনি এই সিরিজ ঘিরে যেন আলোচনা ঘিরে বিতর্কেরও শেষ নেই। গ্রিসে সুলতান সুলেমানের জনপ্রিয়তা ঠেকাতে মাঠে নামেন দেশটির ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা। মেসিডোনিয়ার সংসদে আইন করে সিরিয়ালটি নিষিদ্ধ করা হয়। এরই মধ্যে তরুণ প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ভুলভাবে তুলে ধরার অভিযোগও এসেছে এই ধারাবাহিকের বিরুদ্ধে। নেলসন মিডিয়া রিসার্চ মার্কেট স্টাডি জানাচ্ছে, ২০১৩ সালে এটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় এবং কসোভোয় প্রথম ও সার্বিয়ায় চতুর্থ দর্শকপ্রিয় টিভি শো। সবকিছুর পরও উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাসভিত্তিক এই সিরিজের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বগামীই থেকে গেছে। এখন ডাবিং সাবটাইটেল নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে প্রদর্শিত হচ্ছে এই টিভি সিরিজটি।
কিন্তু কে এই সুলতান সুলেমান?
ইতিহাস বলছে, সুলতান সুলেমান ১৪৯৪ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল আয়েশা হাফসা সুলতান। মনে করা হয়, তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের বংশধর। সুলতান সুলেমান ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের দশম সুলতান। সুলতান হওয়ার আগে তিনি বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর ছিলেন।
পিতা সুলতান প্রথম সেলিমের মৃত্যুর পর তিনি ২৬ বছর বয়সে মসনদে বসেন। ৪৬ বছরের শাসনকালজুড়ে এক মহান যোদ্ধা ও শাসক হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। পাশ্চাত্যে তাঁর পরিচিতি ছিল ‘সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’ হিসেবে।
১৫৬৬ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
সূত্র: অল অ্যাবাউট টার্কি, টরন্টো স্টার