Bangladesh > Heritage/Culture
জলকাজল
(1/1)
Lazminur Alam:
ধু ধু বালুচর পাড়ি দিয়ে বড়সড় গুইসাপ হেলেদুলে এগিয়ে চলেছে নদীটার দিকে। পেটভরা খিদে।
নদীর জলে নেমে পড়ল গুইসাপটি, সাঁতরে উঠে পড়ল নদীর প্রায় মাঝখানের ছোট চরটার কিনারে। অমনি চরভূমি থেকে উড়াল দিল ২৫-৩০টি পাখি। চরভূমিতে ডিম-ছানা বুকে আগলে বসা কয়েকটি পাখি কিন্তু উড়ল না, তবে মাথা-ঠোঁট ঊর্ধ্বমুখী করে সমানে চেঁচাতে লাগল। গুইসাপটি মাথা উঁচু করে দেখে নিল সবকিছু, তরপরে দ্রুত এগোতে শুরু করল বাসাগুলো লক্ষ করে। ডিম-ছানা গিলবে। অমনি উড়ন্ত পাখিগুলো ডাইভ মারতে শুরু করল। গুইসাপ তার লেজের চাবুক নাড়ছে ডানে-বাঁয়ে, মাথা এদিক-ওদিক করে আক্রমণ এড়াতে চাইছে। কিন্তু এগিয়ে চলেছে সে দ্রুতবেগেই। ঠোকর-আঁচড় অবশ্য পড়ছে মাথা-পিঠ-কোমরে, তাতে ওর যেন সুড়সুড়ি লাগছে, গুইসাপের চামড়া বলে কথা!
বাসাগুলোর কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই বালুমাটিতে নেমে কিছু পাখি পাশাপাশি লাইনে দাঁড়িয়ে গেল দুপাখা মেলে। পাখায় পাখা মিলিয়ে দোলাচ্ছে তালে তালে, ফোলাচ্ছে শরীরের পালক ও মাথা, আর সমানে চেঁচাচ্ছে। পাখিদের প্রতিরোধব্যূহ দেখে গুইসাপটি থমকে দাঁড়াল। পাখিদের শক্ত প্রতিরোধ ভেঙে ওটা আর এগোতে পারল না, ফিরে গেল গুইসাপ। বাঁচল মাটির বাসার ডিম-ছানারা। এভাবে শিয়াল-খাটাশ-বনবিড়ালের হাত থেকে ডিম-ছানা রক্ষা করতে পারলেও মানুষের হাত থেকে রেহাই মেলে না এদের। ডিম-ছানা তুলে নেয়। খেপজালে ধরে রাতের বেলায়।
সাহসী-কুশলী ও লড়াকু এই পাখিরা হলো গাঙচিল। জলকাজল, মাছখাইক্কা, মেছো চিলসহ আরও স্থানীয় নাম আছে এদের।
কলোনির মতো বাসা করে দ্বীপ-চরে। কমলা-হলুদ ঠোঁট এদের, মাথায় কালো টুপি। ঘাড়ের ঊর্ধ্বাংশও কালো। কপাল কালো। কালো রং চোখের ওপরটা জুড়েও, চোখ তাই দেখা কষ্ট। পা ও পায়ের পাতা লাল। বুক-পেট চকচকে ধূসর-সাদা। লেজের আগা ছাই-ধূসর ও সাদা। ছিপছিপে গড়নের লম্বাটে সরু ডানা এদের, পা খাটো। পিঠ-ডানার উপরিভাগ চকচকে ধূসর। মূল খাদ্য মাছ। পোকামাকড়-কীটপতঙ্গসহ ছোট ব্যাঙও খায়। নাম যদিও গাঙচিল, গাঙে গাঙেই ঘোরে, কিন্তু পছন্দ বেশি মিষ্টি পানির হাওর-বাঁওড়-বিল জলাশয়।
কোলাহলপ্রিয় পাখি। এদের ডাকের সঙ্গে অনায়াসে মিলিয়ে নেওয়া যাবে ‘কী হইছে, কী হইছে? মাছ মিলেছে, মাছ মিলেছে? মাছ গিলেছে, মাছ গিলেছে’জাতীয় শব্দকে।
মাটির ওপরে বাসা। ডিম পাড়ে দু-চারটি। বালুরঙা ডিম, তাতে সবুজাভ ছাইরঙা আভা, বেগুনি-বাদামি ছিট ছোপ। দুজনেই তা দেয় ডিমে। ১৮-১৯ দিনে ছানা ফোটে। এদের ইংরেজি নাম River tern. বৈজ্ঞানিক নাম Sterna aurantia. মাপ ৩৮-৪৬ সেন্টিমিটার।
fahad.faisal:
Thanks a lot for the informative post.
Navigation
[0] Message Index
Go to full version