Entertainment & Discussions > Story, Article & Poetry
কবিতা........৩২ নম্বর মেঘের ওপারে
(1/1)
akazad600:
কবিতা
৩২ নম্বর মেঘের ওপারে
আনিসুল হক
তার ওপরে মেঘ,
মেঘের মধ্যে বাড়ি—
৩২ নম্বর মেঘমহল।
৩২ নম্বরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনি।
আপনার গায়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি,
চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা,
হাতে পাইপ।
ছাদের কিনারে সানসেটে উড়ছে কবুতরগুলো।
উঠানে সাইকেল-রিকশা চালাচ্ছে লাল সোয়েটার পরা রাসেল।
পানের ডিব্বা নিয়ে ডাইনিং টেবিলের পাশের গোল টেবিলটাতে সুপারি কাটায় ব্যস্ত আপনার রেণু।
জামাল মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ের সময় পাওয়া ক্যাপটা পরে আয়নায় তাকাচ্ছেন।
ছাদের ঘরে বেহালা বাজাচ্ছেন কামাল। মেঘে মেঘে ছড়িয়ে পড়ছে বেহালার মূর্ছনা।
আকাশের ওপারে আকাশ, তার ওপরে মেঘ,
মেঘের মধ্যে বাড়ি—৩২ নম্বর মেঘমহল।
সেইখানে দোতলার ঝুল-বারান্দায় দাঁড়িয়ে
পুরু লেন্সের ভেতর থেকে পূর্ণ চোখে তাকিয়ে আপনি দেখছেন...
.যেমন করে দেখেছিলেন
একাত্তরের মার্চে ওড়ানো সবুজের মধ্যে লাল সূর্য আর হলুদ মানচিত্রখচিত পতাকা;
যেমন করে তাকিয়ে দেখেছিলেন সত্তরে একাত্তরে রোজ আপনার নির্দেশের অপেক্ষায়
৩২ নম্বর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা স্বাধীনতা-পাগল মানুষগুলোকে;
যেমন করে সাতই মার্চের মঞ্চে দাঁড়িয়ে লক্ষ-কোটি চোখে দেখতে পেয়েছিলেন
একটা জাতির জন্মের ফুল ফোটা;
যেন আপনি রিলকে, পৃথিবীর শেষতম কবি যিনি
শিল্পীর মগ্নতা নিয়ে নিরীক্ষণ করেন কী করে কলি থেকে পাপড়ি উন্মীলিত হয়, ফুটে ওঠে ফুল।
আকাশের ওপারে আকাশে
মেঘমহলের ৩২ নম্বরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনি তাকিয়ে আছেন—
বারবার দেখেও আপনার আশ মিটছে না;
শিল্পী যেমন ছবি আঁকা শেষ করে ক্যানভাস থেকে দূরে গিয়ে পুরোটা ছবি বারবার করে দেখেন;
লেখা সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরও রবীন্দ্রনাথ যেমন বারবার পড়তেন তাঁর কবিতা
আর পাণ্ডুলিপিটাকে বানিয়ে ফেলতেন একটা আস্ত শিল্পকর্ম;
তেমনি করে আপনি দেখছেন
আপনার আঁকা ছবিটাকে
দূর থেকে, কিন্তু পূর্ণ চোখে।
তেমনি করে আপনি পড়ছেন আপনার লেখা কবিতাটাকে।
অপার্থিব শিল্পসুষমায় অপরূপ দিব্যকান্তি
আপনি দেখছেন কী রকম জ্বলজ্বল করছে আপনার শিল্পকর্মখানি—
দেখছেন কী রকম করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে বাঙালিরা—
দেখছেন কী রকম মুক্ত কণ্ঠে তারা গাইছে আমার সোনার বাংলা—
স্বকণ্ঠে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনানোর
কবিজনোচিত উজ্জ্বলতা আর মগ্নতা অবয়বজুড়ে;
ভোরের সোনালি আলোয় কাঁচা-পাকা চুলে স্বর্গীয় দ্যুতি।
রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল আর জীবনানন্দ দাশের পাশে দাঁড়িয়ে আপনি বলছেন,
‘ওই দেখুন, ওই যে আমার কবিতা—
কবিগুরু, ওই যে আপনার সোনার বাংলা,
বিদ্রোহী কবি, ওই যে আপনার জয় বাংলা,
জীবনানন্দ বাবু, ওই যে আপনার রূপসী বাংলা,
ওই তো আমার কবিতা আমার কবিতার নাম বাংলাদেশ,
ওই তো আমার কবিতা আমার কবিতার নাম বাংলাদেশ,
ওই তো আমার কবিতা আমার কবিতার নাম বাংলাদেশ,
চির অপরূপ চির মধুর চির অপরাজেয় বাংলাদেশ।’
আপনি চশমা খুলে হাতে নিলেন,
আপনার উজ্জ্বল চোখ দুটি থেকে গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা অশ্রু।
অনেক নিচে মর্ত্যের এক চার কোনা ঘরে লেখার টেবিলে বসে আছি—
আমার চোখ ভিজে গেল
আমি পাশ-টেবিলে রাখা বাংলাদেশের পতাকাটা বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
কে বলেছে আপনি নাই, এই তো আপনি আছেন—এইখানে,
সবখানে, সমস্ত বাংলায়—
এইখানে বাংলার লাল ও সবুজে
আমাদের অশ্রু আর ভালোবাসায়,
আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার
আর এগিয়ে যাওয়ার অমোঘ মন্ত্রে—
‘মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না...’
Farhadalam:
Heart touching poem.
Nargis Akter:
excellent
Saujanna Jafreen:
nice one.... :)
Israk Zahan Papia:
Nice.
Navigation
[0] Message Index
Go to full version