ইলেকট্রনিক বর্জ্য কত বড় সমস্যা?

Author Topic: ইলেকট্রনিক বর্জ্য কত বড় সমস্যা?  (Read 1060 times)

Offline subrata.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 255
  • Test
    • View Profile
    • https://www.daffodilvarsity.edu.bd/
বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি হয়েছে ১৯৭৭ সালে। একই বছর গঠিত হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ১৯৯২ সালে গ্রহণ করা হয়েছে জাতীয় পরিবেশ নীতি। ১৯৯৫ সালে কার্যকর হয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন। ১৯৯৭ সালে তৈরি করা হয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা। শিল্পকারখানার পরিবেশদূষণকারী বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য—প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নানা রকমের আদেশ-বিধান ও দিকনির্দেশনা রয়েছে পরিবেশ–সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনি দলিলে। কিন্তু সেসব দলিলের কোথাও ইলেকট্রনিক বর্জ্য সম্পর্কে কোনো কথা উচ্চারিত হয়নি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন-অগ্রগতির ডিজিটাল স্তরে প্রবেশ করেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, এবং আমরা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি এমন এক পরিস্থিতির দিকে, যা সম্পর্কে এখনই সচেতন না হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন বিরাট ঝুঁকির মুখোমুখি হবে।

১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ১৩ কোটি মুঠোফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটার, মনিটর, প্রিন্টার, ফটোকপিয়ার, টেলিভিশন সেট, ভিসিডি-ডিভিডি প্লেয়ার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, রেফ্রিজারেটর, নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক খেলনা, ডিজিটাল ক্যামেরা, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি—আধুনিক মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য সব ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবহার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অনেক বেড়েছে এবং দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। যে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ একসময় পেট পুরে তিন বেলা খাবার পেত না, সেই দেশে আধুনিক প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার এত বেড়েছে—এটা যে অনেক বড় আনন্দের বিষয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এর উল্টো পিঠও আছে: সব ধরনের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেগুলো যে বর্জ্য পদার্থে পরিণত হয় এবং সেসব বর্জ্যেরও যে সুব্যবস্থাপনা দরকার—এই সচেতনতা এ দেশে গড়ে ওঠেনি। এমনকি ইলেকট্রনিক বর্জ্য (ই-বর্জ্য) কথাটাই এ দেশের অধিকাংশ মানুষের এখনো অজানা রয়ে গেছে। এটা যে কত বড় বিপদের কথা, তা অনুধাবন করা দরকার।

পৃথিবী একটা ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ হয়ে উঠেছে দুই দশকেরও বেশি আগে। পুঁজি ও প্রযুক্তির চলাচল হয়েছে অবাধ। সুতরাং বাংলাদেশে এখন ১৩ কোটি মুঠোফোন—এই তথ্য এখন আর কাউকে বিস্মিত করে না। বিস্মিত হতে হয়, যখন দেখি যে প্রতিবছর ২৫-৩০ শতাংশ মুঠোফোনের ব্যবহারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেগুলো কোথায় যাচ্ছে তা অধিকাংশ মানুষই জানে না, জানার প্রয়োজনও বোধ করে না। শুধু মুঠোফোন নয়, কম্পিউটারসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতিতে অনেক ধাতব ও রাসায়নিক উপাদান থাকে। যন্ত্রগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে সেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা না হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যে ক্ষতিকর অবস্থা তৈরি হতে পারে, তা সম্পর্কে শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলো অনেক আগেই সচেতন হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনেক ধরনের আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়ন করেছে। শুধু তা–ই নয়, অনেক ধনী ও চালাক দেশ তাদের ইলেকট্রনিক বর্জ্য নানা কারসাজির মাধ্যমে রপ্তানি করছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) বরাত দিয়ে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা গত বছর মে মাসে এক প্রতিবেদনে লিখেছিল, ২০১৪ সালে পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত ইলেট্রনিক বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ২ লাখ মেট্রিক টন। এর সিংহভাগ উৎপন্ন হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতে, কিন্তু ৯০ শতাংশই রপ্তানি বা ‘ডাম্প’ করা হয়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিস লিখেছে, উন্নত দেশগুলো তাদের উৎপাদিত ইলেকট্রনিক বর্জ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রপ্তানি করে আসছে এক দশকেরও বেশি সময় আগে থেকে। ব্যবহৃত বা সেকেন্ডহ্যান্ড কম্পিউটার, মুঠোফোন ইত্যাদি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তারা এশিয়া ও আফ্রিকার অপেক্ষাকৃত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রপ্তানি বা পাচার করার মাধ্যমে সেগুলো নিষ্কাশনের উপায় খোঁজে।

বাংলাদেশে সস্তা ও স্বল্পস্থায়ী মুঠোফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি ইলেকট্রনিক পণ্য আসে মূলত চীন, দক্ষিণ, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে। ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার শীর্ষে থাকা দেশ নরওয়ে, সুইডেনসহ উন্নত দেশগুলো বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ভাগাড়ে রাখা, রিসাইক্লিং কারখানা স্থাপন করা প্রভৃতি পদক্ষেপের পাশাপাশি এসব পণ্য উৎপাদনের পর্যায়েও কিছু বিধিবিধান করেছে। যেমন, তারা উৎপাদকদের টেকসই বা দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রপাতি উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতেও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ‘লাইফস্প্যান’ বাড়ানোকে ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সহায়ক একটা ভালো পন্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

১৩ কোটি মুঠোফোনের ব্যবহারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ১৩ কোটি ব্যাটারি কোথায় যাবে—এ কথা ভাবলেই আন্দাজ করা যাবে বাংলাদেশের মতো অতিরিক্ত জনঘনত্বের এই দেশে ইলেকট্রনিক বর্জ্য ভবিষ্যতে কত বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। মাটি, পানি, বাতাসসহ পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশই মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ইলেকট্রনিক বর্জ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ, পুনঃপ্রক্রিয়া ও নিষ্কাশন করা না হলে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত সিসা, সিসার অক্সাইড, পারদ, ক্যাডমিয়াম, বেরিলিয়াম, বেরিয়ামসহ নানা ধরনের ভারী ধাতু ও রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যেগুলো মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, যকৃৎ, বৃক্ক, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, ত্বক, পরিপাকতন্ত্র ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতির সুফল পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে যেমন সীমাবদ্ধ নেই, তেমনই তার ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোও সব অঞ্চলেই ঘটতে বাধ্য। কিন্তু উন্নত দেশগুলো ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা দূরদর্শী, ভবিষ্যতের সমস্যা তারা আগে থেকেই অনুমান করতে পারে। সেসব সমস্যা মোকাবিলার পরিকল্পনাও তারা আগে থেকেই করে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতিকে তারা নিজেদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ করে তুলতে সচেষ্ট। আমরা যদি সামনের বিপদ দেখতে না পাই, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক বর্জ্যের পাহাড় একটা সময় আমাদের জন্য এক বিরাট অভিশাপ হয়ে উঠতে পারে।

Courtesy: prothom-alo
Subrata Banik
Lecturer (Physics)
Department of General Educational Development

Offline Fahmida Hossain

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 122
  • Test
    • View Profile
good post