খেলনা শুধুই ‘খেলনা’ নয়

Author Topic: খেলনা শুধুই ‘খেলনা’ নয়  (Read 1704 times)

Offline sanjida.dhaka

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 228
    • View Profile
খেলনা শুধুই ‘খেলনা’ নয়
« on: September 04, 2016, 04:25:51 PM »


শিশুকে অনেক রকম খেলনাই তো কিনে দিচ্ছেন। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, খেলনাগুলো তার বয়স-উপযোগী কি না? সঠিক মানসিক বিকাশে সহায়তা করছে তো? শিশু বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে উত্তর খুঁজেছেন পিন্টু রঞ্জন অর্ক -

শিশুর মানসিক বিকাশ, ধ্যান-ধারণা সব কিছুরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার খেলাধুলা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে। শিশুরা খেলনা বলতে পাগল। অনেক শিশু আছে, যারা খেলনা ছাড়া ঘুমায় না, খায় না, এমনকি পড়তেও বসে না। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (আইইআর) অধ্যাপক মু. নাজমুল হক বললেন, ‘একটি শিশুর পাঁচ রকমের বিকাশ হয়—মানসিক, জ্ঞানীয়, সামাজিক, আবেগিক ও ভাষার বিকাশ। খেলা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর এ ধরনের বিকাশ পরিপূর্ণতা পায়। এই মিথস্ক্রিয়া আবার দুই ধরনের। প্রথমত, ব্যক্তির সঙ্গে, দ্বিতীয়ত, বস্তুর সঙ্গে। ফলে খেলা ও খেলনা দুটিই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য অপরিহার্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘মা-বাবার উচিত শিশুর হাতে এমন খেলনা তুলে দেওয়া, যেগুলো তাকে নতুন কিছু ভাবতে শেখায় এবং তার চারপাশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়তা করে।’ -



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজির শিক্ষক নাজিফা ফেরদৌসী বললেন, ‘শিশুদের হাতে বয়স-উপযোগী খেলনা তুলে দেওয়া জরুরি। বিদেশে খেলনার প্যাকেটে বা লেবেলে লেখা থাকে কোন বয়সী শিশুর জন্য উপযোগী। আমাদের দেশে এখনো সে চল হয়নি। তাই অভিভাবকদেরই এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। দেখতে হবে, যে খেলনাটা তুলে দিচ্ছেন সেটাতে শিশুর ডেভেলপমেন্টটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না।’ তিনি আরো বলেন, নিছক খেলাই নয়, শিশুর হাতে খেলনা তুলে দেওয়ার অনেক উদ্দেশ্য আছে। এর মধ্যে তার ঠিকমতো দেখা, শোনা, বলা ও বুঝতে পারার বিষয়টি জড়িত। অনেক অভিভাবকই অনেক পরে বুঝতে পারেন, তাঁদের শিশু ঠিকমতো তাকাচ্ছে না, কথা বলছে না কিংবা শুনছে না। ফলে শুধু খেলনা তুলে দিলেই হলো না। এটা দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। বুঝতে হবে খেলনার শব্দ সে ঠিকমতো শুনছে কি না। শুনলে রেসপন্স করবে। খেলনা নিয়ে সে নাড়াচাড়া করছে কি না। তার আই মুভমেন্ট খেয়াল করতে হবে, সে ঠিকমতো তাকাচ্ছে কি না। -


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বললেন, ‘বিকাশ মানে হলো প্রত্যেকের রিয়েল ক্যাপাসিটি। একটা শিশু তার সামর্থ্যের সব কিছু ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছে কি না সেটাই আসলে দেখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে সামাজিকায়নের ওপর জোর দিতে হবে। ধরুন, একটি শিশু একা একা খেলছে। তাহলে তো তার সামাজিক ইন্টারেকশনটা হলো না। কিন্তু অনেকের সঙ্গে খেললে বিকাশটা যথাযথ হয়।’ বকশীবাজারের অগ্রগামী শিশু নিকেতনের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে রাতুল হাসান। ‘কোন খেলা তোমার ভালো লাগে?’—এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ছোট্ট রাতুল—‘ক্রিকেট খেলতে ইচ্ছা করে। বলও আছে, ব্যাটও আছে। কিন্তু খেলব কই?’ তার বাবা আমিরুল ইসলাম অভিযোগের সুরে বললেন, ‘আমরা তো কংক্রিটের জঙ্গলে বাস করি। ছেলেটাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু সেখানেও মাঠ বলতে কিছুই নেই।’ এ প্রসঙ্গে নাজিফা ফেরদৌসী বললেন, ‘মুভমেন্টের জন্য বাচ্চাকে নিয়ে খোলা মাঠ আছে—এমন জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন। আর বাড়ি কিংবা স্কুলে বাচ্চার মুভমেন্টের সুযোগ না থাকলে তাকে ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার কিংবা কারাতে শেখা যায়—এমন ক্লাব বা একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন।’ -


বয়স অনুযায়ী খেলনা   শূন্য থেকে দুই বছর একেবারে ছোট শিশুদের জন্য নরম, রঙিন, শব্দযুক্ত খেলনার কোনো বিকল্প নেই। কারণ ধারালো কিংবা শক্ত খেলনায় সে আঘাত পেতে পারে। অধ্যাপক নাজমুল হক বললেন, ‘একেবারেই ছোট শিশুরা মিক্সড কালার পছন্দ করে না। এদের জন্য লাল, নীল, হলুদসহ একরঙা খেলনা দিতে পারেন। এ বয়সের শিশুদের কখনোই সুতা বা তার জড়ানো বা পলিথিনে মোড়ানো খেলনা দেওয়া উচিত নয়। কেননা খেলার সময় অসাবধানতাবশত হাত-পায়ে বা গলায় জড়িয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তানজীর আহম্মদ তুষার বললেন, ‘জন্মের প্রথম মাস থেকেই শিশুদের ঝুলিয়ে রাখা যায়, শব্দ হয় এবং রংচঙে—এমন খেলনা দেওয়া যেতে পারে। বয়স ৮ থেকে ৯ মাস হলে হাতে ধরতে পারে—এমন খেলনা দিতে পারেন। আরেকটু বড় হলে একটু দূরে যায়—এমন খেলনা দিতে পারেন। এতে শিশুও খেলনার পিছু নেবে, তার শারীরিক বিকাশটা হবে।’ সোনামণি যখন দুইয়ে পা দেবে, তখন রঙিন ও একটু শক্ত ধরনের বই, ফোম বা প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা দেওয়া যেতে পারে। তবে খেলনার আকার এমন হওয়া উচিত না, যা শিশুরা গিলে ফেলতে পারে। কারণ এ সময় শিশুরা যা পায় তা মুখে দিতে চায়। খেলনা যেন অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।




তিন থেকে আট বয়স তিনের কোঠায় পৌঁছলে ড্রয়িং খাতা ও বড় পেনসিল দেবেন আঁকাআঁকির জন্য। সেই সঙ্গে টেনে নেওয়া যায়—এমন খেলনা গাড়িও দিতে পারেন। তানজির আহম্মদ জানালেন, এ সময় বাচ্চাকে প্লাস্টিকের বল, বেলুন, ফুটবল ইত্যাদি দিয়ে পা দিয়ে লাথি মারা, হাত দিয়ে ছুড়ে মারা শেখাতে পারেন।’ চার থেকে পাঁচে পা দিলে তার জন্য বিল্ডিং বক্স ও ক্লে মডেলিং কিট জাতীয় খেলনা উত্তম। এতে সৃজনশীল চিন্তার প্রসার ঘটবে। ছয় থেকে আট বছর হলে তাকে সৃজনশীল খেলনা কিনে দিন। বাজারে নানা রঙের লেগো সেট পাওয়া যায়। টুকরা টুকরা লেগো জোড়া লাগিয়ে বাড়ি, গাড়ি ও নানা জিনিস তৈরি করা যায় এসব সেট দিয়ে। মজার এই খেলনাটি কিনে দিতে পারেন তাকে। সেই সঙ্গে বোর্ড গেম, পাজল দিলেও তার সময় কাটবে বেশ। এ ছাড়া সংখ্যা গোনার বেশকিছু খেলনা পাওয়া যায়। আবার কিছু খেলনা পাওয়া যায়, যেগুলো বর্ণমালা সংযুক্ত করে শব্দ বানানো যায়। এ ধরনের খেলনা শিশুর মেধা বিকাশে সহায়ক।




আট বা তার বেশি সোনামণির বয়স আটের বেশি হলে তাকে মাথা খাটিয়ে খেলতে হয়—এমন কিছু খেলনা দিন। এ ক্ষেত্রে দাবা খেলা, লুডু খেলা শিখিয়ে দিতে পারেন। বুদ্ধি খাটিয়ে এগোতে হয় বলে এ ধরনের খেলা বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া সুডোকু বা ক্রস ওয়ার্ডও আপনার সন্তানের বুদ্ধির বিকাশের জন্য উপযুক্ত খেলা। পাশাপাশি এই খেলাগুলো শিশুর শব্দ ও সংখ্যার জ্ঞান বৃদ্ধি করে। এ সময় তাকে সাইকেল কিনে দিতে পারেন। এসব সাইকেলে শিশুর বুদ্ধি বিকাশের পাশাপাশি তার শারীরিক সক্ষমতা তৈরিতে সহায়ক। বয়স ১০ থেকে ১২ হলে, তাকে তার শখসংক্রান্ত জিনিসপত্র দিতে পারেন, যা নিয়ে সে অবসর কাটাতে পারে। দিতে পারেন বাইনোকুলারসহ তার পছন্দের নানা খেলনা। অ্যাডভেঞ্চার জাতীয় বইও দিতে পারেন অনায়াসে। এতে তার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। তবে অধ্যাপক নাজমুল হক বলেন, ‘আগে মা-বাবা নিজেরা পড়ে শিশুর সামনে নানা গল্প করতেন। মা-বাবা না পড়লে শিশুকে পড়াশোনায় মোটিভেট করা যাবে না।’ -





ছেলেমেয়ে বিভেদ নয় বাচ্চার হাতে কোন ধরনের খেলনা তুলে দিচ্ছেন এটাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক অভিভাবক তাঁর ছেলে গাড়ি আর মেয়েকে কিচেন সেট বা হাঁড়ি-পাতিল কিনে দেন। অধ্যাপক নাজমুল হকের ভাষ্য হলো, ‘এতে করে ছোটবেলা থেকেই শিশুর মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের প্রবণতা তৈরি হয়। ফলে খেলনা বাছাইয়ে জেন্ডার ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। বাচ্চা ছেলে যদি বার্বি সেট বা কিচেন সেট নিয়ে খেলে বা মেয়ে যদি গাড়ি বা হেলিকপ্টার নিয়ে মজে থাকে—ক্ষতি কী!’   ধ্বংসাত্মক কোনো কিছু নয় অনেকেই বাচ্চার হাতে রেসিং কার, পিস্তল বা বন্দুক, ছুরি জাতীয় খেলনা তুলে দেন। নাজিফা ফেরদৌসীর পরামর্শ হলো—বাচ্চাদের এ ধরনের ধ্বংসাত্মক খেলনা না দেওয়া ভালো। কারণ এগুলো শিশুর মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিতে পারে। তানজীর আহম্মদ তুষার বললেন, এ ধরনের খেলনা শিশু মনে এক ধরনের আগ্রাসী মনোভাব তৈরি করতে পারে। ফলে এসবের পরিবর্তে খেলনা মোবাইল, হেলিকপ্টার, ডক্টর সেট ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। -


খেলনা বাছাই করবেন যেভাবে শিশুর জন্য অটোমেটেড খেলনা পরিহার করাই ভালো। কারণ এ ধরনের খেলনা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাজ করে বলে এতে বাচ্চার কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে না। শিশুর জন্য এমন খেলনা কিনুন যেটাতে তার নিজের কিছু করার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে লেগো সেট, আর্কিটেকচার সেট, বিভিন্ন রকমের পাজল, বার্বি সেট, কিচেন সেট, মেকিং টয়, ডলস হাউস হতে পারে ভালো বিকল্প। অনেক শিশুকেই দেখা যায় ভিডিও গেমসে আসক্ত। অধ্যাপক নাজমুল হক বলেন, এ ধরনের খেলাগুলোকে বলা হয় আসক্তিমূলক খেলা। কারণ এগুলো ক্রমান্বয়ে শিশুদের আসক্তি সৃষ্টি করে। গেমসের নির্মাতারা এর মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার আয় করে। এগুলো পরিহার করাই উত্তম। তানজীর আহম্মদের পরামর্শ হলো ‘দুই থেকে চার বছরের বাচ্চাদের কোনো মতে কম্পিউটার বা ট্যাবের মতো স্ক্রিন গেমে অভ্যস্ত করা যাবে না।’ সহজে অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে এমন খেলনা বাদ দিন। ব্যাটারিচালিত খেলনা পরিহার করা ভালো। কারণ এ ধরনের খেলনা থেকে তৈরি হওয়া শব্দ শিশুর মস্তিষ্কে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমন খেলনা বাছাই করুন, যা শিশু ইচ্ছামতো মজা করে খেলতে পারে। যেমন—ভবন নির্মাণসামগ্রীর আদলে বানানো খেলনা, ব্লক ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে খেলার সঙ্গে শিশু যে বিষয়টি শেখে তা বহু দিন শিশুর মস্তিষ্ককে পরিচালনা করে। খুব বেশি নড়াচড়া করে এমন খেলনাও দিতে পারেন। তাতে বাচ্চার শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস তৈরি হবে। অতিরিক্ত খেলনা কিনে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। বহু খেলনা থাকলে শিশু সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, যা তাকে এক রকম বিব্রত করে। -


খেয়াল রাখুন ♦    দেখতে ভালো লাগছে বলেই কিনে ফেলবেন না। আগে প্যাকেটের লেবেলটি ভালোভাবে পড়ে নিন। খেলনাটি কত বছরের শিশুর খেলার উপযুক্ত এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবে—এসব নানা তথ্য লেবেল থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন। ♦    শিশুরা কিছু পেলেই সেটা মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই খেলনা বা খেলনার অংশ যেন শিশুর হাঁ-মুখের চেয়ে ছোট না হয়, ব্যাপারটি বিবেচনায় রাখুন। কেননা ছোট হলে মুখে দেওয়ার পর গলায় আটকে যেতে পারে। ♦    উচ্চ স্বরে শব্দ হয়—এমন কোনো খেলনা না কেনাই ভালো। এটা শিশুর শ্রবণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ♦    শূন্যে ছুড়ে দেওয়া যায়—এমন খেলনা শিশুর হাতে দেওয়া ঠিক না। কারণ চোখে আঘাত লেগে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। ♦    কাপড়ের পুতুল বা এ জাতীয় খেলনা কেনার আগে দেখে নিন ময়লা হলে সেটি সহজেই ধোয়া যাবে কি না, সেলাই ঠিকঠাক আছে কি না। ♦    প্লাস্টিকের খেলনা কেনার আগে দেখে নিন কোনো অংশ ভাঙা আছে কি না। এর রং শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কি না। - See more at: http://www.kalerkantho.com/feature/a2z/2015/12/28/306595#sthash.KJ9bKcTn.dpuf

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
Re: খেলনা শুধুই ‘খেলনা’ নয়
« Reply #1 on: September 06, 2016, 08:58:43 AM »
Very informative...