প্রাথমিক হিসাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আগেই অর্জিত হয়েছিল। এখন চূড়ান্ত হিসাবে প্রাথমিককে ছাড়িয়ে গেছে। এখন বাস্তবতা হলো, গত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
বাজেটের সময় বিভিন্ন খাতের গত অর্থবছরে প্রথম ছয় থেকে নয় মাসে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হবে বলে সাময়িক হিসাব দিয়েছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অর্থবছর শেষ হওয়ার চার মাসের মাথায় বিবিএস চূড়ান্ত হিসাব করে দেখেছে, এ প্রবৃদ্ধি আরও বেড়েছে। অথচ বছর শুরু হওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী বাজেটের সময় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন। এর মানে হলো, অর্থমন্ত্রীর আকাঙ্ক্ষার চেয়ে অর্থনীতি ভালো চলেছে।
গতকাল মঙ্গলবার গত অর্থবছরের জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জিডিপি প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত হিসাব দেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির সব খাত ভালো করায় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা রেকর্ড কি না আমি তা বলব না।’
বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমলেও শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। শিল্প খাতে ১১ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
গত অর্থবছর চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ১২ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। আর স্থিরমূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। গত বছর মোটা দাগে শিল্প, সেবা ও কৃষি খাত থেকে এ সমপরিমাণ অর্থের পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে এসেছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা (স্থিরমূল্যে)। আর শিল্প খাতের অবদান ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত অর্থবছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৫৮১ কোটি টাকার সেবা সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষি, বনায়ন, মৎস্য, শিল্প উৎপাদন, খনিজ উৎপাদন, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সরবরাহ, নির্মাণ, পরিবহন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আবাসন, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড—এ ১৫টি উপখাত ধরে জিডিপি গণনা করা হয়। গত বছর এ ১৫টি খাতেই আগের বছরের চেয়ে বেশি পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারদর্শিতা দেখিয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাত। এ খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে। এ খাত থেকে জিডিপিতে অবদান গতবার স্থিরমূল্যে ১২ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।
বিবিএস আরও জানিয়েছে, গত অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার। গত জুনের সাময়িক হিসাব থেকে মাথাপিছু আয় ১ ডলার কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ ডলার। ১ ডলার কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ডলারের দাম কমে যাওয়ায় মাথাপিছু আয় কমেছে।