ক্রীড়া প্রতিবেদক : রোড মার্চ বললে অত্যুক্তি হবে না। কাল দুপুর দেড়টায় বাংলাদেশ দল মিরপুরের শেরেবাংলায় ঢোকার কিছু পরেই তো ‘রোড টু উইকেট’ শুরু। কোচ, নির্বাচক, অধিনায়ক থেকে শুরু করে ট্রেনারকেও দেখা গেল উইকেটে উঁকি মারতে। এমনিতেই বাংলাদেশে উইকেট নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়। সে ধারাবাহিকতায় এবার চট্টগ্রাম টেস্টের পর চলমান উচ্চতর গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি মিলে যাওয়ার কথা সবার!
তবে এ দেশে মাঠপর্যায়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি একজনেরই, গামিনি ডি সিলভার। জন্মসূত্রে শ্রীলঙ্কান, তাই বিদেশি এবং সে কারণে বেতনও বেশি বিসিবির প্রধান পিচ প্রস্তুতকারকের। অবশ্য কী কারণে যেন এ দেশে শ্রীলঙ্কানরা পুরোপুরি ‘বিদেশি’র মর্যাদা পান না! অন্তত মিরপুরের উইকেটের মূল নির্মাতা অস্ট্রেলিয়ার ডি উইন্টার ও গামিনির পারিশ্রমিক সেরকম ইঙ্গিতই দেয়। তবু শ্রীলঙ্কানের বেতন বিসিবির অধীন স্থানীয় কিউরেটরদের তুলনায় হাস্যকর রকম বেশি। উল্টোটাও বলা যায়, গামিনির তুলনায় হাস্যকর রকম কম বেতন পান জাহিদ রেজা বাবু। অবশ্য এ বৈষম্য তো ক্রিকেটের সর্বত্র। বিদেশি কোচ-কিউরেটরই শুধু নন, বিপিএলে সাকিব আল হাসানের প্রায় দ্বিগুণ পারিশ্রমিক নাকি পাবেন আন্দ্রে রাসেল!
অবশ্য বেতন কম হতে পারে, তবে চট্টগ্রাম টেস্ট পরবর্তী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সমাজে তিনি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা কিউরেটরের মর্যাদা পেয়ে গেছেন। বাংলাদেশ দলও ভীষণ সন্তুষ্ট। চারদিকে তাই একই ধ্বনি, ‘চট্টগ্রামের উইকেট চাই ঢাকায়।’ আঁচ পাওয়া যাচ্ছে যে একটু গড়বড় হলে সমালোচনার তোড়ে হাড়গোড় বেরিয়ে পড়ার কথা গামিনির। এ শ্রীলঙ্কান অবশ্য মিডিয়াকে সযতনে এড়িয়ে চলেন, বেশি আগ্রহ তাঁর মাঠের পরিচর্যাতেই। তাই চট্টগ্রাম টেস্ট পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গামিনির রক্তচাপ বেড়ে গেছে কি না, জানা যায়নি।
উইকেট নিয়ে এ ধুন্ধুমার ক্রিকেটারদের কানেও যাচ্ছে। গতকাল মিডিয়ার জন্য টিম ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে বরাদ্দ তামিম ইকবালের কাছে যেমন উইকেট-সংক্রান্ত প্রশ্নই গেল অনেকগুলো। তাতে জাতীয় দলের বাঁহাতি এ ওপেনার একসময় বলেই ফেললেন, ‘উইকেট নিজেদের পছন্দমতো হলেই তো হবে না, আমাদের ভালো খেলতেও হবে। আমরা ভালো না খেললে পছন্দের উইকেট দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’ তার মানে বাইরের শোরগোলে কান পেতে বসে নেই ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রামের চ্যালেঞ্জিং উইকেটে যেমন লড়ে রান করেছেন তামিম-সাব্বিররা, দলের ব্যাটিং পরিমণ্ডলে ঢাকা টেস্ট-সংক্রান্ত আলোচনাতেও গুরুত্ব পাচ্ছে এই পেশাদারি। বলেও দিলেন তামিম, ‘উইকেট কঠিন হলে সতর্ক থেকে রান করতে হবে। ব্যাটিং সহায়ক হলে প্রত্যেককে চেষ্টা করতে হবে বড় ইনিংস খেলার। চট্টগ্রামে আমরা ব্যাটসম্যানরা সবাই যদি ১০-১৫টা করে বেশি রান করতাম, তাহলে ফল অন্য রকম হতো। আসলে সবটা আমাদের ওপর। যতই পরিকল্পনা করি না কেন, মাঠে সেসব অ্যাপ্লাই না করতে পারলে কোনো লাভ নেই।’
এটা তামিমের, বড় পর্দায় পুরো দলের থিম। তবে ঘরের মাঠ যখন, তখন কিউরেটরের কাছে প্রত্যাশাও আছে তাঁর, ‘দেখেন, ইংল্যান্ডে গেলে তো ওরা আমাদের জন্য স্পিনিং ট্র্যাক বানাবে না, সিমিং উইকেটই হবে। টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয় উইকেট কেমন হলে ভালো, সেটা ভাবছে। সেভাবেই হয়তো উইকেট তৈরি হবে। তবে আমি এখনো উইকেট দেখিনি। তাই বলতে পারছি না উইকেটটা ঠিক কেমন হবে।’ দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অবশ্য তামিম জানেন মিরপুরে ইংলিশ পেসারদের জন্য সুইং বরাদ্দ থাকবে না। দলের চাহিদাপত্র অনুযায়ী স্লো টার্নার বানানোরই কথা গামিনির। অন্তত নতুন রেসিপিতে যে উইকেট তৈরি হচ্ছে, ওপরিভাগের রঙে সে ইঙ্গিত রয়েছে। মিরপুরের উইকেট কালো মাটির। কিন্তু টেস্ট শুরুর দুই দিন আগেও অভাবিত বাদামি রং নিয়েছে উইকেট। সাধারণত এ সময়টায় কিছু ঘাস-টাস থাকে উইকেটের ওপর। দূর থেকে দেখেও বোঝা যায় সেসব আর নেই। উল্টো পানিশূন্যতায় খটখটে রূপ নিয়েছে শেরেবাংলার উইকেট।
শুকনো উইকেটে একটা ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে। উইকেট নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে আসা একজনের অভিব্যক্তিতে চাপা উদ্বেগ মিশে, ‘এখনই ক্র্যাক দেখা যাচ্ছে!’ ৪৮ ঘণ্টা আগেই যদি তেষ্টায় বুক ফেটে যাওয়া উইকেটের তাহলে ম্যাচ শুরুর পর কী হবে ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। চট্টগ্রামের উইকেটে ফাটল আর বাড়েনি। কিন্তু মাটির ভিন্নতার কারণে ম্যাচের সঙ্গে সঙ্গে ফাটলের মুখ হাঁ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, তাতে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ই পেরোতে হবে ব্যাটসম্যানদের।
অবশ্য তামিম তো ভরসা দিয়েছেনই, ‘আমাদের ভালো খেলতে হবে।’ তিনি এ-ও বিশ্বাস করেন, ‘দুই দলও খেলবে একই উইকেটে।’ সম্ভাবনার পাল্লাটা তাই একই সমতলে থাকছে, বাংলাদেশ কিংবা ইংল্যান্ডের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার।
