Business Profit & Ethics

Author Topic: Business Profit & Ethics  (Read 1855 times)

Offline Shamim Ansary

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 3746
  • Change Yourself, the whole will be changed
    • View Profile
Business Profit & Ethics
« on: November 16, 2016, 01:12:18 PM »
ব্যবসায় মুনাফা ও নৈতিকতা
আবু তাহের খান
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘আর্থিক খাতে নৈতিকতা—একটি বৈপরীত্য’ শীর্ষক নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) সাবেক গভর্নর দুভুরি সুব্বারাও বলেছেন, ‘নৈতিকতা ধরে রেখে ব্যবসা করলে মুনাফা করা সম্ভব নয়—এ ধারণা ঠিক নয়, বরং এর উল্টোটাই সত্যি।’ বাংলাদেশের ব্যবসায় ও আর্থিক খাতে বিরাজমান নানা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অনৈতিকতার প্রেক্ষাপটে সুব্বারাওয়ের এ বক্তব্য খুবই প্রণিধানযোগ্য।

বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা, আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী জনগণের মাথাপিছু বার্ষিক আয় হচ্ছে এক হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার বা ১৪ হাজার ২৭০ টাকা (ডলারের বিনিময় হার ৭৮ টাকা ধরে)। সে হিসাবে জনগণের মাথাপিছু মাসিক আয় দাঁড়াচ্ছে ৯ হাজার ৫২২ টাকা। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ১৮ শতাংশ মানুষের আয়ের সঙ্গে মিলিয়ে হিসাব করা মাথাপিছু গড় আয়ের চেয়েও এ মজুরির পরিমাণ চার হাজার ৩২২ টাকা কম অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক।

মজুরির এ পরিমাণটি শ্রমিক, সরকার ও উদ্যোক্তা—এই তিন পক্ষের মিলিত সিদ্ধান্তেই নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রথমেই জিজ্ঞাস্য হয়ে দাঁড়ায়, এ-বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক প্রতিনিধিরা কি শ্রমিকদের প্রকৃত প্রয়োজন ও মতামতকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন? না, পারেননি। কারণ ব্যক্তিগত স্বার্থ, পারিপার্শ্বিকতা প্রভৃতি  কারণে তাঁরা নিজেরাই আপসকামী। ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রকৃত চাহিদার পরিমাণটি তাঁরা আদৌ তুলে ধরতে পারেননি। ফলে মানতেই হবে যে শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের জায়গাটিতে নানা ত্রুটি ও উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের সমস্যা রয়েছে।

দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কি শ্রমিক স্বার্থের অনুগামী? এখানে বলে নেওয়া প্রয়োজন যে পোশাক খাতে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণেই হয়তো ন্যূনতম মজুরির সর্বশেষ এ পরিমাণটি শেষ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৩০০ টাকায় নির্ধারিত হতে পেরেছে। তা না হলে এটি হয়তো আরো কম হয়ে যেতে পারত। তার পরও বলব যে এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে যাঁরা প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা কি মনে করেন যে এক হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার মাথাপিছু গড় আয়ের এ দেশে একজন পোশাক শ্রমিকের পরিবারের ন্যূনতম ভরণপোষণ পাঁচ হাজার ৩০০ টাকায় করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে এটি তাঁরা করলেন কেন? তাহলে কি সেটাই প্রকারান্তরিক কথা যে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে সরকার শ্রমিকের পক্ষে নয়, পুঁজির পক্ষেই অবস্থান নেয়।

বাংলাদেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানার মালিক এখন পর্যন্ত শ্রমিক ঠকানো, কর ও শুল্ক ফাঁকি দেওয়া, কারচুপির মাধ্যমে বাড়তি নগদ ভর্তুকি গ্রহণ ইত্যাদিকে বাড়তি মুনাফা অর্জনের অন্যতম কৌশল বলে গণ্য করেন। বাংলাদেশে বর্তমানে এমন বেশ কিছু পোশাক কারখানা রয়েছে যেখানে শ্রমিকদের উল্লিখিত ন্যূনতম মজুরির তুলনায় অনেক বেশি মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে ওই সব কারখানার উত্পাদনশীলতার স্তর ও মুনাফার হারও অনেক বেশি (বিদেশি ক্রেতাদের কাছে সুনাম অর্জনের বিষয়টি তো রয়েছেই)। তার মানে এসব কারখানায় উদ্যোক্তারা কর্তৃক শ্রমিকের স্বার্থ যথাযথভাবে দেখাশোনা করায় সেখানে উত্পাদশীলতা ও মুনাফার হার দুই-ই বেড়ে গেছে। আর এ কথাটিই জোরের সঙ্গে বলতে চেয়েছেন দুভুরি সুব্বারাও তাঁর বক্তব্যে যে নৈতিকতা রক্ষা করেও মুনাফা করা সম্ভব। সুব্বারাওয়ের সঙ্গে বরং আরো যোগ করতে চাই যে উদ্যোক্তারা শ্রমিক স্বার্থ যত বেশি দেখবেন, শ্রমিকরাও উদ্যোক্তার স্বার্থের প্রতি তত বেশি পরিশ্রমী ও নিবেদিত হয়ে উঠবে, প্রকারান্তরে যা উদ্যোক্তার মুনাফার হারকেই শুধু বাড়াবে না—সংশ্লিষ্ট কারখানার নিরাপত্তা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় তারাই হয়ে উঠবে অন্যতম অনুঘটক। একই আলোচনা অন্যান্য খাত নিয়েও করা যায়।

সম্প্রতি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা দাবি তুলেছেন ব্যাংক কম্পানি আইন সংশোধন করে তাঁদের আজীবন পরিচালক থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত আমানতের অর্থে পরিচালিত ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা কমবেশি মাত্র ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করে আজীবন পরিচালক থাকতে চাইবেন—এটি কি নৈতিকতার পর্যায়ে পড়ে?

বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীস্বার্থবিরোধী যে নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে, তার মূলেও রয়েছে সীমাহীন অনৈতিকতা। নৈতিকতাবিহীন পথে এ খাতের মুনাফার একটি বড় অংশই লুটে নিচ্ছে এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সমিতি ও সংগঠনের চাঁদাবাজ নেতাকর্মীরা। আর সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম তো রয়েছেই। ঘটনা হচ্ছে যে এসব চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যয় পুষিয়ে নেওয়ার উপায় হিসেবে পরিবহন নেতাদের প্রকাশ্য বা গোপন আশীর্বাদ নিয়ে এর মালিকরা বহুদিন ধরেই বেছে নিচ্ছেন যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির সহজ উপায়টিকে। এতে যাত্রীদের যে শুধু বাড়তি ভাড়াই গুনতে হচ্ছে তা নয়, একই সঙ্গে তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানা হয়রানি ও দুর্ভোগও। অথচ মালিকরা যদি পরিবহন নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশের আশ্রয় না নিয়ে নীতিনৈতিকতা মেনে ব্যবসা করতেন, তাহলে চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের পেছনে অর্থ ব্যয় হতো না বলে একদিকে যেমন তাঁদের মুনাফার পরিমাণ বাড়ত, অন্যদিকে তেমনি অন্যায্য পন্থায় ভাড়া বৃদ্ধি ঘটত না বলে যাত্রীরাও যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু পরিবহন মালিকরা নৈতিকতার সে পথে হাঁটলে তো!

এবার আসা যাক রাষ্ট্রের নিজস্ব আচরণের মধ্যে লুকিয়ে থাকা উপরোক্ত ধরনের কিছু অনৈতিকতা প্রসঙ্গে। রাষ্ট্র নিজে মুনাফা করবে না ঠিকই, কিন্তু জনগণের কাছ থেকে আহৃত রাজস্ব ব্যবহার বা ব্যয় করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যতটা সাশ্রয়ী হতে পারবে ও সে সাশ্রয়ী ব্যয়ের মাধ্যমে যত বেশিসংখ্যক মানুষের জন্য বাড়তি উপযোগ সৃষ্টি হবে, সেটাই হবে রাষ্ট্রের ‘মুনাফা’। তো সেই ‘মুনাফা’ বাড়ানোর কথা বলে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বা ডাব্লিউটির পরামর্শে (নাকি কুপরামর্শ?) বাংলাদেশ কৃষির ওপর থেকে ব্যাপক হারে ভর্তুকি প্রত্যাহার করল ঠিকই, কিন্তু রপ্তানি বাড়ানোর নামে সাধারণ মানুষের করের পয়সায় বিভিন্ন খাতের তেলা মাথার উদ্যোক্তাদের প্রতিবছর যে পরিমাণ নগদ ভর্তুকি দেওয়া হয়ে থাকে, তাকে আর যাই বলা যাক, নীতিনৈতিকতা ও ন্যায্যতা বলা যায় না কিছুতেই।

সুব্বারাওয়ের বক্তব্যের রেশ ধরে তাই বলতে চাই, নীতিনৈতিকতা বজায় রেখেও ব্যবসায় মুনাফা করা সম্ভব এবং রাষ্ট্রের পক্ষে তা করাটা শুধু উচিতই নয়, সাংবিধানিক দায়িত্বও। আর রাষ্ট্রের বাড়তি দায়িত্ব হচ্ছে ব্যবসায়ীরা যাতে সব ধরনের নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অন্যায্য পন্থায় একচেটিয়া মুনাফা করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা। আর সেটি শুধু রোজার মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না, একে রাষ্ট্রের নীতি-কাঠামোর মধ্যেও ধারণ করতে হবে। নৈতিকতাবিহীন এ হীন মূল্যবোধ থেকে বের হতে না পারলে রাষ্ট্র ও সমাজ কোনোটাই যে রক্ষা পাবে না।



Source: http://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2016/11/16/429651
"Many thanks to Allah who gave us life after having given us death and (our) final return (on the Day of Qiyaamah (Judgement)) is to Him"