বিয়ে, কাবিন ও কিছু কথা ।

Author Topic: বিয়ে, কাবিন ও কিছু কথা ।  (Read 1181 times)

Offline Karim Sarker(Sohel)

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 521
  • Test
    • View Profile
বিয়ে, কাবিন ও কিছু কথা ।
« on: November 21, 2016, 03:54:39 PM »
নাগরিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে সব সম্প্রদায়ের বিয়ের নিবন্ধন প্রয়োজন। মুসলিম নারী ও পুরুষের বিয়ের নিবন্ধন আবশ্যক। কাজি বা রেজিস্ট্রারকে দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। বিয়ের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন শেষে বিবাহ রেজিস্ট্রার বা কাজি ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে বিবাহ নিবন্ধন বই পূরণ করবেন। পূরণ করার পর বর ও কনে বিবাহ নিবন্ধন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।

বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের ফলে বিয়ের সব তথ্য সরকারের তথ্যভাণ্ডারে নথিভুক্ত হয় বলে এর সত্যতা অস্বীকার করা যায় না। বিবাহে দুই পক্ষই; বিশেষ করে নারীরা আইনে প্রদত্ত সব সুরক্ষাসহ তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। স্ত্রী স্বামীর প্রতারণার শিকার হলে এই রেজিস্ট্রেশনের সনদ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। স্বামীর মৃত্যু-পরবর্তীকালে স্বামীর সম্পত্তির বৈধ অংশসহ অন্যান্য দাবি আদায়ে এই দলিলটি অত্যাবশ্যক। এমনকি তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের সময়ও বিবাহের রেজিস্ট্রেশন একটি অত্যাবশ্যকীয় দলিল।

বিয়ের এই রেজিস্ট্রেশনকে কাবিন বলা হয়। তবে এই কাবিন কিন্তু বিয়ের কোনো অংশ নয়। কাবিন ছাড়া বিয়ে করলে বিয়ে শুদ্ধ হবে, দাম্পত্য জীবন হালাল হবে। কাবিন হলো- প্রচলিত আইন অনুসারে বিয়ের একটা নিবন্ধন মাত্র। তাই ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- কাবিন করতে হলে পূর্বে বিয়ে করতে হবে। বিয়েই যদি সম্পাদিত না হয়ে থাকে, তাহলে নিবন্ধন কিসের হবে?

বিয়ে সম্পাদিত হওয়ার জন্য ন্যূনতম দু’জন সাক্ষীর সামনে প্রস্তাব উত্থাপন করতে হয় এবং তা কবুল করতে হয়। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দ্বারাই দু’জন নর-নারীর দাম্পত্য জীবন হালাল হওয়ার শরয়ি অনুমোদন লাভ করে। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ও শ্রুতিগোচরে প্রস্তাব উত্থাপন ও তা গ্রহণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিয়ে হয় না, সম্পর্ক হালাল হয় না, পারস্পরিক কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না।

আমাদের সমাজে প্রায়ই শোনা যায়, ‘কাবিন করে রেখেছি, বিয়ে কয়েক মাস পরে হবে।’ এটি অনুচিৎ একটি কাজ। কেননা, যেখানে বিয়েই হয়নি সেখানে কী নিবন্ধন করা হয়েছে? এ যৌক্তিক সমস্যা ছাড়াও বিয়ের আগে কাবিন করার আরও কিছু সমস্যা রয়েছে।

অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি কাজি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাগাদা দিতে থাকে, ‘কাবিনের কাজ শেষ করে ফেলুন। আমার জরুরি কাজ আছে। আমি চলে যাই। পরে আপনারা মসজিদের ইমাম সাহেবকে দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে নেবেন।’

মুসলিম বিয়ে নিবন্ধনের জন্য সরকার অনুমোদিত বিবাহ নিবন্ধন অফিসে সরকারি যে ফরম পূরণ করতে হয় তাতে অনেকগুলো কলাম আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- কত তারিখে বিয়ে সম্পাদিত হয়েছে? কোথায় বিবাহ পড়ানো হয়েছে? বিবাহ কে পড়িয়েছেন? আপনি যখন বিয়ে পড়ানো ছাড়াই শুধু কাবিন করে রাখছেন তখন আপনাকে বিবাহ নিবন্ধন ফরমের উপরোক্ত কলামগুলোতে মিথ্যা তথ্য লিখতে হচ্ছে। কেননা, বিয়ে হয়নি তাই বিয়ে সম্পাদনের তারিখ, স্থান আপনি কোথায় পাবেন? এক কথায়, বিয়ের আগে কাবিন করার দ্বারা বিয়ের পাত্র, পাত্রী, সাক্ষী, সনাক্তকারী, সরকারি নিবন্ধক কিংবা কাজী সবাই মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। সবাই মিথ্যা কথার ওপর স্বাক্ষর করছে। বিষয়টি কী ঠিক?

মিথ্যা কথা লেখা ছাড়াও বিয়ের আগে কাবিন করার আরেকটি জটিলতর সমস্যা আছে। বিয়ে নিবন্ধন ফরমের একটি কলামে আছে, বর কর্তৃক স্ত্রীকে তালাকে তাফবিজের ক্ষমতা প্রদান করা হইলো কি না? হইলে কী কী শর্তে? ফরমের এ কলাম পূরণকালে সাধারণত ‘হ্যাঁ’ লিখে তিনটি শর্ত উল্লেখ করা হয়। এর অর্থ হলো- স্বামী তার স্ত্রীকে শর্ত স্বাপেক্ষে তালাকে তাফবিজ গ্রহণের ক্ষমতা দিল। বিয়ের আগেই যদি কাবিন করা হয় তবে তাহলে স্বামী তার স্ত্রীকে বিয়ের আগেই তালাকে তাফবিজ গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছে। অথচ তালাক প্রদানের অধিকার আসার জন্য বিবাহ শর্ত। বিবাহ ছাড়া তালাক হয় না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বিবাহ হচ্ছে না; ততক্ষণ পর্যন্ত বর নিজেই তালাক প্রদানের অধিকার লাভ করছে না। আর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই সে কিভাবে আরেকজনকে অধিকার বা ক্ষমতা দিয়ে দেয়? বিবাহ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সে পরপুরুষ। আর পরপুরুষ তো পরনারীকে তালাক দিতে পারে না। যে নিজেই তালাক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না সে কিভাবে কনেকে তালাকের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়? এটা অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য।

অতএব, যারা বিয়ের আগে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কাবিন করছে তাদের স্ত্রীরা শরিয়ত মতে তালাকের ক্ষমতা লাভ করছে না। এমতাবস্থায় যদি সেই স্ত্রী কোনোদিন নিজের ওপর তালাক গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে তার তালাক গ্রহণ শরিয়ত মতে শুদ্ধ হবে না।

ইসলামি শরিয়ত মতে বিয়ে পড়ানোর কাজ সুসম্পন্ন হওয়ার পরেই কেবল সরকারি নিয়ম মতে কাবিন করতে হবে। বিয়ের আগে কাবিন নয়। এমনকি বিয়ে পড়ানোর পাঁচ মিনিট পূর্বেও কাবিন নয়।

Collected --
Md. Karim Sarker (Sohel)
Administrative Officer
Daffodil International University
Uttara Campus.
Ph-58952710, Ex-201
Mob-01847140030