Entertainment & Discussions > Life Style

সুলতান সুলেমান দেখব না কেন?

(1/1)

Bipasha Matin:
২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রচারে এসেছে দীপ্ত টিভি। শুরুর দিন থেকেই প্রচার করছে তুরস্কে নির্মিত টেলিভিশন ধারাবাহিক সুলতান সুলেমান। বাংলা ভাষায় ডাব করা ধারাবাহিকটি এরই মধ্যে এ দেশের দর্শকদের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে। প্রচার হয়েছে তিনটি মৌসুম (সিজন ৩)। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে চতুর্থ মৌসুম শুরু হওয়ার কথা। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে চ্যানেলটি। কিন্তু শিল্পী ও কলাকুশলীদের সংগঠন এফটিপিও (ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন) আন্দোলন করছে সব ধরনের বিদেশি ধারাবাহিক বন্ধের। কিন্তু দর্শকপ্রিয় সুলতান সুলেমান কি বন্ধ হবে?

কয়েক দিন আগে চলমান আন্দোলন নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে কথা হলো তাঁর সঙ্গে। বললেন, ‘একটি টেলিভিশনে ২৪ ঘণ্টার স্লট থাকে। ২৪ ঘণ্টা লম্বা সময়, এর মধ্যে যদি চ্যানেল মনে করে এক ঘণ্টা বিদেশি চ্যানেলের জন্য বরাদ্দ করবে, তাহলে হতেই পারে। আমাদের ছোটবেলায় যখন একটা চ্যানেল ছিল তখনো এক ঘণ্টা বিদেশি অনুষ্ঠান হতো। এখনকার দুনিয়ায় সবগুলো দরজা-জানালা বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু একদমই বিদেশি সিরিয়াল দেখাতে পারব না, এটা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। টেলিভিশন উইন্ডোতে একই সঙ্গে আপনি স্টার প্লাস, সনি, স্টার ওয়ার্ল্ড, জি বাংলাসহ নানা কিছু দেখছেন। ওখানে তো আপনি বিদেশি জিনিসই দেখছেন। ওখানে তো আপনি কোনো প্রতিবন্ধকতা আরোপ করেননি। ফলে এই দাবি আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে।’

সুলতান সুলেমান-এর দর্শকপ্রিয়তার জের ধরে বেশ কয়েকটি চ্যানেল নতুন কিছু বিদেশি ধারাবাহিক প্রচার শুরু করছে। যেমন চ্যানেল আইতে প্রচার হচ্ছে লুকানো ভালোবাসা, এসএ টিভিতে ইউসুফ জুলেখা ও একুশে টিভিতে হাতিম। এসব বন্ধের জন্য আন্দোলন করছে এফটিপিও। সংগঠনটির আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ বললেন, ‘দেশীয় শিল্প আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য সুলতান সুলেমান আমরা দেখব না। আর সুলতান সুলেমান-এর যেভাবে নির্মাণ তার সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক কি পাল্লা দিতে পারবে?’

ধারাবাহিক পাল্লা দিতে পারুক বা না পারুক দর্শকের পছন্দের তালিকায় পৌঁছে গেছে সুলতান সুলেমান। গত ২ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের লেখা ‘সুলতান সুলেমান কি দেখব, অপর্ণা?’ শিরোনামের একটি লেখার নিচে অনলাইন ভার্সনে। হিমেল খান নামে এক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘আপনারা সুলতান সুলেমানের মতো সিরিয়াল বানানোর যোগ্যতা রাখবেন না অথচ এটা দর্শকপ্রিয়তা পেলেই আপনাদের মাথা খারাপ হয়ে যাবে।...ইন্ডিয়ান বাংলা সিরিয়াল জনপ্রিয় বলে তা কপি পেস্ট করে সাংসারিক কূটনামি বানানোর বৃথা চেষ্টা করবেন এবং দর্শক তা না দেখলে বলবেন, দেশের শিল্পীদের ভাত মারা যাচ্ছে, তা হয় না। আগে নিজের কোয়ালিটি এনশিওর করেন। নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের করেন, তখন আর মানুষ সুলতান সুলেমান দেখবে না, আপনারটাই দেখবে।’
গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল ফারুক ওয়াসিফের কলাম ‘দর্শককে শ্রদ্ধা না করুন, দয়া করুন, জনাব’। অনলাইনে ৬১ জন পাঠক মন্তব্য করেছেন। বেশির ভাগ মন্তব্যই সুলতান সুলেমান-এর পক্ষে। এর মধ্যে মনসিন রেজা নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘বিশ্বায়নের এই যুগে আপনি ইচ্ছে করলেই মানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে পারবেন না, এখন তো ভালো যে ডাব করা বাংলা সিরিয়াল মানুষ দেখছে, বাংলা ভাষা পাচ্ছে।’

পাঠকের মানে দর্শকের যখন এই মতামত, তখন দেশের নির্মাণের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের বক্তব্য কী? সংগঠনটির সভাপতি গাজী রাকায়েত বললেন, ‘এই সুলতান সুলেমান-এর কারণে প্রত্যেকটা চ্যানেলে বিভিন্ন বিদেশি ধারাবাহিক ডাব করে প্রচার করছে। তাই আমাদের শুধু সুলতান সুলেমান নিয়ে আপত্তি নেই, সব ডাবকৃত ধারাবাহিক নিয়ে আপত্তি। কারণ সব বিদেশি ধারাবাহিকের জন্য আমাদের শুটিং বাড়িতে প্রায় অর্ধেক শুটিং কমে গেছে।’

গত ৩০ নভেম্বর বিদেশি ধারাবাহিক বন্ধের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন দেশের শিল্পী-কলাকুশলীরা। আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে হয়েছে সমালোচনা। বেশির ভাগই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলন নিয়ে। কেউই চান না বন্ধ হোক বিদেশি ধারাবাহিক, বিশেষ করে সুলতান সুলেমান। এ বিষয়ে কী ভাবছে সুলতান সুলেমানকে দেশীয় দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দীপ্ত টিভি? কয়েক দিন আগে চ্যানেলটির প্রধান নির্বাহী কাজী উরফী আহমেদ বললেন, ‘আমাদের চ্যানেলটি বিনোদনভিত্তিক। তাই সবার আগে আমাদের দেখতে হবে, দর্শকেরা কী দেখতে চান? বিদেশি ধারাবাহিক যদি জনপ্রিয় হয়, তাহলে সেটা চলবে। জনপ্রিয়তা না পেলে বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের কনটেন্ট তৈরি করতে পারি।’

লেখাটি শেষ করা যেতে পারে সরদার মো. সোহেল রানার মন্তব্য পড়ে, ‘যত আন্দোলনই হোক না কেন, সুলতান সুলেমান যেন বন্ধ না হয়।’

sisyphus:
True that!  8)

Navigation

[0] Message Index

Go to full version