বিদেশে ৭৭% শ্রমিকই মজুরিতে ঠকেন

Author Topic: বিদেশে ৭৭% শ্রমিকই মজুরিতে ঠকেন  (Read 806 times)

Offline Bipasha Matin

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 300
  • Don't judge me, you can't handle half of what I've
    • View Profile
বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার সময় যে হারে মজুরি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তা শেষ পর্যন্ত পান না শ্রমিকেরা। মোট শ্রমিকের ৭৭ শতাংশকেই ঠকানো হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৬তম এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার শ্রমিক অভিবাসন-সংক্রান্ত এক অধিবেশনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে এ অঞ্চলের ৩৫টি দেশের সরকার, আঞ্চলিক সংস্থা, গবেষণা সংস্থা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এ অঞ্চলের দেশগুলোকে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তাঁরা শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়া বা অভিবাসনের ক্ষেত্রে কোনো অর্থ না নেওয়ারও তাগিদ দেন।
গতকালের অধিবেশনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসী শ্রমিকদের জীবনমান, আয়, অভিবাসন খরচ, নিয়োগের স্বচ্ছতা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন আইএলওর উপমহাপরিচালক গিলবার হাউংবো।
সংস্থাটির শ্রম অভিবাসন বিভাগের প্রধান মিশেল লাইটন এ অঞ্চলের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি আরব ও এশিয়ায় আইএলও এবং বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক একটি গবেষণার তথ্য দিয়ে বলেন, এ অঞ্চলের ৭৭ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মজুরি পান না। তিনি আরও বলেন, নিয়োগকারীদের সঙ্গে এ অঞ্চলের ৩০ শতাংশ শ্রমিকের কোনো চুক্তি নেই। ২৫ শতাংশ শ্রমিক বিশ্রামের জন্য সপ্তাহে এক দিনও ছুটি পান না। আর ১৫ শতাংশকে নিয়োগকারীরা সঠিক সময়ে মজুরি দেন না।
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন শহর বালির বালি নুসা দুয়া কনভেনশন সেন্টারে গত মঙ্গলবার এ সম্মেলন শুরু হয়।
আইএলওর সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে এখন মোট ১৫ কোটি অভিবাসী শ্রমিক অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয়। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ আরব দেশগুলোতে কাজ করেন, যাঁদের বেশির ভাগ গেছেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের যাওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ খরচের তথ্য জানিয়ে মিশেল লাইটন আরও বলেন, সৌদি আরবে যেতে একজন পাকিস্তানি শ্রমিককে ৪ হাজার ৩৯৫ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়। সেখানে তিনি মাসে মজুরি পান গড়ে ৪৬৯ ডলার। এতে একজন পাকিস্তানি শ্রমিকের সৌদি আরবে যাওয়ার ব্যয় দাঁড়ায় তাঁর প্রায় ১১ মাসের আয়ের সমান। আর বাংলাদেশের একজন শ্রমিককে কুয়েতে যেতে প্রায় নয় মাসের আয়ের সমান ব্যয় করতে হয়। সে দেশে যেতে একজন বাংলাদেশি শ্রমিককে ব্যয় করতে হয় ৩ হাজার ১৩৬ ডলার। সেখানে তাঁর মজুরি মেলে গড়ে ৩৪৭ ডলার। অন্যদিকে কুয়েতে যেতে একজন ভারতীয় শ্রমিককে তার মাত্র আড়াই মাসের আয়ের সমান অর্থ ব্যয় করতে হয়। সেখানে ভারতীয় শ্রমিকের মাসিক গড় আয় ৪৯৪ ডলার।
অধিবেশনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি ওমর আল নুয়াইমি অভিবাসী শ্রমিকদের এখনকার সমস্যার কিছু কারণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। শ্রমিকদের দক্ষতাও কম। এ কারণে তাঁরা বাড়তি খরচ করেও বিদেশ গিয়ে কাজ পেতে চান। তিনি আরও বলেন, সুযোগ পেয়ে নিয়োগকারীরাও শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে বাড়তি লাভের চেষ্টা করেন। তাঁরা মনে করেন, কম মজুরি দিলে তাঁদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে।
কাতারের হামাদ বিন খালিফা ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইসলামিক লেজিসলেশন অ্যান্ড এথিকসের মাইগ্রেশন এথিকস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-বিষয়ক অধ্যাপক রে জুরেইডিনি বলেন, শ্রমিকদের কাছ থেকে সাধারণত আসল খরচের অতিরিক্ত নিয়োগ ফি, কমিশন ও প্রশাসনিক খরচ বাবদ অর্থ নেওয়া হয়, যা সাধারণত নিয়োগকারী দেয় না। এখানেই প্রতারণার সুযোগ তৈরি হয়। তিনি বলেন, শ্রমিকদের অর্থ দিতে হয় বলেই তাঁরা দেনায় ডুবে যান। এ কারণে তাঁরা কম মজুরিতে কাজ করতে আগ্রহী হন।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেন, স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা নিশ্চিত করা সহজ কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার নীতি-কাঠামো না থাকা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবই বড় চ্যালেঞ্জ। শ্রমিকের অসচেতনতাও বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, শ্রমবাজারের চাহিদা বোঝা ও ঘাটতি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সদস্যদেশগুলোকে আইএলওর সহায়তা করা উচিত।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শ্রমিক প্রতিনিধিরা ফেয়ার মাইগ্রেশন বা ন্যায্য অভিবাসন নিশ্চিত করতে নানা পরামর্শ দেন।
আইএলওর সম্মেলনটি আগামীকাল শুক্রবার শেষ হবে। এ সম্মেলন প্রতি চার বছর পর পর হয়।
Sabiha Matin Bipasha

Senior Lecturer
Department of Business Administration
Faculty of Business & Economics
Daffodil International University