সমাজবদ্ধ হয়ে মানুষ বসবাস শুরু করেছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই সমাজের পরিবর্তন হয়। কখনো ইতিবাচক আবার কখনোবা নেতিবাচক। সমাজের এইযে পরিবর্তন, এর সাথে যুক্ত থাকে হাজারো মানুষ। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নির্ঘুম রজনীর চিন্তা দিয়ে এই পরিবর্তন হয়, কখন আমরা তাদেরকে জানাই সাধুবাদ, আবার নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য যারা প্রেষণা দিয়ে থাকেন, তারা হন ঘৃণার পাত্র। তবে অনেক সময় আমরা এই পরিবর্তনের ফলাফল সহজে বুঝতে পারি না। কারণ অনেক ফলাফল শুরুতে নেতিবাচক মনে হলেও সময়ের পরিক্রমায় দেখা যায় আসলে এই পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল আমাদের সমাজের জন্য। আর যারা এই পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও আমাদের থাকে না। দেখা যায় প্রকৃতির অবধারিত নিয়ম মেনে ততদিনে তাঁর এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তাই সমাজের পরিবর্তনে প্রকৃতপক্ষে যাঁরা নিয়োজিত থাকেন, আমাদের উচিৎ ফলাফল বিবেচনা করে তাদেরকে উৎসাহিত করা, সম্মানিত করা, শ্রদ্ধা করা। যা আমরা অনেক সময়ই করি না।
হঠাৎ করে যখন চেয়ারম্যান স্যারের বিশেষ সহকারী আনসারী ভাইয়ের মেইল পেলাম যে ফিজিক্যাল এক্সেরসাইজ করার একটা প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। তখন একটু পুলকিত বোধ করলাম। কারণ ছোট বেলা থেকে স্কাউটিং, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বি.এন.সি.সি - র পর বহুদিন পার হয়েছে সময়ের কারনে এক্সেরসাইজ এর সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারিনি। পরবর্তী মেইল-এ যখন জানলাম এ প্রোগ্রাম উপলক্ষে ট্র্যাক স্যুটও দেয়া হবে তখন চিন্তা করলাম নিশ্চই বড় কিছু হতে যাচ্ছে। নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকলাম পরবর্তী দিনের জন্য।
ভোর পাঁচটা বাজে ঘুম থেকে উঠে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে যাত্রা শুরু করলাম মিরপুর থেকে ধানমন্ডির উদ্দ্যেশ্যে। পথে ঢাকা শহরের চিরাচরিত জ্যাম। এত সকালে এই অযাচিত জ্যাম হওয়ার কারণ মেট্রো রেলের জন্য খনন। এই সকালেই দেখলাম স্কুল ড্রেস পরে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের অনিচ্ছাকৃত ভ্রমন। কেউ ঘুমে, কেউ টেনশনে। জানতে পারলাম কোন একটা স্কুলের পরীক্ষা চলছে। এত চিন্তার মাঝেও আমার টেনশন অন্য যায়গায়। কারণ ধানমন্ডিতে পৌঁছানোরা সর্বশেষ সময় সকাল ৬.৪৫। ৭ টা বাজে বাস ছাড়বে আসুলিয়ার মেইন ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। আবার আমাকে দেয়া হয়েছে একটি বাসের তদারকির দায়িত্ব। কি আর করবো বসে আছি জ্যামে। আর বিভিন্ন প্রকার চিন্তা করছি। যা হোক, ভগ্ন হৃদয়ে যখন ধানমন্ডিতে পৌঁছালাম তখন বাজে সকাল ৭.০৫। দৌঁড়ে রাস্তা পার হয়ে পেলাম শান্তি। আহ! অনেকেই আমার মত চার পাঁচ মিনিট পরে আসছেন। আমি অফিসিয়াল প্রসিডিউর শেষে বাসে উঠে পড়লাম আসুলিয়ার মেইন ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য।
আসুলিয়া পৌঁছালাম। দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। বিভিন্ন বয়সের মানুষের মিলন মেলা দেখে। এদেরকে আমি আগেও দেখেছি অফিসের বিভিন্ন আয়োজনে। কিন্তু আজকের মত আর দেখিনি। নীল আর সবুজে ভরা মানুষের উচ্ছাসেভরা মুখ গুলো। কাউকেই অফিসিয়াল কোন কথা বলতে দেখছি না। সবাই ছোটদের মতই গল্প করছে, হাসছে, খেলছে।
মাইক বেজে উঠল। যেহেতু সবাই এখানে বড় তাই কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে গেল। ওয়ার্ম আপের পর্যায় শেষে আমাদের মাঝে যোগ দিলেন ভিসি স্যার ও চেয়ারম্যান স্যার। তাঁরাও নীল আর সবুজ ড্রেসে। আগে থেকেই আমাদের সাথে ছিলেন প্রো-ভিসি স্যার ও বিভিন্ন অনুষদের ডিন মহোদয়গণ। আমরা রওয়ানা হলাম চারদিকে খোলা মাল্টি-পারপাস হলের দিকে। যেখানে আয়োজন করা হয়েছে মুল অনুষ্ঠানের। দেখলাম আজকের প্রোগ্রামের মূল প্রতিপাদ্য “চেইঞ্জ টুগেদার”। আয়োজক কমিটির আয়োজন দেখে মুগ্ধ হলাম। ছোটখাট কিছু ভুল ছাড়া সবই প্রোফেশনাল মনে হলো।
চেয়ারম্যান স্যার যখন মঞ্চে উঠলেন আমি মনযোগ দিলাম তাঁর বক্তৃতার দিকে (আমি খুবই মনযোগী শ্রোতা। যদি স্বল্প সময়ের জন্য হয় তাহলেতো কথাই নেই)। তাঁর বক্তব্য শুনলাম। শুনে আমার কাছে মনে হলো আজকের এই প্রোগ্রাম আসলেই দরকার ছিল। সমাজের বর্তমান যে অবস্থা তা কারও একার পক্ষে পরিবর্তন করা সম্ভব না। তাই তিনি তাঁর মতামতের সাথে তাঁর পরিবারের (ড্যাফোডিল পরিবার) সকলের একাত্ত্বতা চাচ্ছেন। তার এই পরিবর্তন রাজনৈতিক পরিবর্তন না, তাঁর এই পরিবর্তন বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রচলিত ধারার সাথে মিল রেখে নতুন ধরনের পরিবর্তন। জাতীয় সঙ্গীতের সময় হৃদয়ে হাত দিয়ে দেশকে অনুভব করার চেষ্টা, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করার পর বাংলা অর্থ বলা ইত্যাদি দেশকে হৃদয়ে ধারন করার, দেশের প্রতি শ্রদ্ধা সৃষ্টির, সৃষ্টিকর্তার বাণী নিজ ভাষায় বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন। যা কোনভাবেই একেবারে নতুন সৃষ্টি না। কিন্তু প্রচলিত ধারার মধ্যে থেকে নতুন কিছু বের করে নিয়ে আসা ও নতুন করে বুঝিয়ে দেয়াকেই প্রকাশ করে।
ভিসি স্যার মঞ্চে উঠে সবার অবস্থা মনে হয় বুঝে গেলেন। তাই তিনি তাঁর বক্তৃতা যতটুকু ছোট করার প্রয়োজন তারচেয়েও ছোট করলেন। তারপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নিতীনির্ধারক হিসেবে উদাহরণ দিয়ে যা তুলে ধরলেন তা এক কথায় চমৎকার বললে কমই বলা হবে। শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মানসিকতা যে পরিবর্তন করা অত্যাবশ্যক তা তিনি তাঁর কথার ভিতর দিয়ে তুলে ধরলেন। কারণ বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষকই তাঁদের পেশার মান বজায় রাখতে পারছেন কিনা তা পত্রিকার পাতা খুললেই মাঝে মাঝে দেখা যায়। ভিসি স্যারের বক্তব্যের মাঝে বুঝাগেলো যে শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন শিক্ষার্থী তথা সমাজ পরিবর্তনের জন্য কত বেশী জরুরী।
বর্তমানে ভেজালের এ যুগে স¦াস্থ্য সচেতনাও যে দরকার তাও এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে তুলে ধরা হল। প্রতিদিন আমরা যদি নিয়ম মেনে কিছু ব্যায়াম করি তাহলে স্বাস্থ্য সুস্থ রাখা সম্ভব।
এরকম ব্যতিক্রমধর্মী ও চমৎকার একটি প্রোগ্রাম আয়োজন করার জন্য ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে চেয়ারম্যান স্যার ও যাঁরা এই প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত তাঁদেরকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।