পৃথিবী থেকে চাঁদ যত কাছে, তার চাইতেও কাছে চলে এসেছিল একটি গ্রহাণু। গত সোমবার সে পৃথিবীর গা ঘেঁষে চলে গেছে, আর এই ব্যাপারটা গবেষকেরা ধরতে পেরেছিলেন মাত্র এক দিন আগে, গত শনিবারে।
পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা 2017 AG3 নামের এই গ্রহাণুটিকে খুঁজে পায় ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনার ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভে। Slooh নামের একটি কোম্পানি জানায় এ ব্যাপারটা, তারা মহাকাশের ব্যাপারে বিভিন্ন লাইভ তথ্য প্রচার করে।
৫০-১১১ ফিট লম্বা ছিল এই গ্রহাণু। আর পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবার সময়ে তার গতি ছিল সেকেন্ডে ৯.৯ মাইল। এটা এক ধরণের নিয়ার আর্থ অবজেক্ট (Near Earth Object) বা NEO। পৃথিবী থেকে চাঁদের যা দুরত্ব, তার অর্ধেক দুরত্বে ছিল সে। Slooh এর এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এরিক ফেল্ডম্যান জানান, এই গ্রহাণুটি খুব দ্রুত এবং খুব কাছে দিয়ে গেছে। সে পৃথিবী এবং শুক্র- দুই গ্রহেরই কক্ষপথ পার হয়ে গেছে।
এই গ্রহাণু আরও কাছে দিয়ে গেলে কী হতো আমাদের? সে আমাদের বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়লে কী পরিস্থিতি দাঁড়াত?
পার্দু ইউনিভার্সিটির একটি সিমুলেটর আছে যা গ্রহাণুর আঘাতের ফলাফল তৈরি করে দেখায়। “ইমপ্যাক্ট আর্থ” নামের এই সিমুলেটর বলে, আমরা যত আশংকা করছি, পরিস্থিতি হয়তো অত খারাপ হতো না।
১১১ ফুট লম্বা একটি পাথুরে গ্রহাণু ৪৫ ডিগ্রি কোণে পৃথিবীকে আঘাত করলে, সে বায়ুমণ্ডলেই বিস্ফোরিত হত। তার এই বিস্ফোরণ হতো বেশ জোরালো, অ্যাটম বোমের চাইতেও অনেক গুণে শক্তিশালী। কিন্তু ভুমি থেকে প্রায় ১০ মাইল অপরে এই বিস্ফোরণ হবার কারণে আমাদের খুব একটা প্রভাবিত করতো না। খুব বেশী হলে ব্যাস্ত রাস্তায় যানবাহন চলাচলের মতো শব্দ হতো। পার্দু ইউনিভার্সিটির মতে এই রকমের গ্রহাণুর আঘাত ঘটে প্রতি ১৫০ বছরে একবার।
তবে Slooh এর মতে ব্যাপারটা আসলে খারাপ হতেও পারতো। ২০১৩ সালে রাশিয়ার চেলিয়াবিন্সকে একটি গ্রহাণু আঘাত করেছিল, তার আকারটাও ছিল এই রকম। এর আঘাতে বেশকিছু বাড়ির কাঁচের জানালা ভেঙ্গে যায় আর ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্তও হয়।
গ্রহাণু 2017 AG3 এর মতো আরও ৩৮টি গ্রহাণু এই মাসেই পৃথিবীর আশেপাশে দিয়ে যাবে, জানায় নাসার নিয়ার আর্থ অবজেক্ট প্রোগ্রাম। প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর এবং সিইও মারক সাইকস একজন বিজ্ঞানী যিনি কাজ করছেন নিয়ার আর্থ অবজেক্ট ক্যামেরা বা নিওক্যাম নামের প্রস্তাবিত একটি টেলিস্কোপের প্রজেক্টে। এর কাজ হবে আগের চাইতেও ১০ গুণ বেশী নিয়ার আর্থ অবজেক্ট খুঁজে বের করা। এসব গ্রহাণু থার্মোনিউক্লিয়ার বোমার চাইতেও বেশী ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এ কারণে এমন একটি প্রজেক্টের প্রয়োজনীয়তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এখন পর্যন্ত নাসা নিওক্যাম প্রজেক্টের কেবল আংশিক অর্থায়ন করছে।