নগর জীবনের কোলাহল থেকে মাঝে মাঝে ছুটে পালাতে কার না মন চায়? কিন্তু চাইলেই তো আর সবসময় পালানো যায়না। নানা রকম সীমাবদ্ধতায় আমাদের জীবন বন্দি। আর এই সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়েই আমাদের সবসময় চলতে হয়। তাই হাতে যদি আপনার একদিনও সময় থাকে তবে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন। যারা ঢাকা বা এর আশেপাশে থাকেন তারা খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। ব্রহ্মাপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত এই ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবেই। আর বসন্ত এই এলো বলে। বসন্তের এই সময় ক্যাম্পাস আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। তাই দেরী না করে বেরিয়ে পড়ুন।
আপনি যদি সকাল ৭ টার মধ্যে রওনা দেন তবে ১০-১১ টার মধ্যে ক্যাম্পাস এ পৌছে যাবেন। ১ হাজার ২৩০ একরের মনোরম পরিবেশ বেষ্টিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ক্যাম্পাসে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্ম প্লাজম সেন্টার, কৃষি মিউজিয়াম, ফিশ মিউজিয়াম, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট, কেবি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ নানা প্রতিষ্ঠান।
একমাত্র বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশমূল্য ৫ টাকা নেওয়া হয়। আর কোথাও কোনো ফি নেওয়া হয় না।ক্যাম্পাস এর বোটানিক্যাল গার্ডেনের সবুজ শ্যামলী আর পাখির কোলাহল এক নিমিষেই শহুরে ক্লান্তি দূর করে দিবে। গার্ডেনে রয়েছে বিভিন্ন গাছের সমারোহ। এমনকি সুন্দরবনের বিখ্যাত সুন্দরী গাছও এখানে কৃত্রিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া কৃষি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে কৃষি সভ্যতার নানা
উপাদান।বাংলাদেশের স্বাদুপানির ২৬০টি প্রজাতির মাছের প্রায় সবগুলোই পাওয়া যাবে ফিশ মিউজিয়ামে। এই মিউজিয়ামটি দক্ষিন এশিয়ার প্রথম। এতে রয়েছে বিভিন্ন মাছের ফসিল।
আপনি চাইলে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির করিডর ধরেও কিছুক্ষন ঘুরে বেড়াতে পারেন। ক্যাম্পাস এর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা রেললাইন ধরে হাটতে পারেন। হলগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন। ঈশা খাঁ হল এর লেকের পাড়ে বসে কিছুক্ষন জিরিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া ক্যাম্পাস এ কিছু ইন্টারেস্টিং নাম এর জায়গা আছে। যেমন প্রেম বারান্দা, লন্ডন লেক। সেগুলোও ঘুরে দেখতে পারেন।
ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে গেলে জব্বার এর মোড় অথবা শেষ মোড় এর হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। এসব হোটেল এ আপনি মাছ, মাংস, ভর্তা সব পাবেন। দুপুরের খাবার এর পর আপনি চলে যান আম বাগান এ। রাস্তার দুপাশে সারি সারি আমগাছ দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বিকালটা ব্রহ্মাপুত্র নদ এ নৌকায় ঘুরে কাটিয়ে দিন। ফেরার পথে একরাশ সুখস্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরুন। চাইলে বাড়ি ফেরার সময় ময়মনসিংহ শহর থেকে স্পেশাল মালাইকারি মিষ্টি নিয়ে আসতে পারেন। মালাইকারির জন্য মা-মনি সুইটস এবং কৃষ্ণা কেবিন বিখ্যাত।
কীভাবে যাবেন:
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বেশ কটি বাস ছেড়ে যায় প্রতি ১৫-২০ মিনিট পরপর। সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা, ভাড়া নেবে ২০০-২৮০ টাকা। তবে চেষ্টা করবেন এনা তে করে যেতে। এছাড়া আপনি ট্রেন এ করেও যেতে পারেন। সকাল ৭.৩০ মিনিট এ তিস্তা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ময়মনসিংহ পৌছায় ১১ টার মধ্যে। তিস্তা এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে বিকাল ৫.৩০ এ। ময়মনসিংহ নেমে ৪০-৫০ টাকা অটোভাড়া দিয়ে সহজেই ক্যাম্পাস যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন :
রাতে থাকার প্রয়োজন পড়লে গঙ্গাদাস গুহ রোডে হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশনালে থাকতে পারেন। ফোন : ০১৭১৫-১৩৩৫০৭। ভাড়া নেবে সিঙ্গেলে ৫০০ টাকা, ডাবল ৮০০ টাকা, হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনালও ভালো তবে ভাড়া বেশি। ১৬০০ টাকা থেকে শুরু। হোটেল আল হেরা এসি ডাবল রুম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, সিঙ্গেল ১ হাজার ২০০ টাকা, নন-এসি ডাবল ৮০০ টাকা, সিঙ্গেল ৫০০ টাকা। হোটেল মোস্তাফিজে এসি ডিলাক্স ২ হাজার ৫০০ টাকা, এসি ডাবল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, সেমি ডাবল ১ হাজার ৪৫০
টাকা, সিঙ্গেল ১ হাজার টাকা, নন-এসি ডাবল ১ হাজার ১০০ টাকা, সিঙ্গেল ৫০০ টাকা। তবে ডাবল রুমে ১৫%, সিঙ্গেল রুমে ১০% ডিসকাউন্ট রয়েছে। আরো কম টাকায় থাকতে চাইলে হোটেল আসাদ, ঈশা খাঁ, নিরালায় যেতে পারেন।
http://www.rong-tuli.com/2017/02/04/%e0%a6%98%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%86%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82