"বৈশাখী প্রবন্ধ "

Author Topic: "বৈশাখী প্রবন্ধ "  (Read 1455 times)

Offline Mohammad Nazrul Islam

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 184
  • Test
    • View Profile
"বৈশাখী প্রবন্ধ "
« on: April 04, 2017, 01:28:26 PM »
পহেলা বৈশাখ দিনটি যতটা ধর্মীয় অনুভূতিসিক্ত, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব বাঙ্গালীর সর্বজনীন সংস্কৃতির দিন হিসাবে। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই বাঙালিরা এই দিনটি বিচ্ছিন্নভাবে পালন করে আসছে বলে বিভিন্ন গবেষকরা মত প্রকাশ করেছেন। সভ্যতার আর্বতন-বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঋতুরাজ্যের জ্ঞান মানুষের মধ্যে বেগবান রয়েছে। এরপর এসেছে জ্যোতিষশাস্ত্র।

সম্রাট আকবরের শাসনামলে বাংলা -উড়িষ্যায় ইলাহি সন, মৌসুমি বা ফসলি সন ও বিলায়েতি সনের চালু ছিল। ঘরে ঘরে ফসল তোলার সাথে খাজনা আদায়ের ব্যাপক প্রচলন ছিল। এজন্য সম্রাট আতবর জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ আমির ফতেউল্লাহ সিরাজিকে দিয়ে হিজরি সনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে 'তারিখ ই-ইলাহি উদ্বাবণ ও এর প্রচলন করেন। সেই তখন থেকেই কৃষিপ্রধান সমাজে এই দিনটি সমাদৃত হয়ে আসছে।

পহেলা বৈশাখ যেমন বাঙালির হৃদয়ে নতুন উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে তেমনি 'ভূমিহীন'অর্থাৎ বর্গাচাষীদের জন্যও যন্ত্রণাদায়ক দিন হিসেবে আবির্ভূত হয়। শুরতেই এই দিনে সম্পাদন করা হতো জমিদারের রাজস্বের দিন হিসাব। প্রজারা বকেয়া খাজনা পরিশোধ করে মিষ্টিমুখ করত। ব্যবসায়ীরা তাদের হিসাব চুকিয়ে নিত। বৈশাখের যে লৌকিকতা তা শুরু হয় পরিবার থেকে। আত্নীয়,বন্ধু,ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবেশি সুহৃদজনকে শুভেচ্ছা ও কুশল জানানো ছোট -বড়দের মধ্যে নববর্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় বহু মানুষের সমাগম হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মহামিলনের স্হান এই মেলা। শিশু কিশোররা চরকি,নাগরদোলা,বাঁশি,তালপাতার রকমারি আয়োজনে মেতে উঠে।কিশোরীরা ব্যস্ত চুরি, ফিতে,চুলের ক্লিপ,আলতা ,কাজল ইত্যাদি কেনার জন্য।

কিন্ত পুরোনো বৈশাখ নিয়ে নানা তথ্য বিবৃত রয়েছে।পুরাণের মতে বিশাখা চন্দ্রের সপ্তবিংশ পত্নীর অন্যতম এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতে কেবল নক্ষত্র।জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের অবস্হানের সঙ্গে বিভিন্ন নক্ষএের অবস্হানের সম্পর্ক দেখে মাস ভাগ এবং মাসগুলোর নামকরণ করেছিলেন।বিশাখ উন্ষতার সূচক।সঙ্গত কারণে বৈশাখের সঙ্গে যে উষ্ণতা বা খরতাপ-এর যা মিল রয়েছে তা বলা বাহুল্য। বৈশাখের স্বরুপ বিশ্লেষণে এই দিনটির গুরুত্বও কম নয়।

পহেলা বৈশাখের সঙ্গে বাঙালির আদি সংস্কৃতি যেমন, যাএা ও পালা,কবিগান,গাজির গান,আলকাপ,পুতুল নাচ, বাউল- মুর্শিদি -ভাটিয়ালি গান, লাইলি-মজনু, রাধা-কৃন্ষ, ইউসুফ-জুলেখা ইত্যাদি পালা প্রদর্শনের আয়োজন করা হয় প্রত্যন্ত গ্রামে। মাস হিসেবে বৈশাখের স্বতন্ত্র পরিচয় আছে, যা প্রকৃতিতে ও মানবজীবনে প্রত্যক্ষ করা যায়। খররৌদ্র, দাবদাহ, ধু-ধু মাঠ, জলাভাব, কালবৈশাখীর ঝড়, ঝরাপাতা গাছে নতুন পাতার আবির্ভাব, আমের কলি ইত্যাদি প্রকৃতি পরিবেশের যোগ রয়েছে।

বাঙালি জাতি বারবার বিদেশি শক্তির শাষণ-শোষণে, নিপীড়িত -নিঃগৃহীত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগোওরের সময়ে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানভূমির প্রগতিশীল ছাএ চেতনায় পহেলা বৈশাখ রাজনৈতিক মাএায় বিকশিত হয়।পাকিস্তানি শাসনাধীনে বাঙালি সংস্কৃতিকে অপচেষ্টার বিরুদ্ধে গড়ে উঠা প্রতিবাদী চেতনার প্রকাশ। এর মধ্যে নববর্ষ বা বাংলা বর্ষবরণ উত্সব হয়ে উঠেছিল বাঙালি চেতনার ধারক ও বাহক। ৫২- এর ভাষা আন্দোলনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার বাঙালিরা সংস্কৃতি সচেতন হতে শুরু করে এবং ৭১- এর স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে অস্তিত্বের পুনরুদ্ধার করে।

সবশেষে বলা যায়,পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহ্বান করার আকাঙ্ক্ষা থেকেই পালিত হয়ে আসছে বর্ষবরণ উত্সব। নতুন সম্ভাবনার প্রত্যাশায় নতুনকে বরণ করার রীতি বাঙালি জাতীয়তাবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
« Last Edit: December 01, 2019, 07:48:57 PM by Mohammad Nazrul Islam »

Offline fahad.faisal

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 734
  • Believe in Hard Work and Sincerity.
    • View Profile
Re: "বৈশাখী প্রবন্ধ "
« Reply #1 on: January 29, 2018, 08:32:47 PM »
Nice Writing.
Fahad Faisal
Department of CSE