নবীজি (সা.)-এর প্রাণের শহর মদিনা

Author Topic: নবীজি (সা.)-এর প্রাণের শহর মদিনা  (Read 3335 times)

Offline wahid

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 116
    • View Profile
মদিনা নগরী আল মদিনা-আল মুনাওয়ারা নামে পরিচিত, যার বাংলা অর্থ আলোকিত নগরী। এই শহর নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শহর নামে পরিচিত। এর আরো নাম আছে যেমন- তাইবাহ, ইয়াসরিব, নবীর শহর, দার আল হিজরা (হিজরতকারীদের বাসস্থান)। ঐতিহাসিকদের মতে, এই নগরীর প্রাচীন নাম ছিল ইয়াসরিব। এটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র শহর, যেখানে মুসলমানদের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারক।
ভৌগোলিক অবস্থান : মদিনা নগরী সৌদি আরবের হিজাজ অঞ্চলের পূর্বে অবস্থিত। সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমে ও লোহিত সাগরের আগে এই নগরীর অবস্থান। মদিনা অনেক পর্বত দ্বারা পরিবেষ্টিত। পশ্চিমে আল হুজাজ পর্বত, উত্তর-পশ্চিমে সালা, দক্ষিণে আলইর ও উত্তরে ওহুদ পর্বত অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই শহরের উচ্চতা ২০৩৪ ফিট।
আবহাওয়া : সাধারণত মদিনার আবহাওয়া মহাদেশীয়; গ্রীষ্মে গরম ও শুকনা আর শীতকালে ঠাণ্ডা থেকে মৃদু তাপমাত্রা বিরাজমান। গরমে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অন্যদিকে শীতের সময় হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। আর্দ্রতা সারা বছর তুলনামূলক ৩৫ শতাংশ। বৃষ্টি অপ্রতুল, যা সাধারণত নভেম্বর ও মে মাসে হয়।
মদিনায় মহানবী (সা.)-এর হিজরত : ইসলামী পরিভাষায় হিজরত বলতে বোঝায় দ্বীন ইসলামের খাতিরে নিজের দেশ ছেড়ে এমন স্থানে গমন করা, যেখানে সব প্রয়োজন পূর্ণ হতে পারে। রাসুল (সা.) আগমনের আগে এক সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করেছিল আরবসহ সারাবিশ্ব। ইতিহাসে ওই সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ বলা হয়। এ সময় সর্বত্র বিরাজ করছিল অশান্তির দাবানল। এই ক্রান্তিকালে কাণ্ডারি হয়ে এসেছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। প্রথমদিকে দ্বিধাবিভক্ত ও কলহপ্রিয় জাতিকে একটি আদর্শের ছায়াতলে নিয়ে আসতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। মক্কাবাসী তাঁকে সাদরে গ্রহণ না করায় তিনি আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করেন।
মসজিদে নববীর নির্মাণ : মদিনায় হিজরত করার পর সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল একটি মসজিদ নির্মাণ করা। হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেখানে অবস্থান করছিলেন, তার কাছেই দুই এতিমের কিছু অনাবাদি জমি ছিল। নগদ মূল্যে তাদের কাছ থেকে ওই জমিটি খরিদ করে তার ওপর মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হলো। হজরত (সা.) সাধারণ মজুরের ন্যায় সবার সঙ্গে মিলে কাজ করলেন। নিজ হস্তে তিনি ইট-পাথর বয়ে আনলেন। কাঁচা ইটের দেয়াল, খেজুরগাছের খুঁটি ও খেজুর পাতার ছাদ- এই ছিল এর উপকরণ। মসজিদের কিবলা হলো বায়তুল মুকাদ্দিসের দিকে। কেননা সে সময় মুসলমানদের কিবলা ছিল ওই দিকে। অতঃপর কিবলা কাবামুখী হওয়ায় তদনুযায়ী মসজিদের সংস্কার করা হলো। মসজিদের একপাশে একটি উঁচু চত্বর নির্মিত হলো। এর নাম রাখা হলো 'সুফফা'। যেসব নওমুসলিমের কোনো বাড়িঘর ছিল না। এটি ছিল তাদের থাকার জায়গা। মসজিদের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে তার কাছেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের জন্য কয়েকটি কক্ষ তৈরি করে নিলেন।
মসজিদে নববীর সংস্কার ও সম্প্রসারণ : মদিনা মসজিদ বা মসজিদে নববী মুসলমান শাসকদের দ্বারা অনেকবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সা.) ওফাতের পর হজরত ওমর (রা.) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ করেন। তিনি মসজিদটি উত্তর দিকে ৩০ হাত, দক্ষিণে ১০ হাত, পশ্চিমে ২০ হাত সম্প্রসারণ করেন। হজরত ওমর (রা.)-এর সময় মসজিদের পরিমাপ দাঁড়ায় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ ও পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত। হজরত ওসমান (রা.)-এর সময় ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুরপাতার পরিবর্তে ছাদে সেগুনকাঠ ব্যবহার করা হয়। ছাদের আকার দাঁড়ায় ১৬০ূ১৩০ হাত। এ সময় সম্প্রসারিত হয়ে মসজিদের আকার উত্তর-দক্ষিণে ১৬০ ও পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ হাত। খলিফা আল ওয়ালিদের সময় মদিনা মসজিদটি আধুনিক ইমারতে পরিণত হয়। ওয়ালিদ ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে মসজিদে নববীকে সাজিয়ে তোলেন। তাঁর সময় মসজিদে নববীর পরিমাপ দাঁড়ায় ২০০ূ২০০ হাত। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম মদিনা মসজিদের চারকোণে চারটি মিনার নির্মাণ করেন আল ওয়ালিদ। তখন প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছিল ৫০ হাত ও প্রস্থ ছিল আট হাত। খলিফা মাহদী ৭৭৫-৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন ৩০০ূ৩০০ হাত। আর মামলুক সুলতান কয়েতবে মসজিদে ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে গম্বুজ প্রতিষ্ঠিত করেন। উক্ত গম্বুজে সবুজ রঙের আস্তরণ দিয়েছিলেন ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে। বর্তমান আধুনিকায়নে মসজিদে নববীর রূপদান করেন সৌদি বাদশাহ আবদুুল আজিজ ইবনে সউদ। এর পরিকল্পনা করা হয় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৫৩-১৯৫৫ সালে মসজিদটি আধুনিকায়ন করে। বিশালকার মসজিদে নববীর সব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের।
জিয়ারত : ইসলামের বিধান অনুযায়ী লাখ লাখ মুসলমান জিয়ারত করতে যান মদিনা মসজিদের অভ্যন্তরে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা শরিফ। মহানবীর রওজার দুপাশে রয়েছে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও হজরত ওসমান গনী (রা.)-এর রওজা শরিফ। বিশেষ করে হজ পালনের আগে বা পরে হাজিরা মসজিদে নববীতে একনাগাড়ে কমপক্ষে আট দিন অবস্থান করে ৪০ রাকাত নামাজ আদায় করেন।
কিবলা পরিবর্তন : আমরা জানি যে নবী (সা.) মক্কায় বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন। অনুরূপ মদিনায়ও হিজরতের পরে ১৬ মাস ওই দিকে ফিরেই নামাজ আদায় করেছিলেন।
মুসলমানদের শত্রু ইহুদিরা এ বিষয়কে একটি বাহানা হিসেবে ধরে ইসলামকে পরাস্ত করতে চাইল এবং বলল, 'মুহাম্মদ (সা.) দাবি করছে যে সে আলাদা একটি শরিয়ত ও নিয়মকানুন এনেছে; কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার কিবলা সেই ইহুদিদের কিবলাই রয়েছে।' এ ধরনের আপত্তিকর কথাবার্তায় নবী (সা.)-এর অন্তরে ব্যথার উদ্রেক হলো। তিনি রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতেন এবং ওহির অপেক্ষায় আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। এমতাবস্থায় সুরা বাক্বারার ১৪৪ নম্বর আয়াত নাজিল হলো এবং তাতে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে কিবলা পরিবর্তন করে কাবাকে কিবলা হিসেবে নির্দিষ্ট করার নির্দেশ এলো।
মসজিদে বনি সালামা : রজব মাসের মধ্যবর্তী সময়ের দিকে হিজরতের পর ১৬ মাস পূর্ণ হয়েছিল, নবী (সা.) 'বনি সালামাহ্' নামক মসজিদে জামাতে জোহরের নামাজ আদায় করছিলেন। এমন সময় দুই রাকাত নামাজ আদায় শেষে জিবরাইল (আ.) সুরা বাক্বারার ১৪৪ নম্বর আয়াতটি নিয়ে নাজিল হলেন। নবী (সা.) ওই অবস্থায়ই কাবার দিকে ঘুরে যান। যারা তাঁর পেছনে নামাজ পড়ছিল তারাও ঘুরে গেল। আর এভাবেই জোহরের নামাজের পরবর্তী দুই রাকাত নামাজ কাবার দিকে ফিরে আদায় করে শেষ করলেন। সে জন্যই এই মসজিদ পরে 'মসজিদে জু-কিবলাতাইন' অর্থাৎ দুই কিবলাবিশিষ্ট মসজিদ নামে বিশেষ পরিচিত পায়। এ মসজিদটি মদিনায় অবস্থিত।
মসজিদে কোবা : হিজরতের পর মদিনার কেন্দ্রস্থলে পৌঁছানোর আগে হজরত নবী করিম (সা.) প্রথম কোবা নামক পল্লীতে বনি আমর ইবনে আওফের মেহমান হন এবং ১৪ দিন অবস্থান করেন। এখানেই তিনি সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কোবা পল্লীর এ মসজিদটিই ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ। আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমেই প্রিয় নবী (সা.) হিজরত-পরবর্তী সোনালি যুগের সুচনা করেন।
হজরত কুলসুম ইবনে হাদাম (রা.) নামক প্রবীণ সাহাবির এক খণ্ড ভূমির ওপর এ মসজিদটি নির্মিত হয়। নির্মাণের প্রতিটি কাজে প্রিয় নবী (সা.) স্বয়ং অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ মসজিদের বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা নির্দেশ করেই সুরা তওবার ১৩ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। যাতে বলা হয়েছে, সেই মহিমাময় মসজিদ, যার ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার ওপর প্রথম অবস্থা থেকেই। নামাজের উদ্দেশে এখানে দাঁড়ানোই সর্বাপেক্ষা সমীচীন। এর মধ্যে এমন লোক আছেন, যাঁরা অত্যধিক পবিত্রতার প্রতি বিশেষ যত্নবান। আর আল্লাহ তায়ালা পবিত্র লোকদেরই পছন্দ করেন।
এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর নবী করিম (সা.) কোবাবাসীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে তোমরা এমন কি পন্থা অবলম্বন করে থাক, যার প্রশংসা স্বয়ং আল্লাহপাক করেছেন? তাঁরা জবাব দিয়েছিলেন, মলমূত্র ত্যাগ করার পর প্রথমেই মাটি দ্বারা আমরা অপবিত্রতা দূর করি, তারপর পানি ব্যবহার করে পরিচ্ছন্ন হই। নবী করিম (সা.) তাঁদের এই পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতিটির প্রশংসা করেন (তিরমিজি শরিফ দ্বিতীয় খণ্ড, রুহুল মাআনি, ইবনে কাছির)।

Offline sumon_acce

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 359
    • View Profile
Thanks for sharing.