Faculty of Humanities and Social Science > Journalism & Mass Communication

চীন পাল্টে দিচ্ছে ভারত-বাংলা সম্পর্ক

(1/1)

Md. Alamgir Hossan:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর আলাদাভাবে বিশ্লেষণ না করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলা সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা উচিত। ৪৫ বছর ধরে ভারত মোটামুটি বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই সম্পর্ক নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের একটা বড় অংশের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু গত এক বছরের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টেছে, এর কারণ প্রধানত একটাই- চীনের বিশাল বিনিয়োগ। বিনিয়োগের সঙ্গে প্রভাব বেড়েছে এবং এটা ভারতীয় মাথা ব্যথায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু চীন গত দুই বছরে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করে দক্ষিণ এশিয়ার আন্তদেশীয় সম্পর্কে ভারসাম্য ভীষণ প্রভাবিত করেছে। এই তিন দেশই তাই ভারতের সঙ্গে দরকষাকষিতে সুবিধার জায়গায় আছে।

২. ভারতের সঙ্গে তার কোনো প্রতিবেশীর সুসম্পর্ক নেই। ভারতের এই ‘দাদাগিরি’ তাকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই অজনপ্রিয় করেছে। পাকিস্তানের ব্যাপারটা আলাদা, কারণ তাদের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ আছে। কিন্তু অন্য দেশগুলো কোনোভাবেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে পারেনি। ভারত নিজের স্বার্থকে এত উপরে রেখেছে যাতে অন্যদের ক্ষতি হয়েছে। ফারাক্কা একটি ভালো উদাহরণ। দক্ষিণ এশিয়ায় তারা ছিল একচ্ছত্র অধিপতি। সেই স্থানেই বাগড়া দিয়েছে চীনের অর্থনীতি ও বিনিয়োগ এবং তার সঙ্গে শুরু হয়েছে ভারতের মানসিক নিরাপত্তাহীনতা। ভারত কাউকে ভয় পায় না চীন ছাড়া। সেই চীন এখন দক্ষিণ এশিয়ায় পা রাখছে।

৩. চীন যখন বাংলাদেশে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে তখনই ভারতের গণমাধ্যমে চিৎকার-দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। কারণ ভারতের পক্ষে কোনো দিনই এত টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভব না। এই দুশ্চিন্তা এককাঠি উপরে ওঠে যখন বাংলাদেশ চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কিনে। ‘ভারতের বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞরা’ রীতিমতো হৈচৈ শুরু করে দেয় কারণ তাদের ভয় চীন এখানে পা রাখলে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সেই সময় থেকেই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করে। চীনের উপস্থিতি অবশ্য বাংলাদেশে যথেষ্ট স্বস্তি দিয়েছে। যতটা অস্বস্তি তৈরি করেছে ভারতীয়দের মনে।

৪. তিস্তা চুক্তি নিয়ে ঢাকায় এত দুশ্চিন্তার কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। তিস্তাতে কী আছে-না আছে এটাও কেউ জানে না। তবে পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষি  কোনো শেষ হবে না। চীনের সঙ্গে ভারতের পানি বিষয়ক দ্বন্দ্ব অত্যন্ত প্রবল, এটা বিশ্বের বাস্তবতা।

ভারতীয় গণমাধ্যমের মতে, মোদি চায় তিস্তা চুক্তি হোক এখনই কারণ তাতে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে বাড়তি কিছু চাইতে পারে। কিন্তু মমতা রাজি না। কারণ, কলকাতার হিসাব-নিকাশ বাকি আছে দিল্লির সঙ্গে। এটা ভারত-বাংলার বিষয় আর নেই, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়। বাংলাদেশ চাক আর না চাক কিছু এসে যাবে না।

মমতা নিজেও বলেছেন যে চুক্তি সই হবে কিন্তু কবে সেটা নিশ্চিত নয়। তবে সম্ভবত আগামী এক বছরের মধ্যে এটা হবে। কিন্তু এর সুবিধা অর্জন-গ্রহণ বা ব্যবহারের ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে কি না সেটা বড় প্রশ্ন। যেকথা এখন চীনের বিশেষজ্ঞরাও জিজ্ঞাসা করছে, ‘এত যে টাকা দিতেছি খাইতে পারবা তো?’। চীন বলেছে আরো আছে যদি বাংলাদেশ সদ্ব্যবহার করতে পারে।

৫. অতএব ভারত ও চীনের দ্বন্দ্বের সুবিধা ভোগকারী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত উৎকণ্ঠায় আছে যে গত ৫০ বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রথম একজন প্রতিদ্বন্দ্বী এসেছে। সে তার চেয়ে সবল এবং বেশি টাকাওয়ালা। সেই কারণেই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ক স্মারক (চুক্তি) সই করতে এত আগ্রহী। দুই বিলিয়ন ডলার ঋণও দিতে রাজি আছে অস্ত্র কেনার জন্য। এতে অবশ্য বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা জগতে একটু অখুশিভাব দেখা গেছে ভারতীয় গণমাধ্যমের মতে। সেই কারণেই ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বাংলাদেশে ঘুরে গেছেন, বুঝিয়েছেন যে তাঁরা আগের চেয়ে সংবেদশীল আচরণ করবেন। অতএব ভারত-বাংলা সম্পর্কে মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু তার সূত্র হচ্ছে চীন-ভারতের দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা।

আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বের জগতে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে যদিও সেটা নিজের যোগ্যতায় নয়। কিন্তু বাস্তবতা এটাই। তবে আমাদের আমলা ও ব্যবসায়ীদের সেই দক্ষতা ও যোগ্যতা আছে কি না এই পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার- সেটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পছন্দ-অপছন্দের বাইরে এখন ভারত-বাংলা সম্পর্কের অবস্থান। এই অবস্থানে  আগে আমরা কোনো দিন খেলিনি, যদি খেলতে পারি তাহলে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে।

দক্ষিণ এশিয়াই পাল্টে যাচ্ছে চীনের পূজির প্রভাবে। আমরা পারব কি না- সেটাই বিবেচ্য।

Ratul.JMC:
Thank you very much for your post. :)

Navigation

[0] Message Index

Go to full version