নাফাকুম জলপ্রপাত
বান্দরবান জেলার থানচী উপজেলায় অবস্থিত এই প্রাকৃতিক জলপ্রপাত টি।.২৫-৩০ ফুট এই জলপ্রপাত টি রেমাক্রী হয়ে সাঙ্গু নদীতে মিলেছে যেখানে মিলনস্থলে প্রাকৃতিক ভাবেই কয়েকধাপ সিঁড়ির মত করে হেলে দুলে নৃত্যের ছন্দে সাঙ্গু তে মিশে গেছে। আর এই নৃত্যের দলে এখানে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি ফলস যার নাম রেমাক্রী খুম।
পরিচ্ছেদসমূহ [আড়ালে রাখো]
* ১ কখন যাবেন
* ২ কিভাবে যাবেন
* ৩ কোথায় থাকবেন
* ৪ কোথায় খাবেন
* ৫ কি কি দেখবেন
* ৬ ভ্রমন পরিকল্পনা
* ৭ টিপস ও পরামর্শ
কখন যাবেন
বর্ষার সময় এই জলপ্রপাত টি ভয়াবহ রুপ ধারন করে আর তখন যাতায়াত খুব ই রিস্কি। তাছাড়া বর্ষায় সাঙ্গুর স্রোত অনেক বেশী থাকে ফলে রিস্ক অনেকটা বেড়ে যায়। তাই বর্ষার শেষ দিকে শীতের শুরুতে অথবা শীতের শেষ দিকে বর্ষার শুরুতে যাওয়াই ভালো। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অথবা মে-জুলাই মাসে যাওয়া যেতে পারে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বান্দরবান যাবেন এসি নন এসি অনেক বাস আছে ভাড়া নন এসি- ৬৫০ আর এসি ৮৫০ টাকা নিবে। বান্দরবান এর থানচী বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে থানচী বাজার যেতে হবে, ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০০ টাকা। এছাড়া বান্দরবান শহর থেকে থানচী রিসার্ভ চান্দের গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন ভাড়া নিবে ৪০০০-৫০০০ টাকা। থানচী বাজার এর গাইড সমিতি থেকে এবার আপনাকে গাইড ঠিক করতে হবে এবং সাথে রিসার্ভ ট্রলার নিতে হবে। এখানে ট্রলার আর গাইডের এক ধরনের সিন্ডিক্যাট চলে যেখানে তাদের হাতে পর্যটক রা জিম্মি। নাফাকুম পর্যন্ত মোট দুইজন গাইড লাগে যার একজন থানচী বাজার থেকে নিবেন অন্যজন রেমাক্রী বাজার থেকে (এটা নিয়ম সেখানের)। গাইড এখন প্যাকেজ আকারে নিতে হয় থানচী থেকে নাফাকুম পর্যন্ত যাওয়া আসা ২০০০ টাকা এবং রেমাক্রী থেকে যে গাইড নিবেন তাকে দিতে হবে ১০০০ টাকা। আর ট্রলার ভাড়া করবেন ৪০০০-৫০০০/- টাকা দিয়ে। যেদিন যাবেন সেদিন ও পরদিন নিয়ে আসা পর্যন্ত এই কন্টাক্ট। এক বোটে ৬-৭ জনের বেশি যেতে পারবেন না, বলতে গেলে এটাও এক ধরনের সিন্ডিকেট। তবে লোকাল ট্রলার ও আছে যদি ভাগ্য ভালো হয় মিলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে খরচ অনেক কম পড়বে । থানচী বাজার থেকে রেমাক্রী বাজার পর্যন্ত ভাড়া ১৫০-১৮০ টাকা জনপ্রতি। রেমাক্রী বাজার থেকে প্রায় ২-৩ ঘন্টা ঝিরি পথ পায়ে হেটে পাড়ি দিলেই পেয়ে যাবেন এই অপূর্ব সুন্দর জলপ্রপাত টি। এই দুই থেকে তিন ঘন্টার ঝিরি পথের প্রথমেই ছোট দুটি পাহাড় পাড়ি দিয়ে নেমে যেতে হবে ঝিরি পথে। এর পর পুরোটাই ঝিরি পথ কোথাও পাথুরে কোথাও মাটির কোঠাও কাদা কোথাও পানির। দু তিন জায়গায় হয়ত হাটু অথবা কোমর পানি পাড়ি দিতে হবে এই পথে এ পাড় থেকে ওপাড় যেতে। তাই সাথে দড়ি নিয়ে যেতে পারেন চলার সুবিদারথে। থানচী বাজারে গাইড ঠিক করার পর সবার নাম একটা কাগজে লিপিবদ্ধ করে থানচী থানা ও আর্মি ক্যাম্পে জমা দিয়ে আসতে হবে আপনাকে।
কোথায় থাকবেন
থানচী বাজারে কিছু গেস্ট হাউজ আছে সেখানে রাত্রী যাপন করা যাবে ভাড়া জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকার মত। এছাড়া রেমাক্রী বাজারে আদিবাসীদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা আছে জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা করে রাত্রী যাপন করতে পারবেন। এছাড়াও যারা ক্যাম্পিং করতে চান তারা বাজারের আশেপাশে কোথাও ক্যাম্প করতে পারবেন তবে তেমন ভালো মনপুত জায়গা নেই ক্যাম্পিং এর জন্য। শীতকাল হলে বাজারের ঘাটে শুকনা জায়গায় ক্যাম্প করতে পারেন।
কোথায় খাবেন
যদি থানচী বাজারে থাকেন তাহলে থানচী বাজারেই খাওয়া দাওয়া করার জন্য বেশ কিছু হোটেল পাবেন মোটামুটি মানের খাবার। রেমাক্রী বাজারে থাকলে খাবারের কথা আগেই বলে দিতে হবে তাহলে তারা খাবার রান্না করে রাখবে।পাহাড়ি মুরগি খেতে চাইলে গাইড কে বললে সে ব্যবস্থা করে দিবে, তবে দাম একটু বেশি হবে এবং দামাদামি অবশ্যই করে নিবেন। সবচেয়ে ভালো হয় নিরামিষ খেলে, এতে খরচ অনেক কমে যাবে। কারন সেখানে মুরগির দাম অনেক বেশি।
নাফাকুম জলপ্রপাতের উপরের দৃশ্য
কি কি দেখবেন
বান্দরবানের এমন কোন স্থান নাই যা আসলে না দেখার মত। বান্দরবান শহর থেকে থানচী যেতে পথে পড়বে শৈল্প্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, পিক৬৯, নীলগিরি সহ আরো অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা। থানচী থেকে ট্রালারে করে যেতে হবে পাহাড়ি খরস্রোতা সাঙ্গু নদীর উপড় দিয়ে স্রোতের বিপরীতে। এই বিপরীতে চলতে পথে দেখবেন কোথাও শান্ত সৃষ্ট ভদ্র সাঙ্গু আবার কোথাও দেখবেন বিকট ভয়ংকর খরস্রোতা সাঙ্গুর রূপ। যেতে পথে পড়বে রাজা পাথর এলাকা। এই রাজাপাথর এলাকায় দেখবেন বিশাল আকৃতির বহু পাথর যা আদিবাসীদের কাছে দেবতা এবং তাদের কাছে পূজনীয়। ছোট এক বাজার দেখবেন রাজা পাথর এলাকা পাড় হয়ে নাম তার তিন্দু। এরপর ই চোখে পড়বে নাফাকুম জলপ্রপাত এর বয়ে চলা জল আর সাঙ্গুর মিলনস্থল রেমাক্রীকুম। এছাড়া আশেপাশের বিশাল বিশাল পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা মেঘ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ তো আছেই।
ভ্রমন পরিকল্পনা
রাতের বাসে ঢাকা থেকে বান্দরবান। সেখান থেকে লোকাল বাসে করে থানচী যাওয়া। রিসার্ভ নৌকা সম্ভব হলে লোকাল নৌকা করে রেমাক্রী বাজার যেয়ে সে রাতে রেমাক্রী থাকা। পরদিন সকালে রওয়ানা হয়ে নাফাকুম ঘুরে দুপুরের মাঝে রেমাক্রী বাজারে ফেরত আসা। দুপুরে রওয়ানা দিয়ে থানচী বাজার সেখান থেকে বিকালের বাসে বান্দরবান শহর। রাতের বাসে ঢাকা। এভাবে পরিকল্পনা করলে কম খরচ এবং কম সময় নাফাকুম ঘুরে আসা সম্ভব।
টিপস ও পরামর্শ
* গ্রুপ করে যাওয়া ভালো, এতে করে খরচ কমে যাবে।
* আদিবাসী সভ্যতা, সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাঙ্গ করা থেকে বিরত থাকুন ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
* অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে সাঙ্গু নদী পাড়ি দেওয়ার সময় ও নাফাকুম এ যাওয়ার সময় লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন।
* সাঙ্গু নদী একটি খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, তাই অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়ে নদীতে নামুন। পাহাড়ের খাদ গুলো ভালো করে লক্ষ করে পা ফেলুন নদীতে।
* ভারী জামা কাপড় না নেওয়াই ভালো।
* ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে যথাস্থানে ফেলুন, প্রকৃতি কে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিন। প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ থেকে বিরত থাকুন।
* চিপস, চানাচুর, বিস্কুটের প্যাকেট পথে না ফেলে ব্যাগে ভরে নিয়ে আসুন ও যথাস্থানে ফেলুন।
* চলার সময় নিরবতার সাথে পথ চলুন। হৈ হুল্লুর থেকে বিরত থাকুন।
* ছোট বাচ্চা নিয়ে এই ট্রেইলে না যাওয়াই ভালো। তবে মহিলা/মেয়েরা অনায়াসে এই ট্রেইলে যেতে পারেন কোন সমস্যা নাই, ভয়ের ও কিছু নাই। তেমন কঠিন কোন ট্রেইল নয় এটা।
* নৌকা নেওয়ার সময় দামাদামি করে নিবেন, ওরা অনেক বেশি ভাড়া চেয়ে বসবে, তাই দর কষাকষি করে যতটুকু কমানো যায়।
* ঝিরি পথে হাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন যেন পা পিছলে পাথরে পরে কি কোন দুর্ঘটনা না ঘটে।
* নাফাকুমের জলপ্রপাতে সাতার না জানলে ঝাপ দিবেন না। পাথর ও খাদে আটকে গেলে মারাত্নক বিপদে পড়বেন।
* একা একা কোথাও যাবেন না দল ছেড়ে, পাহাড়ে হারিয়ে গেলে রাস্তা খুজে পাওয়া দুস্কর, তাছাড়া আপনার একার জন্য দলের বাকী সদস্যরা বিপদে পড়বেন।
* ব্যাকপ্যাক নিবেন সাথে, হাতের কোন ব্যাগ নিবেন না, পানির বোতল ও শুকনা খাবার রাখুন ট্রেইলে হাটার সময়।
* মশার কামোড় থেকে বাচতে অডোমস ক্রীম রাখুন সাথে, এছাড়া প্রাইমারী ওষুধ সাথে রাখুন।
* থানচীর পর তেমন মোবাইল নেটওয়ার্ক পাবেন না। রেমাক্রী বাজারে একটি মাত্র ফোনের দোকান পাবেন যেখানে ৫ টাকা মিনিট কথা বলা যাবে।
* থানচীর পর বিদ্যুত নেই তাই সাথে এক্সট্রা পাওয়ার ব্যাংক রাখুন।
* রেমাক্রী থেকে নাফাকুম যেতে ঝিরিপথে দু তিন জায়গায় হাটু অথবা কোমর পানি পাড়ি দিতে হতে পারে, নিরাপত্তার জন্য দড়ি রাখতে পারেন সাথে।
* জলপ্রপাত এর মুখে বসে ছবি উঠানোর সময় অতিরিকত সাবধানতা অবলবন করুন যেন পা পিছলে পড়ে না যান।
* ট্রেকিং এর সময় সাথে লাঠি,পুল বা বাঁশ জাতীয় কিছু রাখুন, যার সাহায্য নিয়ে পথ চলতে সুবিধা হবে।