বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন শিক্ষক নীতিমালা হচ্ছে
এক্সক্লুসিভ
স্টাফ রিপোর্টার | ১৬ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার | সর্বশেষ আপডেট: ১১:৩৬
উচ্চ শিক্ষার মান বাড়ানো ও সমুন্নত রাখতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। দেড় যুগ পর এটি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। শিক্ষক রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদিচ্ছার কারণে এতো বছর আটকে থাকার পর শিগগিরই প্রজ্ঞাপনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইউজিসির অডিটোরিয়ামে এক বৈঠকে এটি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভিসি পর্যায়ে আরেকটি বৈঠকে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর প্রজ্ঞাপন জারির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর আগে অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এই নীতিমালা হলেও শিক্ষক নিয়োগের বাণিজ্য, দৌরাত্ম্য, পদোন্নতি জটিলতা, লেজুড়ভিত্তিক শিক্ষক রাজনীতির প্রভাব কমাসহ শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আসবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের সমন্বিত কোনো নীতিমালা নেই। ফলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানও সমান নয় এবং ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বৈষম্য বিরাজমান। এ বৈষম্য দূর করতে ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নে নীতিমালা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠায়। ইউজিসি সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে বৈঠকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মতামত নেয়া হয়েছে। এখন ভিসিদের ডাকা হবে। তাদের মতামত নেয়ার পর এ নীতিমালা চূড়ান্ত করে তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় তা কেবিনেটের অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশে বর্তমানে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, এই অভিন্ন নীতিমালা করার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার মান বজায় রাখতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের একই মানে উন্নীতকরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। এটা হলে চূড়ান্তভাবে শিক্ষার মানই উন্নত হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্যও দূর হবে।
জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে প্রথম এই উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০২ এবং ২০০৪ সালে অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হয়। পরে ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও একবার এই উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মাঝখানে চার, পাঁচ বছর পর পর কখনো নতুন শিক্ষামন্ত্রী অথবা ইউজিসির নতুন চেয়ারম্যান উদ্যোগ নেন। কমিটি করেন নতুন নতুন প্রস্তাব আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৮ম পে-স্কেলে শিক্ষককের বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতার পর প্রধানমন্ত্রী তা সমাধান করতে অভিন্ন নীতিমালা করার কথা বলেন। এরপর ইউজিসি এটি দ্রুত করতে উদ্যোগ নেয়। অভিন্ন নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১১ বছরেই অধ্যাপক হয়ে যায়। কোথাও প্রভাষক পদে যোগ দিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি বাধ্যতামূলক। আবার কোথাও যে কোনো একটিতে প্রথম শ্রেণি থাকলেই চলে। স্বায়ত্তশাসিত চারটি বড় ও পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় সবচাইতে বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকে। এই অভিন্ন নীতিমালা হলে তা বন্ধ হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বেতন স্কেলে বৈষম্যের প্রতিবাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠকে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে বৈষম্যের বিষয়টি সরকারের নজরে আসে। তখনই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে একটি মানসম্মত অভিন্ন নীতিমালা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। মন্ত্রণালয় ইউজিসিকে এ দায়িত্ব দেয়। ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ আলী মোল্লাকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. শাহ নওয়াজ আলি, প্রফেসর ড. দিল আফরোজা খানম ও প্রফেসর ড. মো. আখতার হোসেন এবং ইউজিসি সচিব ড. মোহাম্মদ খালেদ। এ কমিটির সদস্য সচিব ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের পরিচালক খন্দকার হামিদুর রহমান।
নীতিমালা কমিটি কয়েকটি সভায় বসে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। প্রণীত এ খসড়ায় বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষকের পিএইচডি বা সমমানের উচ্চতর ডিগ্রি থাকবে, তারা প্রভাষক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং স্বীকৃত জার্নালে ১৪টি প্রকাশনা থাকলে চাকরির ১৬ বছরে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলে ১৮ বছরে একজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। পদ থাকলে সরাসরি ১৬ বছরে নিয়োগ পাবেন অধ্যাপক হিসেবে। আর পদশূন্য না থাকলে পদোন্নয়নের মাধ্যমে ১৮ বছরে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। নতুন খসড়া নীতিমালায় বলা হয়, প্রভাষক পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে তিন বছরের ক্লাসরুম শিক্ষকতা এবং স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে দুটি গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে হবে। একইভাবে, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে সাত বছরের ক্লাসরুম শিক্ষকতা এবং স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে তিনটি গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে সাত বছরে, আর না থাকলে চাকরির নয় বছরে একজন শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন। এরপর পরবর্তী পদোন্নতি অর্থাৎ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে আরো আট বছর চাকরি করতে হবে।