বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ।
আগামী ১৫ দিন সিটিং সার্ভিস চলতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। তবে এসব বাসে সরকার নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। ১৫ দিন পর পরিবহন মালিক, যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান। বিআরটিএর দেওয়া রুট পারমিটে সিটিং বাস চালানোর বৈধতা না থাকলেও রাজধানীতে বহু দিন ধরেই চলছে এই ধরনের বাস। এই বাসের ভাড়া বেশি রাখা হলেও সেবা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ বরাবরই ছিল।
বাস মালিকরা ঘোষণা দিয়ে গত রোববার সিটিং সার্ভিসের বাস চালানো বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত এর বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। এতে অনেক বাস মালিক সড়কে গাড়ি না নামালে দেখা দেয় পরিবহন সঙ্কট। ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের বচসার মধ্যে বাস সঙ্কটের দুর্ভোগ চলছে গত তিন দিন ধরে। এই অবস্থার মধ্যে বুধবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এলেনবাড়ীতে বিআরটিএর কার্যালয়ে বৈঠকে ডাকা হয় পরিবহন শ্রমিকদের।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৫ দিন সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ থাকবে। তারপর সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুযায়ী সব বাসের ভাড়া নিতে হবে বলে জানান তিনি। তা না করলে সড়কে কার্যরত ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান। “কোনো অবস্থাতেই ভাড়ার ব্যাপারে আপস করব না। সরকারি হিসাবে কিলোমিটার প্রতি যা ভাড়া আছে, তা নিতে হবে।”
এই পদক্ষেপ থেকে সরে আসার বিষয়ে মশিয়ার বলেন, “একটা উদ্দেশ্য নিয়েই মালিকরা সিটিং সার্ভিস বন্ধ করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের সে উদ্যোগে সহায়তা করেছি। “তবে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পর নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের অসুবিধার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তাদের গাড়িতে উঠতে সমস্যা হচ্ছে।” বৈঠকের পর ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, অভিযান স্থগিতের সিদ্ধান্ত পরিবহন মালিকদের নয়। “আপনারা হয়তো বলতে পারেন আমরা যুক্তি করে এটা করেছি, কিন্তু তা না। এখানে মালিকদের কেউ কথা বলেনি। এটা মালিকদের সিদ্ধান্ত না। সবার কথা শুনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
বৈঠকে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতা অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনও ছিলেন। তবে বৈঠক শেষে তিনি কোনো কথা বলেননি। বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইলিয়াস কাঞ্চন সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পক্ষে ছিলেন।” বৈঠকে সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, ট্রাক কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি রুস্তম আলী, ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিনিধি এবং পরিবহন মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, তারা সড়কে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে সিটিং সার্ভিস বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
“আমরা কাজটা ধরেছিলাম যে জিনিসটাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসি। শৃঙ্খলা এলে দরকার হলে এই ভাড়া দিয়েই সিটিং সার্ভিস চালু করে দিতাম। কিন্তু তারপরও আমরা সমালোচনার পাত্র হচ্ছিলাম।”