মর্গে হয়তো ডাই করে রাখা ছিল এই বরফের চাঁই। কিংবা হিমঘর থেকে কোনও দোকানি কিনে এনেছেন কম দামে। তারপর! রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রোজ যে পুদিনার সরবতের গেলাসে তৃপ্তির চুমুক দিচ্ছেন, তা তো এই বরফের সৌজন্যেই। মৃতদেহ সংরক্ষণ, মাছ-সবজির সংরক্ষণে ব্যবহৃত ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস’ শহরজুড়ে৷ ফ্রুট জুস থেকে লেবু পানি হয়ে সেই অপরিশোধিত ক্ষতিকারক পানিই প্রতিদিন ঢুকছে শহরবাসীর শরীরে! কাটাফলের রমরমা রুখতে অভিযানে নেমে এ ছবি দেখে তো কপালে চোখ ওঠার জোগাড় কলকাতা পৌসভার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।
যদিও এটাই প্রথমবার নয়। এর আগেও বহুবার পৌরসভার অভিযানে এ ছবি ধরা পড়েছে। সরবত বিক্রেতাদের সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু সে কথা কে আর কানে তুলেছে! মুখের কথায় যে কাজ হবে না তা বেশ বুঝেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাই এবার আইনের পথে হাঁটতে চান তারা। সরাসরি মামলা ঠুকে এই বরফ ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করল কলকাতা পৌরসভা৷
পৌরসভায় স্বাস্থ্যকর্তা বুধবারই বলেছেন, “এর আগে একাধিক দোকানদারকে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল বরফ না ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছিল৷ কিন্তু এদের সিংহভাগই পৌরসভার সেই সতর্কবার্তাকে অবহেলা করেছেন৷ এবার তাই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে৷” বুধবার প্রায় ১২টি দোকানকে শনাক্ত করেছেন পৌরসভার ভেজাল রোধ বিভাগের কর্তারা৷ নষ্ট করা হয়েছে কয়েক টন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বরফ৷ তবে ফুটপাথের দোকানদারদের মধ্যে সন্তোষজনক সাড়া মিলেছে বলেই দাবি করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা৷
পৌরসভা সূত্রে খবর, বুধবার নিউমার্কেট চত্বরে একাধিক ফলের রস, আখের রসসহ একাধিক দোকানে অভিযান চালানো হয়৷ ফুটপাতের দোকানও ছিল অভিযানের মধ্যে৷ কিন্তু অভিযান শেষে দেখা গেছে, যাদের দোকান রয়েছে বা যারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন তারাই মূলত এই সস্তার ইন্ডাস্ট্রিয়াল বরফ ব্যবহার করছেন৷ অথচ এর আগে অভিযান চালিয়ে একাধিকবার সতর্ক করে বলা হয়েছে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি ‘আইস কিউব’ ব্যবহার করতে হবে৷
অভিযান চলাকালীন এক আখের রস বিক্রেতা স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন, শুধু দোকানদারদের বলে কী হবে? যারা বিক্রি করছে তারা যদি আমাদের এই বরফ দেয় তো কী করব৷
কারা এই বরফ সরবরাহ করছে এদিন তাও খুঁজে বের করেছেন পৌরকর্তারা। হানা দিয়েছেন নিউমার্কেট বাজার, ধর্মতলা ও ময়দান চত্বর এলাকার ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস সরবরাহকারীর ডেরায়। রাস্তার উপরের নোঙরা পরিবেশে থরে থরে সাজানো বরফের চাঁই। সেই চাঁই বস্তায় করে ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। এদিন বিপুল পরিমাণ বরফ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
যেহেতু এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল বরফ তৈরিই হয় অপরিশোধিত পানি দিয়ে৷ ফলে এই বরফের পানি থেকে টাইফয়েড, জন্ডিস, পাচনক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটানোর মতো অসুখ ছড়িয়ে পড়তে পারে৷