৭ - ৮ বছর আগের কথা। জুট ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কিছু স্টাডি করতে চেয়েছিলাম। একটি জুট ইন্ডাস্ট্রিতে খুব সহজেই অনুমতি পাওয়া গেল। শুধু তাই নয় যেদিন সেখানে যেতাম দুপুরের লাঞ্চও রেডি থাকতো।
আমার শুক্র ও শনিবারে ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকতো। শনিবারে সকালে উত্তরা থেকে সোজা চলে যেতাম ডেমরা পার হয়ে। ফ্যাক্টরিতে ঢুকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন মেশিন ও ক্যালকুলেশন নিয়ে আলাপ করতাম অনেকের সাথে। ভাল লাগতো সেই সব পুরানো দিনের মানুষদেরকে। আমি রেগুলার ক্লাস নেই। অনেক ক্ষেত্রেই জুটের প্রায় সব কিছুই পড়ানোও এর অংশ। কিন্তু এই পুরানো দিনের মানুষেরা আমাকেও প্রায় স্টুডেন্টদের মত শেখাতে চাইতো। একজনের কথা মনে আছে যিনি আমাকে সাথে সাথে লিখে নিতে বলতেন। ভাল লাগত তাদের এই আন্তরিকতা।
প্রথম দিনই চোখ আটকে গেল ওই জুট ফ্যাক্টরির রেস্ট হাউসের প্রতি। বহু আগে তৈরি হয়েছিল সেটা। পুরানো আসবারপত্র ও বিশাল বিশাল রুম সেখানে।
যাই হোক নিজের জন্য কিছু ডাটা সংগ্রহ করার পর আর কাজে আগ্রহ থাকলো না। তার পরও যেতাম সেখানে। শীতলক্ষ্যা নদীর পাশ দিয়ে নৌকা ও বারজের যাওয়া আসা দেখতাম। আর জুট ফ্যাক্টরি ঘুড়ে ঘুড়ে পুরানো দিনের বিল্ডিং ও শেড গুলো দেখতাম। পুরা ফ্যাক্টরিতে রেল লাইন বসানো। ফ্যাক্টরির জিনিস পরিবহণ করা হত এগুলো দিয়ে। এখন সব পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে। রিপেয়ার শপের বিশাল শেড।
শখ মিটিয়ে নস্টালজিয়া উপভোগ করতাম - যদিও আমার নিজের কোন স্মৃতি সেখানে নাই। সত্যি বলতে ওখানে যারা চাকুরী করত তাদের দেখে কিছুটা ঈর্ষাই হত। কি সুন্দর জায়গায় তারা থাকে। যেখানে রুমের ছাদ অনেক উপরে। আসবারপত্র গুলো কম করে হলেও ৪০ - ৪৫ বছরের পুরানো। জানালা ও দরজা গুলো বিশাল বিশাল। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। মানুষের কোলাহল নাই। খুব ইচ্ছা জাগত রাতে সেখানে থেকে যেতে। আমি আমার খোলা চোখেই যেন সেই পুরানো সময় দেখতে পেতাম।
মনে হত আমি টাইম মেশিনে করে চলে গেছি সেই সময়ে যখন আমার জন্মই হয় নাই।
কিন্তু বিকালে আবার ফিরে আসতে হত যান্ত্রিক জীবনে। যেখানে পরিবর্তন হয় প্রতি মুহূর্তে। সব কিছুই হিসেব করে কাটছাঁট করা। নাই বাড়তি কোন স্পেস। সময় যেখানে ছুটে চলে সময়েরও আগে।