বর্ষা মৌসুমে কেওক্রাডং ট্র্যাকিং

Author Topic: বর্ষা মৌসুমে কেওক্রাডং ট্র্যাকিং  (Read 725 times)

Offline SabrinaRahman

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 333
  • Never give up because great things take time
    • View Profile
বর্ষা মৌসুমে কেওক্রাডং ট্র্যাকিং

ঢাকা থেকে বান্দরবান-কেওক্রাডং যেভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে রাতের শেষ বাসে বান্দরবান এর উদ্দেশ্যে রওনা। ঢাকা থেকে বান্দরবান নন এসি বাস (হানিফ,শ্যামলি,ইউনিক,এসআলম) ভাড়া ৬২০ টাকা। এসি বাস (শ্যামলী,সেন্টমারটিন) ভাড়া ৯৫০ টাকা।
পরদিন ভোরে বান্দরবান টার্মিনালে নামার পর সকালের নাস্তা করে ফেলুন। টার্মিনালের আশেপাশে অনেক চান্দের গাড়ি আপনার আশেপাশে ঘোরাফেরা করবে। একটাকে দরদাম করে ঠিক করে ফেলুন। রাস্তা খারাপের কারণে বর্তমানে বান্দরবান থেকে রুমাঘাট পর্যন্ত চান্দের গাড়ি যায়। বান্দরবান থেকে রুমাঘাট পর্যন্ত বর্তমান ভাড়া ৩০০০-৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। একটা চান্দের গাড়িতে ১২ থেকে ১৫ জন বসা যায়। ঘণ্টা ২ পর আপনাকে রুমা ঘাটে নামিয়ে দিবে। সেখানে থেকে আরেকটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে রুমাবাজার পর্যন্ত যেতে হবে। ভাড়া পরবে ৫০০-৭০০ টাকা রিসার্ভ। এই চান্দের গাড়িতেও ১২ থেকে ১৫ জন বসতে পারবেন। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে এই রুমাঘাট থেকে রুমাবাজার পর্যন্ত রাস্তা অনেক খারাপ।
রুমাবাজারে নেমে গাইড ঠিক করে ফেলুন কেওক্রাডং এর জন্য। গাইড প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা করে নিবে। গাইডের থাকা-খাওয়া আপনাকেই বহন করতে হবে। যাত্রাপথে রুমা বাজার থেকে কেওক্রাডং হয়ে আবার রুমা বাজার পর্যন্ত গাইড আপনার সাথেই থাকবে। সেই আপনাকে গাইড করবে পুরো পথ। সো চিন্তার কোনই কারন নাই। গাইড ঠিক হয়ে গেলে আর্মি কাম্পে নাম-ঠিকানা এন্ট্রি করে ফেলুন। তারপর রওনা হবেন বগালেকের উদ্দেশ্যে। বগালেক যেতে হলে আপনাকে এই রুটটি ফলো করতে হবে- রুমাবাজার-মুনলাইপারা-১১ মাইল-বগালেক। রাস্তা খারাপের কারণে রুমাবাজার থেকে ঘণ্টা খানেক হেটে মুনলাই পাড়া যেতে হবে। মুনলাই পাড়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিন। মুনলাই পাড়া থেকে চান্দের গাড়ি নিয়ে ১১ মাইল টং দোকান পর্যন্ত যেতে পারবেন। ১১ মাইল টং দোকানের পর আর যায় না এখন। ওদিকের রাস্তাও খারাপ। এই ১১ মাইল পথটুকু অনেক বিপদজনক। আপনি চাইলে এই পথ চান্দের গাড়িতে না এসে হেটেই যেতে পারেন। এতে করে সময় ২-৩ ঘণ্টা বেশি লাগলেও, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন। মুনলাইপারা থেকে ১১ মাইল টং দোকান পর্যন্ত ভাড়া নিবে ২০০০-২৫০০ টাকা।
টং দোকানে কিছু হালকা খাবার খেয়ে আবার হাটা শুরু করে দিন বগালেকের উদ্দেশ্যে। ঘণ্টা তিনেক লাগবে হেলে দুলে যেতে। সন্ধ্যার আগ দিয়ে পৌঁছে যাবেন কাঙ্ক্ষিত বগালেক। নাম এন্ট্রি করে বগালেক পাড়ায় প্রবেশ করুন। কোন একটা কটেজে উঠে পরুন। বগালেক কটেজ গুলোয় প্রতি রাত থাকা ১০০ টাকা এবং প্রতি বেলা খাওয়া ১০০ টাকা করে। খাবারে মুরগি যোগ করলে ১৫০ টাকা। রাতে মোবাইল চার্জ ২০-৩০ টাকা। বগালেকে চা-বিস্কুট-কোক মোটামোটি সবই পাওয়া যায়।
পরদিন সকালে নাস্তা শেষ করেই রওনা হোন কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। বগালেক-কেওক্রাডং-বগালেক হেলে দুলে বিশ্রাম নিয়ে যেতে-আসতে
৭-৮ ঘণ্টার মত লাগবে। পুরোটা পথই হাটা-ট্রেকিং। ৩০-৪০ মিনিট পর পথে পরবে চিংড়ি ঝর্না। আসল ঝর্না টুকু দেখতে হলে আপনাকে বিশাল বিশাল পিচ্ছিল পাথরগুলো পেরিয়ে আর একটু ভেতরে ঢুকে ডান দিকে ৯০ ডিগ্রি ঘুরতে হবে। দেখবেন অসাধারণ একটি ঝর্ণা, যেন বাশ বাগানের মাথার অনেক উপর থেকে একেবেঁকে নেমে আসছে চমৎকার একটা স্রোতধারা। চিংড়ি ঝর্নায় কিছুক্ষন সময় কাটানোর পর রওনা দিয়ে দিবেন। এরপর চলে যাবেন দার্জিলিং পাড়ায়। সেখানে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার রওনা কেওক্রাডং। হাঁটতে হাঁটতে নিজের অজান্তেই একসময় পৌঁছে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত কেওক্রাডং এর চূড়ায়। মন ভোরে প্রকৃতি উপভোগ করে নিন। প্রকৃতি উপভোগ আর ফটোসেশন শেষ করে আপনাকে আবার রওনা দিতে হবে বগালেকের উদ্দেশ্যে একই পথে একই ভাবে। সন্ধায় বগালেক পৌঁছে লেকের পাড়ে ঠাণ্ডা পানিতে গোসলটা সেরে ফেলতে পারেন। সারা দিনের ক্লান্তি কেটে যাবে। এবং হ্যা অবশ্যই লেকে নামবেন নাহ। লেকের গভীরতা অনেক-যেটা বুঝা যায় নাহ। সাঁতার জানলেও নামবেন নাহ।
পরদিন সকালে নাস্তা করে আসতে ধীরে আপনাকে আবার রওনা দিতে হবে বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে। একই ভাবে একই পথে। যদি যাবার পথে আরেকটু আনন্দ করে যেতে চান, তাহলে রুমাবাজার থেকে ট্রলার করে যেতে পারেন বান্দরবান শহরে। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টার মত। পুরো পথটা আঁকাবাঁকা পাহাড়ে ঘেরা। ট্রলার এর পথটুকু আশাকরি অনেক ভালো লাগবে। বর্তমানে রুমাবাজার থেকে বান্দরবান শহর পর্যন্ত ট্রলারে ভাড়া পরবে ৪০০০-৪৫০০ এর মত। ট্রলারে ১০-১৫ জন অনায়েশে যাওয়া যায়। বগালেক থেকে বান্দরবান শহর যেতে যেতে বিকাল অথবা সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সন্ধায় পৌঁছে কোন একটা হোটেলে একটা রুম নিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে  রাতের শেষ বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা। পরদিন সকালে ঢাকা এবং সেখান থেকেই সবাই সবার বাসায়।
খরচঃ

এই ট্যুর প্ল্যান মোতাবেক ১০-১৫ জন মিলে গেলে জনপ্রতি ৩৫০০-৪০০০ টাকার মত লাগবে (নন এসি বাসে যাওয়া-আসা) এবং এসি বাসে যাওয়া-আসা করলে অতিরিক্ত ৭০০ টাকা লাগবে।
কিছু পরামর্শঃ

> আগে থেকে গাইড এবং কটেজ ঠিক করে যেতে পারেন। এতে করে সময় কিছুটা বেচে যাবে।
> প্ল্যান ঠিকঠাক থাকলে বান্দরবান শহরে নামার পরই ফিরতি বাসের টিকেট কেটে রাখতে পারেন।
> রুমা বাজারে পৌঁছে একজোড়া পেগাসাস বেল্ট জুতা কিনে নিবেন। দাম পরবে ১২০-১৩০ টাকা। বর্তমান এই বৃষ্টির সময় এই জুতা জোড়াই আপনার সর্বপ্রথম বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিবে।
> ১১ মাইল টং দোকান থেকে একটা শক্ত বাঁশের লাঠি নিয়ে নিবেন। ১০ টাকা নিবে।
> এই রুটের ট্র্যাকিং পথে জোঁক পাবেন অনেক। পায়ের মোজা সাথে করে নিয়ে যাবেন। জোঁকের পরিমাণ বেশি থাকলে মোজা আপনাকে রক্ষা করবে।
> কোনো অবস্থাতেই গাইড ছাড়া একা কোথাও যাবে না।
> পাহাড়িদের বিশেষ করে মেয়েদের বিনা অনুমতিতে ছবি নেবেন না।
> কাঁধের ব্যাগ নিয়ে যাবেন। ব্যাগ যতটুক পারেন হালকা করে নিবেন। কারনপুরো পথ আপনাকেই বহন করতে হবে।
> পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে গেলে উপকার পাবেন।
> বগালেক-কেওক্রাডং এ রবি সিমের নেটওয়ার্ক সবচেয়ে ভালো।
> বগালেকে সাঁতার জানলেও নামবেন নাহ।
> আর্মি কাম্পে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। আর্মিদের সাথে অবশ্যই অবশ্যই ভালো ব্যাবহার করবেন। দরকার মনে হলে তাদের মোবাইল নাম্বার সাথে রাখবেন।
> আপনি যে ভাবেই যান না কেন, রুমা বাজার থেকে বাধ্যতামুলক ভাবে সাথে অন্তত একজন গাইড নিতে হবে এবং রিপোর্ট করতে হবে রুমা আর্মি ক্যাম্পে।  আর্মিদের ক্যাম্পে গাইডের নামসহ আপনাদের সঠিক নাম এবং ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। রেজিস্টার্ড গাইড ছাড়া বগালেকে যাওয়া নিষিদ্ধ।
কিছু প্রয়োজনীয় নাম্বারঃ

সিয়াম দিদিঃ ০১৮৪০৭২১৫৯০ (বগালেকের একজন অসাধারণ কটেজ মালিক)
লাল দাঃ ০১৮৭৬৩৫৫৩৮০ (গাইড)
আলিঃ ০১৮৩২৭৭৭২৮৭ (গাইড)

[এই প্ল্যানটি বর্ষা মৌসুম এর আলোকে লেখা, শীত মৌসুমে রাস্তা পুরোটাই ভালো থাকে। সম্পূর্ণ পথ চান্দের গাড়ি দিয়েই অতিক্রম করা যায়। সেক্ষেত্রে ভ্রমন যাত্রার প্ল্যান অনেকটা পরিবর্তন আশবে, এই বছরের বর্ষাকালীন ট্যুর সময়ঃ অক্টোবর ২০১৬ থেকে নভেম্বর ২০১৬]
----------------------------
Sabrina Rahman
Lecturer
Department of Architecture, DIU