Faculties and Departments > Departments
সিলেটে শাপলার রাজ্যে
SabrinaRahman:
সিলেটে শাপলার রাজ্যে
পান ও পানি সিলেটে বিখ্যাত। সিলেটের বিলগুলোও কিন্তু বেশ নামকরা। জৈন্তাপুর সেরকমই একটি জায়গা। জৈন্তরাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত ডিবির হাওর, ইয়াম, হরফকাটা কেন্দ্রী বিলসহ রয়েছে চারটি বিল। বিলগুলোকে কেন্দ্র করেই নাম করা হয়েছে ডিবির হাওর। চারটি বিলের অবস্থান আবার যেখানে-সেখানে নয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে। রাম সিংহের বিলগুলো এখন রূপ নিয়েছে শাপলার রাজ্যে। বিলে ফুটে থাকে অজস্র লাল শাপলা। লতা-পাতা-গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত-হাজারো লাল শাপলা হার মানায় ভোরের সূর্যের আলোকেও। সবুজ পাতার আচ্ছাদনে ঢাকা পড়েছে বিস্তীর্ণ জলরাশি। ভোরের আলোয় শাপলার হাসি আরও আলোকিত করে দেয় বিলগুলোকে। প্রকৃতি তার নিজ হাতে লাল শাপলার হাসিতে সাজিয়ে দিয়েছে বিলগুলোকে। বেড়াতে আসা যেকোনো ভ্রমণপিপাসুদের মনের দুয়ার খুলে দেবে এই শাপলা বিল।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার উত্তর-পূর্বদিকে পাশাপাশি চারটি বিল। সেখানে দেখা মিলবে চোখজুড়ানো এমন দৃশ্যের। সিলেট শহর থেকে ৪২ কিলোমিটারের যাত্রাপথ। আগেই বলে রাখা ভালো, শাপলার পরিপূর্ণ হাসি দেখতে ভ্রমণপিপাসুদের পৌঁছাতে হবে ভোরে। সূর্যের আলো ফোটার আগেই ফুটন্ত শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। ঘুমন্ত নয়, ‘ফুটত্ম শাপলা’ দেখতে চাই—এই ইচ্ছা নিয়েই আমরা ছয়জন শাপলা বিলে যাওয়ার জন্য আগের রাত সাড়ে তিনটায় রওনা দিলাম। বাহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। চারজন অটোরিকশায় আর দুজন বাইকে করে এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাই জৈন্তাপুর বাজারে। হেমন্তের এই সময়ে রাতের বেলা বাইক চালানোয় শীতে কাবু হয়ে গেলাম। গুলজার বলল, হেমন্তের শীতের রাতে চা খেলে কেমন হয়? বলতে না বলতেই মাইন ঢুকে পড়ল চায়ের দোকানে। ততক্ষণে সেখানে উপস্থিত স্থানীয় সংবাদকর্মী রেজওয়ান সাব্বির, সে-ও আমাদের সঙ্গে যোগ হলো শাপলা বিলে যেতে। আর দেরি নয়, তাড়া দিল প্রিতম। জৈন্তাপুর বাজার থেকে এবার রওনা শাপলা বিলে। বাজার থেকে মিনিট দশেকের মাথায় পৌঁছে গেলাম বিলে। তখনো কুয়াশামাখা প্রকৃতি পড়েনি ভোরের আলোয়। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় বিলের কাছেই রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর বিশেষ ক্যাম্প। এত ভোরে এখানে! কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বসলেন এক বিজিবি সদস্য। শাপলা বিলে বেড়াতে এসেছি শুনে হেসে দিলেন তিনি। আগে এখানে গ্রামের মানুষ আর আমরা ছাড়া কেউ আসত না। কিন্তু এখন বছরের এই সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই বেড়াতে আসে এখানে। জানালেন তিনি। সতর্ক করে দিলেন সীমান্তের বেশি কাছাকাছি না যেতে।
এবার শাপলার রাজ্যে নামার প্রস্তুতি। চার বিলের মধ্যখানে মেঠোপথ। বিলের সামনেই এলাকাবাসীর বসবাস। মাঝি নৌকা নিয়ে আসার পর দেরি না করে উঠে বসলাম নৌকায়। ভোরের সূর্যের আলোয় চিকচিক করে হাসছে লাল শাপলা। মেঘালয় পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে আছে কুয়াশা। আকাশের বুকে উড়ছে অতিথি পাখি। এখানে এলে উপভোগ করতে পারবেন এর সবই। আমরা সবাই ব্যস্ত ছবি তুলতে। ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে নৌকার মাঝির সঙ্গে জমে উঠেছে গল্প। মাঝি জানালেন, লাল শাপলার বিলে এই সময়ে আসতে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। পাখির কলতানে মুখর থাকে বিলগুলো। পূর্ব আকাশে সূর্যের আলোকেও হার মানায় বিলের শতসহস্র রক্তিম লাল শাপলা। রাতের স্নিগ্ধতায় ফুটে থাকা লাল শাপলা দিনের আলোয় পাপড়ি দিয়ে অনেকটা লুকিয়ে রাখে নিজেকে। বিলের পাশে মেঘালয়, পাহাড়ের নিচে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। হরফকাটা ও ডিবি বিলের মধ্যে রয়েছে রাজা রাম সিংহের সমাধিস্থল। দূর পাহাড়ে দেখা মিলবে খাসিয়াদের পান-সুপারির বাগান। প্রকৃতির বুকে শিল্পীর তুলিতে আঁকা এ যেন এক নকশিকাঁথা।
ডিবির হাওর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক জানান, বিলের ওপরে দখল করে আছে শাপলা আর পানিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। পানি শুকিয়ে এলে সেখানে চলে মাছ ধরা। এখানকার বাসিন্দার পেশা কৃষি ও মাছ ধরা। বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে দেখতে পাবেন এই লাল শাপলা। পাহাড়ি টিলা, বিল-ঝিল-হাওর, নদী-নালা, খাল-বিলবেষ্টিত ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর জৈন্তাপুর। ডিবির হাওর গ্রামের নিরঞ্জন বিশ্বাস জানান, এই বিলে আগে কোনো ধরনের শাপলা ছিল না। তাঁর ভাষ্যমতে, ৩০ বছর আগে সীমান্তের ওপারে খাসিয়া সম্প্রদায় লাল শাপলা দিয়ে পূজা-অর্চনা করত। খাসিয়া পরিবারের কেউ একজন প্রথমে ডিবি বিলে লাল শাপলার একটি চারা রোপণ করেন পূজা-অর্চনায় ফুলের চাহিদা মেটাতে। সেই থেকে একে একে ডিবি বিল, কেন্দ্রি বিল, হরফকাটা বিল, ইয়ামবিলসহ পার্শ্ববর্তী জনসাধারণের পুকুর-নালা পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে লাল শাপলায়। চারটি বিলের অন্তত ৭০০ একর জায়গা লাল শাপলা দখল করে আছে। পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত সিলেটের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় নাম দখল করে নিচ্ছে এই শাপলা বিল।
কীভাবে যাবেন
সিলেট থেকে সরাসরি সিলেট-তামাবিল সড়কপথে বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা প্রাইভেট কারে আসতে হবে জৈন্তাপুরে। জৈন্তাপুর বাজার থেকে কিছ দূর গেলেই সড়কের ডান দিকে দেখা যাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর বিশেষ ক্যাম্প। ক্যাম্পের পাশ দিয়ে কাঁচা সড়কে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন শাপলা বিলে। নৌকার ভাড়া নেবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। সারা দিনের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নেবে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। কাছাকাছি কোনো রেস্টুরেন্ট না থাকায় সঙ্গে শুকনো খাবার রাখতে পারেন। তবে খাবার শেষে পলিথিন ব্যাগ বা অন্য কিছু হাওরে ফেলবেন না।
Nayeem Arch:
Thanks for sharing...
ABM Nazmul Islam:
..i had been there
murshida:
nice
Sharminte:
Thanks for sharing
Navigation
[0] Message Index
[#] Next page
Go to full version