হাড়কিপটে কোটিপতি

Author Topic: হাড়কিপটে কোটিপতি  (Read 1377 times)

Offline shyful

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 219
    • View Profile
হাড়কিপটে কোটিপতি
« on: April 24, 2017, 03:51:48 PM »
একটা সময় ছিল, যখন নিউ ইয়র্কের সিবোর্ড ন্যাশনাল ব্যাংকে ঢুকলেই একটা দৃশ্য চোখে পড়ত। হলঘরে এক মহিলা একটা ডেস্কের পেছনে কয়েকটি সস্তা ট্রাংক আর স্যুটকেস নিয়ে বসে আছেন। আর রাজ্যের ব্যবসায়িক লেনদেন করছেন। মুখ শক্ত। গায়ে পুরনো সেকেলে পোশাক-আশাক, সেগুলোয় রাজ্যের ময়লা। শরীর থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে। আর কী যে ব্যবহার! যেন সবাই তাঁর টাকা ছিনিয়ে নিতেই ব্যাংকে এসেছে। তাই নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ তাঁকে সহজে ঘাঁটাত না। তবে তাঁকে সম্মান করত সবাই। করবে না-ই বা কেন, তিনি যে তখনকার সবচেয়ে ধনী মহিলাদের একজন ছিলেন!

নাম তাঁর হেটি গ্রিন। তবে নিউ ইয়র্কে বেশি পরিচিত ছিলেন ‘উইচ অব ওয়াল স্ট্রিট’ নামেই। সে সময় ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীরা প্রায় সবাই-ই ছিলেন পুরুষ। তাঁদের মধ্যে তিনি একা মেয়ে। আর বিনিয়োগকারী হিসেবে তাঁর সাফল্যও কম ছিল না। তবে সেই সাফল্যের চেয়েও বেশি বিখ্যাত ছিল তাঁর কিপ্টেমি। খরচ করতে হবে দেখে নিজে আলাদা অফিস নেননি, সিবোর্ড ন্যাশনাল ব্যাংকেই একটা ডেস্ক বসিয়ে স্যুটকেস-ট্রাংক নিয়ে বসে যেতেন। দুপুরে খাওয়ার জন্য বাসা থেকে ওটস নিয়ে আসতেন। সেই ওটস রান্না করার জন্য পানিতে মিশিয়ে ব্যাংকের রেডিয়েটরের ওপর রেখে দিতেন। নিজের শরীরের প্রতি কোনো যত্নই নিতেন না। নেশা ছিল একটাই, পুঁজি বাড়াতে হবে, সম্পত্তি বাড়াতে হবে।

হেটি গ্রিনের বাবারও ছিল এই ধাত। তাঁদের পূর্বসূরিরা যেখানে কৃষিকাজ করতেন, সেখানে হেটির বাবা সেসব কাজেই হাত দিতে লাগলেন, যেগুলোতে অনেক টাকা—জমির ব্যবসা, দাস ব্যবসা, তিমি শিকার। প্রচুর টাকাও কামালেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তাঁর ছিল শুধু একটি মেয়ে। তা-ও সে মেয়ে কী রগচটা! তবে কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলেন, এই মেয়েই তাঁর বিপুল সম্পত্তির দেখাশোনা করার যোগ্য উত্তরসূরি। কারণ বাচ্চারা যেমন মা-বাবার কোলে বসে রূপকথার গল্প শুনতে ভালোবাসে, হেটিও তেমনভাবে শুনতে ভালোবাসেন পত্রিকার স্টক রিপোর্ট।

বাবা মারা গেলে হেটিও বিশাল সম্পত্তির মালিক বনে গেলেন। সেই সময়ে বাবা শুধু নগদ টাকা ও বন্ড-স্টক—এসব মিলিয়েই হেটির জন্য রেখে গিয়েছিলেন প্রায় ৬০ লাখ ডলারের সম্পত্তি। কিন্তু তাতে মন ভরল না হেটির। এরই মধ্যে খবর পেলেন, তাঁর এক চাচি মারা গেছেন। তিনি নাকি তাঁর ২০ লাখ ডলারের সম্পত্তি দিয়ে গেছেন দাতব্য কাজের জন্য। নকল দলিল বানিয়ে সেই সম্পত্তি  আত্মসাৎ করতে চাইলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আদালতে তাঁর জারিজুরি ধরা পড়ে গেল।

তার পরই সবাইকে চমকে দিয়ে হেটি বিয়ে করলেন। পাত্র এডওয়ার্ড হেনরি গ্রিন। এই হেনরি ছিলেন বিখ্যাত ভারমন্ট পরিবারের ছেলে। ভারমন্টদের ছিল প্রচুর টাকা-কড়ি। কাজেই বিয়েতে হেটির তেমন আপত্তিও ছিল না। বিয়ের পর তাঁরা বেশ কিছুদিন ম্যানহাটনের বিলাসী কমপ্লেক্সে বাস করলেন। এরই মধ্যে হেটির এক আত্মীয় তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা ঠুকে দিলেন। সেই মামলা এড়াতে হেনরিকে নিয়ে হেটি পাড়ি জমালেন লন্ডনে।

পরের আট বছর তাঁরা থাকলেন লন্ডনের বিলাসবহুল ল্যাংহাম হোটেলে। সেখানেই তাঁদের দুই ছেলে-মেয়ের জন্ম হয়—নেড ও সিলভিয়া। কিন্তু আবার আমেরিকায় ফিরে এসেই হেটি তাঁর আসল রূপ দেখাতে শুরু করলেন। বাড়ির লোকজন, কাজের লোক, এমনকি দোকানদারদের সঙ্গে দু-চার পয়সা বাঁচাতে ঝগড়াঝাঁটি করতে শুরু করলেন।

১৪ বছরের মাথায় হেটির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করলেন হেনরি। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে একটা ছোট্ট অপরিসর বাড়িতে এসে উঠলেন হেটি। নিউ ইয়র্কের হাড়কাঁপানো শীতেও বাড়িতে গরম পানির বন্দোবস্ত রাখলেন না। জন্মগতভাবে নেডের এক পা একটু বিকৃত ছিল। সেটির কোনো চিকিৎসাই করাননি হেটি। শেষ পর্যন্ত নেডের ওই পা খোঁড়াই হয়ে যায়। অন্যদিকে ছোট জুতা পরতে পরতে সিলভিয়ারও পায়ের পাতা বেঁকে যায়। তাঁর সব প্রেমিককেই হেটি তাড়িয়ে দিতেন, বলতেন, তাঁদের সম্পত্তি লুট করতে এসেছে। শেষ পর্যন্ত একজন এই দস্তখত দিয়ে তাঁকে বিয়ে করে যে সে হেটির সম্পত্তির কোনো ভাগই নেবে না। অন্যদিকে নেড এই কৃচ্ছ্রসাধনের জীবন সইতে না পেরে আগেই মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়।

ছেলে-মেয়ে চলে যাওয়ার পর হেটি আরো ছোট একটি অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে ওঠেন। সেখানে যে ঘরে তিনি ঘুমাতেন, সেই ঘরেই সারতেন ব্যবসায়িক প্রয়োজন। শেষ জীবনে অবশ্য তিনি নানা রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন। একবার হার্নিয়ার ব্যথা সইতে না পেরে এক ডাক্তারের কাছে যান। সব দেখে-শুনে ডাক্তার বলে দেন, অপারেশন করাতে হবে। খরচের কথা উঠতেই, ডাক্তার হেটির স্বভাবের কথা ভেবেই খরচ কমিয়েটমিয়ে বলেন, ১৫০ ডলার। শুনেই আঁতকে ওঠেন হেটি। সে সময় তাঁর মনে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, চারপাশের সবাই সব সময় তাঁর সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র করছে। তাই এমনকি সোজা পথেও বাসায় ফিরতেন না। একেক দিন একেক পথে ফিরতেন। কখনো কখনো বিভিন্ন বাড়ির দরজার কাছে গিয়ে লুকিয়ে থাকতেন। আর দিন দিন পাগলের মতো পুঁজি বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন।

৮০ বছর বয়সে স্ট্রোক করে মারা যান হেটি। ফলে তাঁর সম্পত্তির উত্তরোত্তর বৃদ্ধিও থমকে যায়। কিন্তু সে সময় তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ যে কত হয়েছিল, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। ওয়াল স্ট্রিট কর্তৃপক্ষ একবার জানিয়েছিল, সেটা কম করে হলেও ১০ কোটি ডলার তো হবেই। আবার ২০ কোটিও হতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মহিলাদের একজন হয়েও হেটি কোনো দাতব্য কাজে এক পয়সাও খরচ করেননি। তাই তাঁর স্মৃতি হিসেবে থেকে গেছে শুধু খ্যাপাটে আর কিপটেমির গল্পগুলো।

লিখেছেনঃনাবীল আল জাহান।http://www.kalerkantho.com/feature/mogoj-dholai+/2017/04/23/489668
With best regards and Thanks in advance,

S.M.Saiful Haque