হালখাতার হালচাল
কত আয়োজন থাকে বাংলা নববর্ষের শুরুতে। হালখাতা সেসব আয়োজনের একটি। নিছক হিসাবের খাতা হালনাগাদ করার আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এতে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে হৃদ্যতার সম্পর্কও গড়ে ওঠে।
পয়লা বৈশাখে কিংবা তার পরে সুবিধাজনক দিনক্ষণ বেছে নিয়ে ব্যবসায়ীরা আয়োজন করেন হালখাতা। এর দিন কয়েক আগে থেকে ক্রেতাদের বর্ণিল কার্ডের মাধ্যমে হালখাতা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার নিমন্ত্রণ করা হয়। দোকানপাটে থাকে পরিপাটি সাজ। তাজা ফুল, কাগজের ফুলসহ নানা কিছু ব্যবহার হয় তাতে।
পুরান ঢাকার চকবাজার, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, বাংলাবাজার, শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় হালখাতার আয়োজন এখনো চোখে পড়ার মতো। কথা হয় শাঁখারীবাজারের অমিয় গোল্ড মিউজিয়ামের স্বত্বাধিকারী শম্ভু সাহার সঙ্গে। তিনি জানান, ‘হালখাতা অনুষ্ঠান আমাদের কাছে একটা উৎসবের মতো। অনেক আগে থেকেই চলে আসা এই রীতি এখনো ধরে রাখার চেষ্টা করছি আমরা। ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো থেকে শুরু করে হালখাতা খোলা, গণেশের পূজা—সবই থাকে উৎসবের অংশ হয়ে।’ শুধু রসে ভরা মিষ্টিই নয়, বর্তমানে হালখাতার খাবারের আয়োজনে মিষ্টির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অন্যান্য মুখরোচক খাবার। ক্ষীর, হালিম, কোমল পানীয় থেকে শুরু করে অনেকে বিরিয়ানি কিংবা তেহারির ব্যবস্থাও করে থাকে হালখাতার আসরে। তবে শেষ পাতে মিষ্টিমুখ থাকে। শম্ভু সাহা আরও জানালেন, আজকাল হিসাবনিকাশে কম্পিউটারের মতো যান্ত্রিক সহযোগিতার কদর বেশি। তবে আমরা সেই রোজকার হালখাতাতেই হিসাবনিকাশ হালনাগাদ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
হালখাতা পাবেন যেখানে
ব্যবসায়ী পরিমণ্ডলে যাঁরা নিয়মিত হালখাতার আয়োজন করে আসছেন কিংবা নতুন করে করবেন ভাবছেন, হালখাতার খোঁজে চলে যেতে পারেন পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে। এ ছাড়া নিউমার্কেট, নীলক্ষেতসহ বড় বড় মনিহারি (স্টেশনারি) দোকানে মিলবে লাল মলাটের হালখাতার দেখা। ছোট-বড়, মোটা কিংবা চ্যাপ্টা—চাহিদা অনুযায়ী সব রকমেরই খাতা পাবেন দোকানে। সাধারণত প্রতি দিস্তা কাগজ ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা হিসাবে বিক্রি হয় একেকটি হালখাতা।
হালখাতার কার্ড
হালখাতা অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানাতে কার্ডের প্রচলন রয়েছে সমান তালে। দুই মলাটের অতি সাধারণ কিন্তু বৈশাখে বর্ণিল নকশায় ছাপা হরেক রকম কার্ডের নমুনা শোভা পাচ্ছে এখন বাংলাবাজারের কার্ড বিক্রির দোকানগুলোয়। শুধু এই নববর্ষের হালখাতাকে ঘিরেই এমন কার্ডের উপস্থিতি প্রতিটি কার্ড প্রস্তুতকারীর দোকানে। আজাদ প্রোডাক্টসের বাংলাবাজার শাখার বিক্রয় কর্মকর্তা মকবুল হোসেন জানান, ‘রকমভেদে হালখাতার একেকটি কার্ডের দাম পড়বে ৮ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। সে ক্ষেত্রে সংখ্যায় বেশি পরিমাণে ফরমাশ করলে দাম কিছুটা কমবে।’ সবাই বৈশাখের প্রথম দিনেই হালখাতার আয়োজন করতে পারেন না। তাই আয়োজনের তারিখের হেরফের হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট দিন তারিখসহ নিমন্ত্রণপত্র লিখিত আকারে কার্ড প্রস্তুতকারীর দোকানে জমা দিতে হয়। ফরমাশের এক দিন পরেই পেয়ে যাবেন কার্ড। এবার বিলি করার পালা।
অন্যান্য
এ ছাড়া থাকে নতুনরূপে দোকান সাজানোর তাড়া। বর্ণিল ফুলের সাজ তো থাকেই, থাকে নকশাকাটা ককশিটের উপস্থিতিও। ‘শুভ নববর্ষ’ কিংবা ‘শুভ হালখাতা’ নামসংবলিত ককশিটও চোখে পড়ে দোকানে দোকানে। ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বানিয়ে নেওয়া যাবে এমন সব দোকান সাজানোর উপকরণ। পাবেন ফুল বিক্রির দোকানেই।